- বই : অন্ধকারের আফ্রিকা বই pdf
- লেখক : রামনাথ বিশ্বাস
- প্রকাশক : পেপার ভয়েজার
- মুদ্রিত মূল্য : ২২০/=
- পৃষ্ঠা সংখ্যা : ১১১
- প্রচ্ছদ: তন্ময় আহমেদ
Review Credit 💕 Amina Ferdaus Emu
অন্ধকারের আফ্রিকা – আফ্রিকা নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা বহির্বিশ্বের আজও কাটেনি। আফ্রিকা বলতেই লোকে বোঝে কালো চামড়া, দীনহীন, অশিক্ষিত লোকজন, জন্তুজানোয়ারে ভরা আর সাপখোপের দেশ। আজ থেকে শতবর্ষ পূর্বে অবস্থা যে আরও সঙিন ছিল সে কথা তো বলার অপেক্ষা রাখে না। যারা দেখেনি তারা শুধুমাত্র শুনে যে পরিমাণ ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করত, তাদের তুলনায় অবগতদের অবস্থাও খুব বেশি উন্নত ছিল না। জাতপাতের দোহাই দিয়ে ব্রিটিশ থেকে শুরু করে ভারতীয়রা পর্যন্ত তাদের হেনস্তা করতে ছাড়েনি।
তবে এই আফ্রিকাকে সম্পূর্ণ ভিন্নচোখে দেখেছিলেন এক বাঙালি পর্যটক। নাম তার রামনাথ বিশ্বাস। ১৯৩১ সালে শুধু একটি সাইকেল, একজোড়া চটি আর দু’টি চাদর নিয়ে তিনি বিশ্বভ্রমণে বেরিয়েছিলেন। সাইকেলের গায়ে লেখা ছিল, ‘রাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড, হিন্দু ট্রাভেলার।’ সাইকেলে করে পাড়ি দিয়েছেন ৫৩ হাজার মাইল। পায়ে হেঁটেছেন ৭ হাজার মাইল আর রেল ও জাহাজে পাড়ি দিয়েছেন ২৭ হাজার মাইল।
নিজের অভিজ্ঞতা তিনি লিপিবদ্ধ করেছেন তার ভ্রমণকাহিনীতে। গতানুগতিক ভ্রমণকাহিনীর চেয়ে একেবারেই আলাদা তার বর্ণনাভঙ্গি। আপন অভিজ্ঞতা, দর্শন আর নিজস্ব মতামত তিনি তুলে ধরেছেন তার ভ্রমণ অভিজ্ঞতায়। শ্বেতাঙ্গ না হওয়ায় তিনি নিজেও নিগৃহীত হয়েছেন। নিগ্রোদের সাথে আন্তরিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার কারণে স্বজাতিদেরও চক্ষুশূল হয়েছেন। তবে নিজ দর্শন থেকে পিছপা হননি কখনো।
আফ্রিকার এমন আনকোরা বর্ণনা এর আগে কোনো বাঙালী ভ্রমণকারীর বর্ণনায় পাওয়া যায়নি। আফ্রিকার অধিবাসীদের সততা, শিক্ষার প্রতি অনুরাগ, ভদ্র ব্যবহার এ সকল ইতিবাচক দিক তিনি তুলে ধরেছেন নির্দ্বিধায়। সেই সাথে আমাদের দেশের মানুষের জাতপাত নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা, জানার ঘাটতি আর সংকীর্ণ মানসিকতা নিয়ে কথা বলেছেন।
‘অন্ধকারের আফ্রিকা’ সম্পর্কে প্রথম যখন জানতে পারি, তখন থেকেই বইটির জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেছি। এটি আফ্রিকা নিয়ে বাংলার কোনো লেখকের প্রথম পরিপূর্ণ ভ্রমণকাহিনী হিসেবে বিবেচিত। সত্যি বলতে বইটি পড়ে এর বর্ণনা বা বিষয়বস্তু নিয়ে যতটা ভালো লাগা কাজ করেছে, তার চেয়ে বেশি মুগ্ধতা কাজ করেছে লেখকের জীবন দর্শনে। শতবর্ষ পূর্বের একজন মানুষ এতটা আধুনিক হয় কি করে? মানুষকে তার কর্মবিচারে মূল্যায়ন করেছেন তিনি। জাতপাত নিয়ে মাথা ঘামাননি।
বিশ্ব ভ্রমণের পাশাপাশি তিনি কুসংস্কার দূর করতেও কাজ করে গেছেন। নিজের কাজের জন্য কখনো প্রশংসিত আবার কখনো সমালোচিত হয়েছেন। তার এই উদার মানসিকতা আর বিশ্বভ্রমণের পিপাসাই তাকে শতবর্ষ পরেও মানুষের হৃদয়ে বাঁচিয়ে রেখেছে।
ভৌগোলিক বর্ণনার চেয়ে তার বর্ণনায় বেশি উঠে এসেছে স্থানীয় লোকজনের জীবনযাত্রা, সামাজিক দূরাবস্থা, সাম্রাজ্যবাদের কালো থাবায় নিষ্পেষিত নিগ্রোদের পিছিয়ে পড়ার করুণ চিত্র। তিনি নিগ্রোদের নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা দূর করেছেন। তাদের নারীদের স্বাধীনতার বর্ণনা করেছেন সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকে। ভারতবাসী সে তুলনায় তখনো অনেক পিছিয়ে। এসব তুলনামূলক বর্ণনা তখনকার দিনে দূর্লভই ছিল বলা চলে। জাত্যাভিমানে ডুবে ছিল উপমহাদেশের মানুষ।
তার বইয়ের শুভেচ্ছাবার্তা লিখেছেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ। তিন দফায় সারা পৃথিবী ঘুরে বেরিয়েছেন এই অসাধারণ মানুষটি। লিখেছেন তিরিশটির বেশি বই। পৃথিবীর পথেই তিনি খুঁজে পেয়েছিলেন জীবনবোধের গল্প।
পেপার ভয়েজার চমৎকার এই বইটি আবার ফিরিয়ে আনার জন্য ধন্যবাদ প্রাপ্য। তাদের পরিবেশনা, প্রচ্ছদ দু’টোই দারুণ। তবে আমার কপির ৭৭, ৭৮ পৃষ্ঠা আগে পড়ে হয়ে গেছে।
বহুদিন পর দারুণ একটা ভ্রমণ বিষয়ক বই পড়লাম৷ চমৎকার এই বইটা পড়া না হয়ে থাকলে পড়ে দেখতে পারেন।
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?