অন্দরমহল : বউ শাশুড়ির সম্পর্কের সমীকরণ – লেখিকা উম্মে মুসআব

  • বই : অন্দরমহল
  • লেখক : উম্মে মুসআব
  • প্রকাশনী : উমেদ প্রকাশ
  • বিষয় : পরিবার ও সামাজিক জীবন
  • পৃষ্ঠা : 176, কভার : পেপার ব্যাক
  • ভাষা : বাংলা

আপনার শাশুড়ির সাথে কি সম্পর্কে টানাপোড়ন চলছে?

রাতে চেম্বার থেকে বাড়ি ফিরে সিঁড়ি বেয়ে তিন তলায় উঠে দরজায় টোকা না দিয়েই চুপচাপ । দাঁড়িয়ে থাকলেন ডাক্তার সাহেব। উনার মা ও স্ত্রী ভেতরে গল্প করছেন আর খিলখিল করে হাসছেন। দরজার বাইরে থেকেই শোনা যাচ্ছে সেই হাসির শব্দ। চার বছরের বিবাহিত জীবনে ডাক্তার সাহেব কোনোদিন এ রকম হাসি শোনেননি; বরং এর বিপরীতটাই শুনেছেন দিনের পর দিন। ডাক্তার দাঁড়িয়ে রইলেন, আনন্দে তার গলা ভারী হয়ে এল।
ওই ডাক্তারের মতো সব ছেলেরাই চায় তার মা ও স্ত্রীর মাঝে মধুর সম্পর্ক থাকুক। কেননা পুরুষের জীবনে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ এই দুজন নারী। সংসারে এই দুই নারীর আন্তরিক মেলবন্ধন সবচেয়ে বেশি আনন্দ দেয় পুরুষকে। সারা দিন কাজকর্ম-ব্যস্ততা সেরে বাসায় ফিরে একবার মায়ের কাছ থেকে কমপ্লেইন, আরেকবার বউয়ের কাছ থেকে কমপ্লেইন কার ভালো লাগে? গেলাও যায় না, উগলানোও যায় না। মন করে না আর ঘরে ফিরি! দিনে দিনে এসব ছোটখাটো অভিযোগগুলো এদিক-সেদিকের এলোপাতাড়ি বাতাসে ফুলে-ফেঁপে একসময় এতই মারাত্মক হয় যে, অনেকের সংসার টেকানো দায় হয়ে যায়।
শুধু কি তা-ই? সমাজের মধ্যেও সম্পর্কের এহেন মারপ্যাঁচ নিয়ে একধরনের ম্যারেজ ট্রমা কাজ করে। বিয়ে কঠিন হয়ে যায়। ছেলে পর হয়ে যাবে সেই ভয়ে বা বউমা-আতঙ্কে অনেকেই ছেলেকে বিয়ে দিতে গড়িমসি করেন। আবার অনেক মেয়ে বিয়ে করতে চায় না, কারণ তাকে এক Mother in Law না, বরং Monster in Law এর মুখোমুখি হতে হবে। আমাদের সংস্কৃতি কি এমন ছিল? যাই হোক, সমূহ ধোঁয়াশাকে পাশ কাটিয়ে এই স্বতন্ত্র সম্পর্কটির যত্নের তাগিদে লেখা হয় ‘অন্দরমহল’। 
