অন্ধ বধির মূক : কারিম শাওন | Ondho Bodhor Muk By Karim Shawon

বই : অন্ধ বধির মূক
লেখক : কারিম শাওন
প্রকাশনী : ফেরা প্রকাশন

হেকেল নামের এক জার্মান তথাকথিত জীববিজ্ঞানী ১৮৬৮ সালে মেরুদণ্ডী প্রাণীদের ভ্রুণের কাল্পনিক একটি ছবি এঁকে প্রকাশ করে। ভ্রুণগুলো ছিল স্তন্যপায়ী, পাখি, উভচর, মাছ ও সরীসৃপ প্রাণীর। হেকেল দেখিয়েছে এই পাঁচ শ্রেণীর প্রাণীরা ভ্রুণ অবস্থায় দেখতে একই। ভ্রুণের এই কাল্পনিক ছবির উপর ভিত্তি করেই বিবর্তনবাদ বলে, বিভিন্ন রকমের প্রাণীদের পূর্বপুরুষদের শিকড় এক জায়গায়।

একটু খেয়াল করুন–যে প্রাণীগুলোর ভ্রুণ হেকেল এঁকেছিল, সেগুলো হাতেগোনা কয়েকটা প্রাণী মাত্র। পৃথিবীতে কত ধরনের প্রাণী আছে সেটার সঠিক হিসেব কিন্তু জীববিজ্ঞানীদের কাছেও নেই। প্রি-ক্যামব্রিয়ান যুগের কথা না হয় বাদই দিলাম, ক্যামব্রিয়ান এক্সপ্লোশনের পর কয়েক ডজন (বিজ্ঞানীরা যে কয়েকটা পেয়েছে) পর্বের প্রাণীর সন্ধান পাওয়া যায়। এই পর্বগুলোর মধ্যে কর্ডাটা পর্বের উপপর্ব ভার্টিব্রেট শ্রেণীর মাত্র ৫ ধরনের প্রাণীর ভ্রণগুলোর মধ্যে মিল দেখিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে যে, ভ্রুণ অবস্থায় সব প্রাণী একই রকম; বড়ো হওয়ার পর দৈহিক আকৃতি পরিবর্তন হয়। অর্থাৎ, ঘুরেফিরে ওই একই কথা যে, এত এত বিচিত্র রকমের প্রাণীদের শিকড় একই। মানে একটা জীব বিবর্তিত হতে হতে পৃথিবীর বুকে এই এত এত রকমের প্রাণী ও উদ্ভিদের সৃষ্টি। কতটা হাস্যকর!
প্রথম কথা হলো, শুধু কিছু মেরুদণ্ডী প্রাণীর ভ্রুণতে মিল দেখিয়ে ‘পুরো জীব জগতের অগনিত বিচিত্র রকমের জীবের পূর্বপুরুষ একই ছিল’–এমন দাবি করা কি অনেকটা দিনে-দুপুরে ডাকাতির মতো হয়ে গেল না?
দ্বিতীয় কথা হলো, ১৫০ বছর আগের হেকেলের আঁকা কাল্পনিক ভ্রুণ চিত্রের সাথে সত্যিকার ভ্রুণের কোনো মিলই নেই আসলে। মাইক্রোস্কোপের সুবাদে আমরা এখন জানতে পারছি যে, জনাব হেকেল জীবগুলোর জীবনের যেই ধাপে ভ্রুণগুলোকে একই দেখিয়েছে, সেই ধাপে ভ্রুণগুলো দেখতে এক তো নয়ই, বরং সেই ধাপের আগের ধাপে অর্থাৎ আরও ছোটো বয়সেও ভ্রুণগুলো একটি অপরটি থেকে দেখতে পুরোপুরি আলাদা। এ্যমব্রীয়লজিস্ট মাইকেল রিচার্ডসন ১৯৯৭ সালে ওই প্রাণীগুলোর প্রকৃত ভ্রুণের চিত্র প্রকাশ করলে সারা বিশ্বে এটা ব্যাপক সাড়া ফেলে দেয়। অথচ পাঠ্যবইতে এখনো এই ভুল চিত্র বিদ্যমান।
Stephen Jay Gould
(paleontologist, evolutionary biologist, and historian of science. Teacher at Harvard University)
হেকেলের আঁকা এই ভ্রুণগুলোর ব্যাপারে বলেন-
“We do, I think, have the right to be both astonished and ashamed by the century of mindless recycling that has led to the persistence of these drawings in a large number, if not a majority, of modern books.”
[আমি মনে করি, আমাদের বিস্মিত ও লজ্জিত উভয়টা হওয়ার যথার্থতা আছে শতাব্দী ধরে চলা (এই চিত্রগুলোর) বুদ্ধিবৃত্তিহীন পূনর্ব্যবহারে যা আধুনিক বই-পুস্তকে ব্যাপকভাবে, বেশীরভাগ (বইতে) না হলেও, এই চিত্রগুলোর বিদ্যমানতাকে নেতৃত্ব দিয়েছে।]
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?