হ্যাপি ম্যারিড লাইফ – লেখক : জুবায়ের রশীদ | Happy Married Life By Jubayer Rashid

Image

হ্যাপি ম্যারিড লাইফ

লেখক : জুবায়ের রশীদ
প্রকাশনী : হাসানাহ পাবলিকেশন
বিষয় : পরিবার ও সামাজিক জীবন
পৃষ্ঠা : 176, কভার : পেপার ব্যাক
ভাষা : বাংলা
          Read Before Buy Happy Married Life
সম্প্রতি তালাক/ডিভোর্স পারিবারিক ও সামাজিক অঙ্গনে এক মরণ-বিষফোড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভেঙে যাচ্ছে বহু সংসার। কেড়ে নিচ্ছে সুখ-ুঃখের উষ্ণ তাপে লালিত বহু দিনের সুখ-শান্তি। ইসলাম প্রদত্ত দাম্পত্যজীবন এবং তালাকের শরঈ রূপরেখা সম্পর্কে অজ্ঞতাই এর প্রধানতম কারণ। এ বই সে অজ্ঞতাকে দূর করবে, ইনশাআল্লাহ। ২০২০ সালের একটি জরিপে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর ও দুঃখজনক সংবাদ। 
ঢাকায় দৈনিক ৩৯টি ডিভোর্সের ঘটনা ঘটছে। এই সংখ্যা এখন ঊর্ধমুখী। আমাদের রাষ্ট্রের মাথাপিছু ঋণের মতোই ডিভোর্সের সূচক লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে প্রতিনিয়ত। অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে, অধিকাংশই তুচ্ছ থেকে তুচ্ছতর বিষয়কে কেন্দ্র করে ভাঙছে দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্নসুখের সংসার। হয়তো দুজনের একটু সচেতনতা, হৃদয়ে একটু জাগ্রতবোধ থাকলে ডিভোর্সের সুখনাশক ঘটনা ঘটত না। এ বই স্বামী-স্ত্রীর মাঝে সেই সচেতনতা ও জাগ্রতবোধ সৃষ্টি করবে। 
রাসুল ও তাঁর সাহাবিদের দাম্পত্যজীবনের আলোকে সঠিক কিনির্দেশনা দেবে। সর্বোপরি জীবনকে করে তুলবে আনন্দময়। পুরুষের জীবনে যে নারী, নারীর জীবনে যে পুরুষ, সকলের হৃদয়-মন অম্লমধুর প্রফুল্লতায় ভরে দেবে। জগৎসংসার নেচে উঠবে; বৃষ্টির ছন্দে নেচে উঠে যেমন কবির হৃদয়।
      কেন এ বই? বোধের জগতে মগ্নচৈতন্যে মৃদু করাঘাত
নারী-পুরুষের সৃষ্টিলগ্ন সময়টি একই সঙ্গে বিস্ময়কর ও রোমাঞ্চের। সৃষ্টিগতভাবে নারী-পুরুষ একে অপরের পরিপূরক। নারী ব্যতীত পুরুষ এবং পুরুষ ব্যতীত নারীর জীবন অসম্পূর্ণ। খুশবুহীন পুষ্পের মতো। ফুলহীন বাগানের মতো। তরঙ্গবিহীন নদীর মতো। যে জীবনে নেই আনন্দ-বেদনার কোনো পরিচয়। এমন নিস্তরঙ্গ জীবনে থাকে না বেঁচে থাকার সুখদায়ক উপাদান এবং আঁকড়ে ধরার মতো শক্ত কোনো অবলম্বন। মাথার ওপর থাকে না আনন্দ সঞ্চারী সূর্য। পুরুষ তার জীবনে একজন সঙ্গিনী ব্যতীত হতাশা ও কষ্টের সাগরে খেতে থাকে হাবুডুবু। এমনিভাবে নারীও তার জীবনে একজন উত্তম জীবনসঙ্গী ব্যতীত ঘুরপাক খেতে থাকে দিভ্রান্ত পথিকের ন্যায় বিশাল প্রস্তরাকীর্ণ উপত্যকায়। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন হজরত আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করার পর তাঁর জীবনসঙ্গিনী হিসেবে হজরত হাওয়া আলাইহাস সালামকে সৃষ্টি করেছেন। 