অন্দরমহল বইটি লিখতে প্রায় শতাধিক পুত্রবধূ, শাশুড়ির ওপর একটি জরিপ করা হয়েছে। জরিপে উনাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল উনাদের শাশুড়ি-মার, বউ-মার (তিনটি করে) ভালো দিক ও খারাপ দিক এবং মন্তব্য করতে বলা হয়েছিল তাদের ‘সম্পর্ক’ নিয়ে। দেখা গেছে, অধিকাংশ শাশুড়ি বা বউ-মার অভিযোগ বা অনুরাগের ধরন প্রায় একই রকম। সেই মন্তব্যগুলোর সারমর্ম ও দেশি-বিদেশি কিছু বইয়ের সাহায্য নিয়ে সাজানো হয়েছে বউ-মা হিসেবে আমাদের কিছু ভুল ও শাশুড়ি হিসেবে কিছু ভুল অধ্যায় দুটি। আর বিবাহিত বোনদের মেন্টরিং-এর বাস্তব অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এবং বেশ কয়েকটি উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করে লেখা হয়েছে সম্পর্ক উন্নয়নে করণীয় অধ্যায়টি।
এ বইয়ে কোনো টনিকের কথা বলা হয়নি, যা আজ রাতে খেয়ে আপনি ঘুমালেন আর সকালে উঠে দেখলেন আপনার সম্পর্কের সব সমস্যা ভালো হয়ে গেছে! এমনটি হবে না। সাত দিনে ২০ কেজি ওজন কমিয়ে ফেলতে চাই, মাত্র তিন দিনে অ্যান্টি-এইজিং ক্রিম মেখে বয়সের ছাপ তুলে ফেলতে চাই! চাই রাতারাতি মনমতো কিছু একটা ঘটে যাক! কিন্তু এসব ঘটে না। মনে হয়, ‘ভাগ্যটাই খারাপ” !
সুস্বাস্থ্য ও সৌন্দর্যের মতো সুসম্পর্কের জন্যও প্রয়োজন লাগাতার যত্ন ও পরিশ্রম। ভোগবাদী সমাজ ও কমার্শিয়াল মার্কেটিংয়ে হিপনোটাইজড হয়ে পরিশ্রমের পুরোনো রীতির মূল্যবোধ যদিও আজ আমরা হারাতে বসেছি, তবুও সবকিছুই নির্ভর করে আপনি-আপনার সম্পর্কগুলো কীভাবে দেখতে চান তার ওপর। দৃঢ় ইচ্ছা অবশ্যই একটি উপায় বের করবে।
আমাদের বিশ্বাস ও চিন্তার কোন কোন দিক ‘বউ-শাশুড়ি’ সম্পর্কটির সৌন্দর্য অনুধাবন করতে বাধা দেয়, আর কোন কোন বিষয় এই সৌন্দর্য উপভোগে প্রভাবক হিসেবে কাজ করে—তা নিয়ে মোটামুটি তথ্যভিত্তিক আলোচনা রয়েছে ‘অন্দরমহল’ বইটিতে। আপাতদৃষ্টিতে যেগুলো দেখতে খুবই সামান্য, কিন্তু আয়ত্ত করে নিজের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করলে ফলাফলটা নিঃসন্দেহে হবে দেখার মতো। অনুল্লেখযোগ্য পদক্ষেপগুলোই এনে দেবে আমূল পরিবর্তন।
সংসার জীবনে ব্যাপক আলোচিত গুরুত্বপূর্ণ এই নারীদ্বয়ের সম্পর্কের সমীকরণ মিলানোর এক রোমাঞ্চকর আয়োজন—অন্দরমহল!

