◑বই: অন্ধকার ট্রিলজি
১. হার না মানা অন্ধকার
২. ঘিরে থাকা অন্ধকার
৩. কেটে যাক অন্ধকার
◑লেখক: বাপ্পী খান
◑প্রকাশনী: বাতিঘর
💞 Review Credit : Rafia Rahman
𝕿𝖍𝖊𝖗𝖊 𝖎𝖘 𝖓𝖔 𝖌𝖗𝖊𝖆𝖙𝖊𝖗 𝕸𝖄𝕾𝕿𝕰𝕽𝖄
𝖙𝖔 𝖒𝖊 𝖙𝖍𝖆𝖓 𝖙𝖍𝖆𝖙 𝖔𝖋 𝖑𝖎𝖌𝖍𝖙
𝖙𝖗𝖆𝖛𝖊𝖑𝖑𝖎𝖓𝖌 𝖙𝖍𝖗𝖔𝖚𝖌𝖍 𝕯𝕬𝕽𝕶𝕹𝕰𝕾𝕾.
অজানাকে জানার বাসনা মানুষ্যমনের এক আদিম প্রবৃত্তি। সাথে যদি যুক্ত হয় বিপদের আশংকা তাহলে যেন আরও বেশি হাতছানি দিয়ে ডাকে। অজানা রহস্য ভেদের তাড়না ব্যক্তিকে ধাবিত করে অজানা-অচেনা পথে। তারপর? ফলাফল কি সর্বদা শুভ হয়…
অন্ধকার জগৎকে জানার প্রয়াস চলে আসছে সে অতীতকাল থেকেই। অনেকে তো জীবন বাজি দিয়ে হলেও পিছপা হয় না। কিন্তু অন্ধকার জগতের প্রাণীগুলোর দেখা পাওয়া কি এতটাই সোজা? এ নিয়ে তো তর্ক-বির্তকও কম নয়। রয়ে যায় বিশ্বাস-অবিশ্বাসের টানাপোড়েনও। এত শ্রাস্ত্র এত গ্রন্থ এত লোকগাথা সবই কি মিথ্যে? জোর গলায় যেমন মেনে নেওয়া যায় না তেমনি একদম অস্বীকারও তো করা যায় না। যতক্ষণ না মুখোমুখি হতে হয় অন্ধকার জগতের অস্তিত্বের সাথে…
● হার না মানা অন্ধকার —
“সত্য-কলাম”- এর কর্ণধার রফিক শিকদার, ট্যাবলয়েড পত্রিকার অবস্থা দিনকে দিন অবনতিই হচ্ছে। বিষয়টি ভাবাচ্ছে তাকে। চাচার স্মৃতি জড়িয়ে আছে সত্য-কলামের সাথে তাই যেভাবেই হোক পত্রিকাটি বন্ধ হতে দেওয়া যাবে না। হঠাৎই একদিন অতীতের স্মৃতি তাড়িত করে, সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে অতিপ্রাকৃতিক ঘটনা নিয়ে ফিচার করার। তারপর, শুরু হয় একের পর এক অশুভের সাক্ষাৎ…
বন্ধু জিকোর ডাকে ছুটে যায় রফিক। জানতে পারে সাত বছর আগের এক অদ্ভুত অভিশাপের কাহিনি। পরেরদিন পাওয়া যায় বন্ধুর বিভৎস লাশ! এক আজব যুবকের সন্ধান পাওয়া যায়। জানা যায় অন্ধ হওয়ার পরও একের পর এক ছবি এঁকে চলেছে অবিরত। ছবিই যে তাকে মুক্তি দিবে অন্ধত্বের অভিশাপ থেকে! চট্টগ্রামে পাওয়া সে পাথর শুধু রহস্যময়ই নয় সাথে অশুভও বটে। রাতের আঁধারে নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছে গ্রামবাসীসহ গবাদি পশুও; সাথে বেড়ে চলেছে কুৎসিত কালো পাথরগুলোর সংখ্যা! সিলেটের রিসোর্টে পাওয়া গেছে যুবতীর ভয়ানক লাশ, পাশেই পড়ে আছে আট ফুট লম্বা সাপের খোলস! বন্ধুর অনুরোধে এসেছিল রফিক কিন্তু নিখোঁজ…
● ঘিরে থাকা অন্ধকার —
মাসখানেক ধরেই কিয়াসু পরিচর্যা করছে এক ব্যক্তির। কিয়াসুর মতে ব্যক্তিটিই মুক্তি দিতে পারে তাকে তার অভিশপ্ত অতীত থেকে। কী ঘটেছে অতীতে?
