অপারেশন জিরো সিক্সটি নাইন : মামুন মুনতাসির | Operation Zero Sixty Nine : Mamun Muntasir Books

স্পয়লার দেখেই ভয় পাওয়ার কোন কারন নেই, কারন আমি স্পয়লার বললেও আসলে এই বইয়ে স্পয়েল করার মত কিছুই নেই। তাই আপনি চাইলে বইটি না পড়া থাকলেও রিভিউটি পড়তে পারেন।

“অপারেশন জিরো সিক্সটি নাইন” এর স্পয়লার রিভিউ

বইয়ের ডিটেইলসঃ-

  • নাম – অপারেশন জিরো সিক্সটি নাইন
  • লেখকের নাম – মামুন মুনতাসির
  • কাভার ডিজাইনার – হিমেল হক
  • জনরা – থ্রিলার (বাট ভুলেও এইটা থ্রিলারের জাতে পরে না)
  • প্রকাশনী – অক্ষরবৃত্ত
  • পৃষ্ঠা সংখ্যা – ১৪৪
  • মুদ্রিত মূল্য – ২৩০ টাকা
  • রেটিংঃ- ২/১০
  • চমৎকার এই রিভিউটি পাঠিয়েছেন : Tahzib Sarwar Talha (ভাইয়াকে অসংখ্য ধন্যবাদ 💕)
চিনের উইঘুরে মুসলমানদের উপর অত্যাচার আমাদের জন্য আর নতুন কিছু নয়। বছরের পর বছর ধরে মুসলমানদের উপর এই অত্যাচার চলেই আসছে। বাহিরের বড় বড় মিডিয়াও যেন এই ইস্যুতে অন্ধ হয়ে গিয়েছে। তার হয়ে বলার কেও নেই, দাড়ানোর কেও নেই।
এই বইয়ে লেখক মুসলমানদের পক্ষে দাঁড়ানো একজনের কাহিনি আমাদের শুনিয়েছেন। তবে শুরুতে কাহিনি সংক্ষেপ বলা যাক…
কাহিনী সংক্ষেপঃ-
উইঘুরে মুসলমানদের উপর চলছে অত্যাচার। মুসলমানদের সাধারণ ধর্মে কর্মে আছে প্রবল নিষেধ। মেয়েদেরকে ধরে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে “রি-এডূকেশন ক্যাম্প”এ যেখানে সামাজিক শিক্ষার বদলে মেয়েদেরকে ধর্মান্তরিত করার চেস্টা করা হয়। সেই অঞ্চল থেকেই প্রায় পাচ শত মুসলমানদেরকে ধরে নিয়ে চিনের পাহাড়ি অঞ্চলের ক্যাম্পে বন্দি করা হয়। মুসলমানদের পক্ষে দাড়ানোর জন্য পর্দায় হাজির হয় “গালিব আব্দুল্লাহ”।
পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ-
কম বাজেটের তামিল মুভির স্ক্রিনপ্লে পড়লাম মনে হয়। লিটেরেলি অনেক কিছু বলার আছে এই বইয়ের ব্যাপারে, নিচে পয়েন্ট পয়েন্ট করে বলার চেস্টা করব – 
#) কাহিনীর নায়ক “গালিব আব্দুল্লাহ” যোগ্যতায় যেন টম ক্রুজ, জেমস বন্ড এবং অত্যন্ত জলিল এর কম্বিনেশন। দুনিয়ার পুরা ম্যাপ চোখ বন্ধ করলেই দেখতে পান, কয়েক ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারেন (ডক্টর মুহাম্মদ শহিদুল্লাহকে উপরের তারকাদের সাথে এড করতে ভুলে গেলাম), রাতের অন্ধকারে বিড়ালের মতন দেখতে পারেন, ৫ ফিট ১০ ইঞ্চির বাট্টু শরির নিয়ে হাটলে যেন মনে হয় আকাশের সাথে মাথা যেকোনো সময় ঠুকাঠুকি লেগে যাবে… এইরকম আরও ব্লা ব্লা ব্লা আছে কয়েক পেজ -_-
#) নায়ক একাই চীনের একটি গোপন ক্যাম্প থেকে পালাতে সক্ষম হন যেখানে চীনের অনেক দক্ষ সেনাবাহিনি হেভি আর্টিলারি নিয়ে পুরো ক্যাম্প পাহাড়ায় ছিল -_-
#) জী হ্যা পুরা বইয়ে এইরকম বাজেট একশনের দেখা পাবেন যেখানে নায়ক ক্যাম্পের পর ক্যাম্প একাই মুক্ত করে ফেলে, চীনা সেনারা নায়কের চুলটাও (ভারতীয় হবে) ফালাইতে পারে না। লিটারেলি নায়ক জাস্ট একটা রিভলভার নিয়ে হেভি আর্টিলারির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। একশনগুলার বর্ণনাও ছিল অনেকটা এরকম – “গালিব আব্দুল্লাহ শুনতে পেল একদল সেনাবাহিনি করিডোর ধরে এগিয়ে আসছে, গালিবের অভিজ্ঞ কান তাকে বলে দিল সেনাদের হাতে আছে একে৪৭, সেনারা দরজা দিয়ে প্রবেশের সাথে সাথেই গালিবের রিভলভার ঝাঁজরা করে দিল সবাইকে” -_-