অন্দরমহল বইটি কীভাবে পড়লে ভালো হয়?

এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, গল্প-উপন্যাস বা কল্পকাহিনি পড়ার ধরন আর প্রবন্ধ কিসিমের তথ্যভিত্তিক বই (নন-ফিকশন) পড়ার ধরন নিশ্চয়ই এক হবে না। কোন ধরনের বই আপনি পড়ছেন তার ওপর নির্ধারিত হবে ‘কীভাবে বইটি পড়তে হবে’।
আগেই বলে রাখি, অন্দরমহল বইটি প্রধানত বউ-মাদের জন্য। ঘর-সংসার ও বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে তারা বেশ ব্যস্ত থাকেন। মন স্থির করে বসে বই পড়ার সময় সুযোগ বা পরিস্থিতি খুব কমই পান। আবার দীর্ঘদিন তথ্যভিত্তিক বইয়ের সাথে সংশ্লিষ্টতা না থাকার কারণে পাঠাভ্যাসও কিছুটা নাজুক; তারা যদি ছোটখাটো কিছু পদ্ধতি প্রয়োগ করেন, তাহলে আশা করা যায় কিছু উপকার অবশ্যই বেশি পাবেন।
এখন কথা হলো, আপনি কেন বইটি হাতে নিয়েছেন? কেনই-বা পড়তে চাচ্ছেন? এই প্রশ্নের উত্তরটা পরিষ্কার হওয়া আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একেকজনের একেক রকম উদ্দেশ্য থাকতে পারে। কেউ ‘বউ-শাশুড়ি’ সম্পর্ক বিষয়ক কোনো সমস্যা থেকে বের হয়ে আসতে বইটি পড়তে পারেন। কেউ সম্পর্কটাকে বিস্তারিত জানার জন্য, কেউ-বা এখনো বিয়ে করেননি, কিন্তু প্রস্তুতি নেয়ার জন্য পড়তে পারেন। উদ্দেশ্য যেটাই হোক সেটাই যেন মনের মধ্যে পরিষ্কার থাকে। কোনো উদ্দেশ্যই যদি না থাকে, তাহলে আর পড়ার দরকার নেই।
উদ্দেশ্য ঠিক করার পর বইটি হাতে নিয়ে ফ্ল্যাপ, পেছনের পৃষ্ঠা এবং লেখক পরিচিতিতে নজর বুলিয়ে এরপর সূচিপত্রে চলে যান।। সূচিপত্র পরিষ্কার বুঝতে পারলে আপনি জানতে পারবেন বইটি কোন ধারাবাহিকতায় লেখা এবং আপনার প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো ঠিক কোথায় আছে। যে সমস্ত বিষয় উপকারী মনে হয়। সেগুলো হাইলাইটার দিয়ে হাইলাইট করে রাখতে পারেন। এরপর গোটা বইটা একনজরে দেখে নিলেন। এতে আপনি বইয়ের ভেতরের চিন্তার উপকরণের সাথে পরিচিত হলেন। এটুকু পড়ে ভালো লাগলে আপনি সময় নিয়ে বিস্তারিত পড়ার জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিতে পারেন।
এই মানসিক প্রস্তুতির ব্যাপারটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রস্তুতিটা যত সুন্দর হয় পড়াটা তত নান্দনিক হয়। পাঠক তার পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজের মধ্যে এক্সাইটমেন্ট তৈরি করে নিতে পারেন। যেমন : কেউ ঘরের কোনায় বসে বই পড়তে পছন্দ করেন, কেউ-বা চা-কফি নিয়ে বারান্দায় চলে যান। পড়ায় মনোযোগ বাড়ানোর জন্য পেন্সিল, কলম বা কাঠি ব্যবহার করেও পড়তে পারেন। এতে মনও বসে, সাথে সাথে চোখও দ্রুত সামনের দিকে যায়।
পড়া শুরু করার পরে কিছু বিষয় প্রয়োজনীয় মনে হতে পারে, কিছু উপকারী আবার কিছু বিষয়ে দ্বিমতও থাকতে পারে। বইয়ের পেছনে দেওয়া পরিশিষ্টে আপনি এ সমস্ত বিষয় নোট করে রাখতে পারেন। এই নোটগুলো পরবর্তী সময়ে খুব কাজে দেয়। অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক আহমদ ছফাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন। তিনি পড়ার সময় নোট রাখছেন কি না। ছফা এতে না-বোধক উত্তর দিলে আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘তাইলে ত কোনো কামে অইব না। ক্ষেত চষবার সময় জমির আইল বাইন্ধ্যা রাখতে অয়।’ অনেক লেখকের মতে ‘বইয়ে দাগানো হলো লেখকের সাথে একমত বা মতপার্থক্যের প্রতীক।’ বইয়ে দাগাদাগি করার সময় কিছু ব্রেনস্টর্মিং হয়, ফলে বিষয়টি মনে রাখা সহজ হয়।
বইটিতে বড় তিনটি ভাগ আছে। বউ-মা হিসেবে কিছু ভুল, শাশুড়ির চিন্তার কিছু ভুল এবং সবশেষে সম্পর্ক উন্নয়নে করণীয়। এরপর করণীয় বিষয়কে আবার তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে : বউ-মা ও শাশুড়ি-মায়ের উভয়ের যৌথ পদক্ষেপ, শাশুড়ি-মায়ের প্রতি নিবেদন এবং বউ-মার স্বতন্ত্র কিছু পদক্ষেপ। এ ক্ষেত্রে য সমাধান বা সমস্যাগুলো আপনার কাছে বেশি উল্লেখযোগ্য মনে হয়। বা মতের সাথে মেলে, সে বিষয়গুলো আগে পড়ে নিতে পারেন।
একরাতের মধ্যে তাড়াহুড়া করে একটি নন-ফিকশন বই পড়ে ফেলা কোনো কাজের কথা না; বরং বই থেকে নিজের জন্য উপকারী ও মানানসই বিষয়গুলো আমলে আনা এবং বাড়তি সংযোজন-বিয়োজন করে স্বতন্ত্র একটি প্রবন্ধ তৈরি করা। গল্পগুজবের সময় উঠানো বিষয়গুলো সবার জন্যই বেশ উপকারী হবে ইনশাআল্লাহ। – অন্দরমহল।
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?