অতো দূরে বিয়ে দিওনা, বাবা – নির্মলা পুতুল

অতো দূরে বিয়ে দিওনা, বাবা

– নির্মলা পুতুল

অনুবাদ : শতঞ্জিত ঘোষ

অতো দূরে বিয়ে দিও না, বাবা
আমায় দেখতে যাবার ইচ্ছে হলে
দুধেল বকরী দুটো তোমায় বিক্রী করতে হবে

ওখানে বিয়ে দিও না আমায়
যেখানে মানুষের চেয়ে বেশি
ঈশ্বরের বাস

জঙ্গল নদী পাহাড় যেখানে নেই
সেখানে যেন সম্বন্ধ পাকা করে এসো না

ওখানে তো খুঁজোই না
ঢালা রাস্তায় যেখানে মনের চেয়ে
দ্রুত ছোটে মটরগাড়ি
উঁচু-উঁচু সব বাড়ি
বিরাট বড়-বড় দোকান

এমন ঘরে বিয়ে দিও না বাবা
যেখানে মস্ত একটা খোলা উঠান নেই
মোরগের ডাকে যেখানে সকাল হয় না
আর বিকালে বাড়ির পিছনে
পাহাড়ের উপর সূর্য ডোবা
দেখা যায় না

এমন বর খুঁজো না আমার
পচাই আর হাঁড়িয়ায়
যে ডুবে থাকে নিত্যদিন

কুড়ে আর নিকম্মার ধাড়ি
মেলা থেকে
মেয়েদের ভুলিয়ে আনতে ওস্তাদ
এমন পাত্র দেখো না

এ তো ঘটি-বাটি নয় যে
ভালো মন্দ হলে বদলিয়ে নেবো
পরে যখন হোক

সব সময় লাঠি-ডাণ্ডা
কথায় কথায় তির-ধনুক,
কুড়ুল বার করা
যখন ইচ্ছে
বাংলা,আসাম কিংবা কাশ্মীরে
চলে যাওয়া
এমন বর আমি চাইনা

এমন ছেলের হাতে দিও না আমায়
নিজের হাতে
একটা গাছ‌ও যে পোঁতেনি কখনো
মাটির বুক চিরে ফসল ফলায় নি যে হাত
শ্রমে দেয়নি কারো সাথ
মাথায় তুলে দেয়নি কারো বোঝা

‘হ-এ হাত’
লিখতেও জানে না যে মানুষ
তার হাতে দিও না আমার হাত!

বিয়ে যখন দেবেই,ওখানে দিও
যেখানে ভোর-সকালে বেরিয়ে তুমি
সন্ধ্যায় ফিরতে পারো পায়ে হেঁটে
কখনো যদি দুঃখে কাঁদি এঘাটে
ওঘাটে স্নানে নেমে
আমার বোবা কান্না শুনে
যেন ছুটে আসতে পারো

মহুয়ার থোকা
আর খেজুরের গুড় তৈরি করে
খবর পাঠাতে পারি তোমাকে
ওই দিকে যাচ্ছে এমন কারো হাতে
পাঠাতে পারি কখনো সখনো মায়ের জন্য‌
লাউ-কুমড়ো,কাঁকরোল,বরবটি

মেলায়, হাটে-বাজারে আসতে যেতে
দেখতে পাই যেন চেনা মুখ
জানতে পারি তাদের কাছে
ঘর-গৃহস্থী, গ্রামের সুখ-সমাচার

কপালে সাদা চাঁদ
লক্ষ্মী গাইটার বিয়ানোর খবর
এ পথে যেতে
কেউ যেন দিয়ে যায়
এমন জায়গায় বিয়ে দিও আমায়

সেই দেশে বিয়ে দিও
যেখানে ভগবান কম
মানুষ থাকে বেশি

বাঘ আর বকরী
জল খায় এক ঘাটে যেখানে
সেইখানে দিও বিয়ে

বিয়ে দিও তার সঙ্গে
বাইরে খেতের কাজ থেকে নিয়ে
রাত্রে সুখ-দুঃখ ভাগ করে নেওয়া অবধি
জোড়া পায়রা আর ঘুঘু জুটির মতো
হরদম যে থাকবে সঙ্গে

আমার বিয়ে দিও তার সঙ্গে
যে বাজায় সুরেলা বাঁশি
ঢোল-মাদল বাজায় নাচের তালে-তালে

বসন্তদিনে যে আমায় এনে দেবে রোজ
খোঁপায় দেবো বলে পলাশ ফুল

আমি উপোষী থাকলে
গলা দিয়ে ভাত নামবে না যার
তার সঙ্গেই, বাবা, বিয়ে দিও আমার।

(‘নগাড়ে কী তরহ বজতে শব্দ’ কাব্যগ্রন্থ থেকে)

[নির্মলা পুতুল (জন্ম ১৯৭২-) দুমকা জেলার এক আদিবাসী গ্রামে জন্মেছেন। বাবা ছিলেন শিক্ষক, কিন্তু তাঁর ছোটবেলা কেটেছে পারম্পরিক সাওঁতাল  পরিবেশে, দারিদ্রের মধ্যে। পড়াশোনাতে বাধা পড়েছে বারবার। নার্সিংএ ডিপ্লোমা নেবার পর রাজনীতিশাস্ত্র বিষয়ে স্নাতক হন। তিনি লেখেন সাওঁতালী ও হিন্দি ভাষায়। আদিবাসী জীবনবোধে অনুরক্ত কবি তাঁর কবিতার মধ্য দিয়ে সা‌ওঁতালী জীবনকে অভিজাত সমাজের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছেন।
কবি,সোশাল এক্টিভিস্ট ও দেশ-বিদেশের   নানান সংস্থার সঙ্গে যুক্ত নির্মলা পুতুল সাহিত্য অকাদেমী‌ (২০০১) সহ বহু পুরস্কার পেয়েছেন, অনেক ভাষায় অনুদিত হয়েছে তার কবিতা। হিন্দিভাষী অঞ্চল ছাড়াও কাশ্মীর কেরল ইত্যাদি বেশ কিছু প্রদেশে   এনসিইআরটি পাঠ্যক্রমে তার কবিতা পড়ানো হয়।]

সৌজন্য: শুভপ্রতিম রায়চৌধুরী

বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?