#) নায়ককে পুরা গল্পে বেশ ধর্ম প্রান মুসলমান হিসেবে প্রকাশ করলেও উনি দেদারসে মেয়েদের সাথে কথা বলছেন, তাদের সাথে একাকি মুহূর্ত সময় অতিবাহিত করছেন -_- 
#) নায়ক পুরা গল্পে একবারও নাকি জারা মেহজাবিন (একজন খ্রিস্টান মেয়ে) এর দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করেননি অথচ পরের পেইজেই দেখা যাচ্ছে মেয়েটি জিন্সের প্যান্টের সাথে ঢিলেঢালা গ্যাঞ্জি পড়লে সেই জামার তারিফ করছে মনে মনে -_-
#) চরিত্রদের নামকরন বেশ চোখে লাগার মত। খারাপ পক্ষের চরিত্রদের নাম অন্যান্য ধর্মের নামের সাথে হালকা একটা মুসলিম নাম যুক্ত করে দিয়েছেন। যেমন ডেভিড জাফর। আবার উপরে বর্ণিত মেয়েটি (জারা মেহজাবিন) আদতে খ্রিস্টান। কিন্তু সে দেদারসে মুসলিম নাম ব্যবহার করছে। কেন রে বইন, তুই দেখতাসস মুসলমানদের উপর নির্যাতন, তোর কেন দরকার খ্রিস্টান নাম বাদ দিয়া মুসলমান নাম ব্যবহারের ? তুই আমারে বুঝা -_-
#) একজন বন্দি যার সারা শরিরে হাড় ছাড়া আর কিছুই নেই, যাকে খাবার খাওয়ানো হয় না, বছরের পর বছরে একই রুমে বন্দি করে রাখা হয়েছে, প্রতিদিন নির্যাতন করা হয়েছে এইরকম একজন বন্দি মুক্তি হয়েই চীনা সেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আবার যুদ্ধাহত একজনকে কোলেও আঙ্গায় ফেলে (ওও ভাই মারো মুঝে মারো)
#) বইয়ের শেষের দিকে প্রচুর বানান ভুল। প্রচুর বলতে প্রচুর। ক্ষেত্রবিশেষ চরিত্রদের নামও চেঞ্জ হয়ে গেছিল। এমনকি তাদের পেশাও। যেমন আসলাম ডাক্তার কোথাও কোথাও হয়ে গিয়েছেন আসলাম মাঝি (MOST HILARIOUS ONE) -_-
#) বইয়ের কাভারে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা থাকলেও বিন্দু মাত্র থ্রিল ছিল না। এই বইকে কেন থ্রিলার উপন্যাস বলা হল তা নিয়ে রীতিমতো গবেষণা চালান দরকার। ১৪০ পেইজের বইয়ে আমি একটা লাইনও থ্রিলিং বা টুইস্টিং পাইনি। শুধু বাজেট তামিল একশন পাইসি।
#) বইয়ের পেইজ সেট-আপ বাকি ১০টা বইয়ের মতন সাধারন না। এই বইয়ের পেইজ সেট-আপ এবনরমাল ধরণের। চরিত্রদের কথোপকথন, মনের ভাবনা, দৃশ্যপট পরিবর্তন এর জন্য যে ধরনের প্যারা সিস্টেম ব্যবহার হয়ে থাকে এই বইয়ে এটা নেই। চরিত্রদের কথোপকথন ধরার জন্য বেশ বেগ পোহাতে হবে। ফন্ট সাইজ আরেকটু ছোট করে ভাল মতন সম্পাদনা করলে এই বই অন্তত ১০০-১১০ পৃষ্ঠায় শেষ করা যেত।
ভাল দিকঃ-
#) এই বইয়ের পৃষ্ঠা। অন্যধারা প্রকাশনির মত এই বইয়ের পৃষ্ঠা গুলা সবুজাভ সাদা রঙের। দেখতে, পড়তে চমৎকার লাগছিল (পড়তে বাদ যাবে)
#) কাভারের কন্সেপ্ট ফাটাফাটি ছিল। চিনের মহাপ্রাচির , আগুনের কম্বিনেশন জোস কিন্তু ইমপ্লিমেন্টেশন ছিল দুর্বল। আরেকটু ঘষামাজা করে আরও ভাল করা যেত।
.
সর্বশেষ মতামতঃ-
একটা বইয়ের খারাপ দিক যত বেশিই থাকুক না কেন একমাত্র লেখক জানেন এর পিছনে কতো পরিস্রম করা লাগে। তাই সে কথা চিন্তা করে আমি বলব না এই বই কিনে আমি টাকা পানিতে ফেললাম বা আপনারা কিনলে টাকা লস খাবেন। বই কিনুন তাতে কোন মানা নেই তবে কেনার আগে অবশ্যই ভেবে চিন্তে কিনবেন।
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?