রফিকের ইচ্ছের প্রতি সম্মান রেখে সত্য-কলামে শুরু হয়েছে “অপ্রাকৃত” কলাম। ছেপে চলেছে একের পাতা এক অতিপ্রাকৃতিক ঘটনা…
সত্য-কলামে ছাপা হয়েছে এক রহস্যময় গ্রামের ঘটনা। মৃত্যুছায়া ঘিরে ধরেছে গ্রামবাসীকে; বন্দী তারা। তাহলে এই রহস্য সত্য-কলাম পেল কিভাবে? কুড়িগ্রামে রহস্যময় চুলের সংস্পর্শে মারা পড়তে শুরু করেছে গ্রামবাসী। তাদের মতে ফিরে এসেছে এক অতৃপ্ত আত্মা! প্রতি আমাবস্যার রাতে বরিশালে পাওয়া যাচ্ছে ক্ষত-বিক্ষত লাশ, কেন? গ্রামের পর গ্রাম উজাড় হয়ে যাচ্ছে সুন্দরবনে, আতঙ্কে আছে সবাই। ধারণা করা হচ্ছে মায়াবাঘের তান্ডবের!
● কেটে যাক অন্ধকার —
ঢাকায় একের পর এক যুবকের বিখণ্ডিত লাশ পাওয়া যাচ্ছে। রিপোর্টার নাফিসের সন্ধানে বের হয়ে আসে কল্পনাতীত এক সত্য!
অতীতের বহু রহস্যের সমাধান মেলে ময়মনসিংহে। রফিক জানতে পারে তার অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ একসূত্রে গাঁথা, কীভাবে? রহস্যময় তিন ভাই কী জানে আর হেম্মেজই বা কী করছে সেখানে? মায়াবাঘ কেন তাড়া করছে তাকে?
রাজশাহীতে অদৃশ্য জীবের আগমন ঘটেছে। নিমিষেই খেয়ে ফেলছে জীবিত মানুষকে, পড়ে থাকছে কংকাল! সাথে যুক্ত হয়েছে ময়মনসিংহে পানি দেও এর তান্ডব।
অন্ধকার জগতের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে রফিক। কী অপেক্ষা করছে সামনে…
⚈ পাঠপ্রতিক্রিয়া ও পর্যালোচনা —
‘অন্ধকার’ শব্দের মাঝেই লুকিয়ে আছে অচেনা-অজানা রহস্য। ট্রিলজিকে বেশ কিছু অতিপ্রাকৃত গল্পের সমাহার বলা চলে। তবে দু’একটা গল্পের সাথে বিজ্ঞানের যোগসূত্র দেখানো হয়েছে। অন্ধকার সিরিজের বিশেষ দিক হলো প্রচলিত ভূত-প্রেত নয় বরং বিভিন্ন জাগতিক-মহাজাগতিক জীবদের নিয়ে লেখা। বিষয়টা ভালো লেগেছে অন্যরকম একটা স্বাদ পেয়েছি। বইয়ের ইলাস্ট্রেশনগুলো দারুণ। কিছু ইলাস্ট্রেশন দেখে তো গা শিরশির করে উঠেছে।
ট্রিলজির কাহিনি বলতে গেলে একটি সার্কেল। যার একদিক থেকে শুরু হয়ে অন্যদিক থেকে মিলে গেছে। অবশ্য শেষ না হওয়া পর্যন্ত তা বুঝার উপায় নেয়। প্রথমে তো রেজ্জেকের গল্প শোনার পর আফসোস থেকে গিয়েছিল। রাজস্থানের রহস্যের খোলাসা হলো না। কিন্তু টুইস্ট তো বাকি। তবে “কেটে যাক অন্ধকার”- এ প্রথম থেকেই নরখাদককে নিয়ে সন্দেহ ছিল। শেষে যেয়ে তৃপ্তি পেয়েছি মন মতো উত্তর। কাবিল-হাবিল-নাবিল নিয়ে আরও গল্প থাকলে ভালো হতো। যদিও ট্রিলজি লেখা কিন্তু কিছু প্রশ্ন থেকেই যায় যেন সিকুয়েল কোনো বইয়ের আভাস। গল্পগুলো বেশ ভালোই লেগেছে তবে রাজশাহীর গল্পটা একটু খাপছাড়া ঠেকেছে।
রহস্য টুইস্টে ভরপুর। অধিকাংশ সময়ই পড়া হয়েছে রাতে তাই আরও উপভোগ করেছি। একবার তো আয়নায় ছায়া দেখে চমকে উঠেছিলাম, জিকোর আয়না রহস্যের কথা ভেবে। রফিকের তাবিজ নিয়ে ফ্যান্টাসি ছিল এমন ম্যাজিক্যাল কিন্তু তাবিজের ইতিহাস জেনে ওর দশহাতের কাছেও যেতে চাই না বাবা।
⚈ লেখনশৈলী ও বর্ণনা —
দৃশ্যপটগুলো স্পষ্টভাবেই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বিশেষ করে গ্রামীণ পরিবেশের বর্ণনা। মনে হচ্ছিল ঝর্ণার পাশে বসে আছি তো আবার মনে হচ্ছে সুন্দরবনে ঘুরে বেড়াচ্ছি। এককথায় ঝরঝরে লেখনী। বিভিন্ন তন্ত্রের বিবরণও সহজ ভাষায় করা হয়েছে। অতিরিক্ত কোনো আলোচনাও নেয়। ” হার না মানা অন্ধকার ” আর একটু বড়ো হলে ভালো হতো। শুরু করতে করতেই শেষ হয়ে গেছে।
⚈ চরিত্রায়ন —
ট্রিলজিতে বেশ কিছু চরিত্রের দেখা মেলে। রফিক মূল চরিত্র এছাড়া আছে চাচাতো বোন আইরিন, সাফওয়ান, কাবিল-হাবিল-নাবিল (তিন রহস্যময় ভাই), হেম্মেজ, কিয়াসু,মিশি, মৃত্তিকা আরও অনেকে।
বইয়ের অধিকাংশ গল্পই রফিকের ডাইরি থেকে। সত্য-কলাম, মৃত্তিকার ডাইরি আর আইরিনের ব্লগ থেকেও আছে।
⚈ প্রোডাকশন —
বাতিঘরের প্রোডাকশন দিনকে দিন আরও ভালো হচ্ছে। বইয়েই বাইন্ডিং যথেষ্ট স্ট্রং কিন্তু পেজ উল্টিয়ে পড়তে কোনো সমস্যা হয়নি। অফহোয়াইট পেজের কোয়ালিটিও ভালো। ফন্ট সাইজও ঠিকই আছে।
⚈ বানান ও সম্পাদনা —
বানানে অল্পবিস্তর কিছু ভুল রয়েছে। ‘গ্লাস’, ‘ব্যথা’ দুটি বানানে ও ‘উ’ কার (ু) এর ব্যবহারে একাধিক ত্রুটি রয়েছে। “কেটে যাক অন্ধকার”- এ ২৪৯-২৫১ পেজে বেশ কিছু জায়গায় ‘হেম্মেজ’- কে ‘রেজ্জেক’ লেখা হয়েছে। এছাড়াও দু’এক জায়গায় নামে সমস্যা আছে।
⚈ প্রচ্ছদ ও নামলিপি —
প্রচ্ছদগুলো সুন্দর হয়েছে। তবে ” হার না মানা অন্ধকার”- এর প্রচ্ছদ হালকা লেগেছে হঠাৎ করে দেখে বুঝায় যায় না কি আঁকা। নামলিপিও দারুণ।
চমৎকার একটা সিরিজ। গভীর নিঃশব্দ রাতে অন্ধকার সিরিজের মজাই আলাদা। রাত যত বাড়ে গল্পের আমেজও তত বাড়ে। অতিপ্রাকৃত প্রিয় পাঠকদের জন্য হাইলি রিকমন্ডেড।
ব্যক্তিগত মতামতঃ-
পড়েছি লেখক বাপ্পী খান এর লেখা বই ❝ঘিরে থাকা অন্ধকার❞। এটি অন্ধকার সিরিজের দ্বিতীয় বই। এর আগে সিরিজের প্রথম বইটি পড়ার পরই দ্বিতীয়টি পড়তে আগ্রহ বেড়েছে, তারপর পড়া। এই বইতেও লেখক একটি চরিত্রের মাধ্যমে বিভিন্ন গল্প তুলে ধরেছেন। সত্যি কথা বলতে প্রত্যেকটি গল্পই দারুণ ভাবে উপভোগ করেছি। লেখক উনার লেখাতে পরিপার্শিক ব্যাখ্যাগুলো যেভাবে দিয়েছেন, একেবারে মুগ্ধ হয়ে পড়তে বাধ্য। এই গল্পে নদী, বনভূমি, গাছপালা সহ প্রাকৃতিক দৃশ্য গুলোর ব্যাখ্যা পড়তে গিয়ে যেন হারিয়ে গিয়েছিলাম, আর তার সাথে যখন ভৌতিক পটভূমি আসে তখন একেবারে ঝমে যায়।
তন্ত্র-মন্ত্র, তান্ত্রিক নিয়ে এর আগে এতো বিস্তর পরিসরে কোন লেখা পড়িনি(পাঠক হিসেবে একেবারে নতুন)। সেই সুবাদে এই বইটি পড়ে বেশ কিছু বিষয় জানতে পেরেছি। তাছাড়া গল্পে থ্রিলিং কিছু ব্যাপারও ছিলো। যেহেতু সিরিজের দ্বিতীয় বই তাই বেশিকিছু না বলাই ভালো, আলাদা আলাদা গল্প থাকলেও গল্পে মুল চরিত্র রিলেটেড অনেক ঘটনা ঘটতে থাকে তাই বেশি কিছু না বলাই ভালো। অসাধারণ লেগেছে বইটি। আগ্রহীরা পড়ে দেখতে পারেন, আশাকরি ভালো লাগবে।
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?