অতঃপর বেহেশতে তাঁদের বিবাহবন্ধনের আয়োজন করেন। তাঁদের জুড়ে দেন ভালোবাসার প্রগাঢ় সুতোয়। সে থেকে সূচনা হয় প্রেমময় ও ভালোবাসার এক দিঘল পথচলা। শুরু হয় যুগলবন্দি এক অনুপম ও পবিত্র জীবন। বেহেশত থেকে সেই যে শুরু হয়েছে, আজও তা অব্যাহত আছে স্বমহিমায়। আমরা তাঁদেরই সন্তান। সেই ধারাবাহিকতা চলমান আজও আমাদের রক্ত পরম্পরায়। সকল নবি-রাসুলের ধর্মেই বিবাহ ছিল অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও এই সুন্নত থেকে যারা মুখ ফিরিয়ে নেবে, তাদেরকে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর (প্রকৃত ও আদর্শ) উম্মতভুক্ত নয় বলে কঠিন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। সুতরাং বিবাহ মানবজীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, অপরিহার্য প্রসঙ্গ।
ইসলামে বিয়ে কেবল একটি সম্পর্কের বোঝাপড়া নয়; বরং বিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এই ইবাদত কারও ক্ষেত্রে ফরজ। কারও ক্ষেত্রে ওয়াজিব। 
আবার কারও ক্ষেত্রে সুন্নত। বিয়ের ব্যাপারে আমাদের গর্বের ধর্ম অনেক উৎসাহ প্রদান করেছে। তাৎপর্যপূর্ণ তাগিদ দিয়েছে। কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে বহু দিকনির্দেশনা। আমাদের মহান স্রষ্ট আল্লাহ তায়ালা বিয়েকে তাঁর একটি নিদর্শন বলেছেন। ইরশাদ হয়েছে
ومن آياته أن خلق لكم من أنفسكم أزواجا لتسكنوا إليها وجعل بينكم مودة ورحمة
‘আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন-যেন তোমরা তাদের নিকট প্রশান্তি লাভ করো। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও মায়া সৃষ্টি করে দিয়েছেন।’
অপর আয়াতে আল্লাহ তায়লা বলেন
يا أيها الناس اتقوا ربكم الذي خلقكم من نفس واحدة وخلق منها زوجها وبث منهما رجالا كثيرا ونساء
‘হে মানবজাতি! তোমরা ভয় করো তোমাদের প্রভুকে; যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন এক ব্যক্তি থেকে আর তাঁর থেকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর স্ত্রীকে। অতঃপর তাঁদের দুজন থেকে সৃষ্টি করেছেন অগণিত নারী ও পুরুষ।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিবাহের অধিকতর গুরুত্ব প্রদান করে বলেন, ‘হে যুব সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে থেকে যারা বিয়ে করতে সক্ষম, তারা যেন বিয়ে করে নেয়। কারণ, বিয়ে দৃষ্টি অবনত রাখতে এবং গুপ্তাঙ্গের
১. সুরা রুম : ২১ ২. সুরা নিসা : ১
পবিত্রতা রক্ষা করতে অধিক সহায়ক। আর যে বিয়ে করতে সক্ষম নয়, সে যেন রোজা রাখে। কেননা, রোজা তার যৌনক্ষুধাকে দমন করবে। ৩ অপর হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিয়ের প্রতি দ্বিগুণ উৎসাহ প্রদান করে বলেন, ‘তিন শ্রেণির লোককে আল্লাহ অবশ্যই সাহায্য করে থাকেন। এক. স্বাধীন হওয়ার চুক্তিতে আবদ্ধ দাস; যে নিজ মুক্তিপণ আদায়ের সদিচ্ছা রাখে। দুই. চারিত্রিক পবিত্রতা রক্ষার্থে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ ব্যক্তি। তিন. আল্লাহর পথে জিহাদকারী। ৪
ধর্মের নির্দেশনা, জৈবিক চাহিদা সর্বোপরি জীবনের আরও বহুবিধ উপকারের নিমিত্তে নারী-পুরুষ পরস্পরে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়। উদ্দেশ্য থাকে একটি জীবন তারা সুখ-দুঃখে একে অপরের জান-প্রাণ হয়ে কাটিয়ে দেবে। জীবনে হয়ে উঠবে তারা একে অপরের পরিপূরক। হয়ে উঠবে একে অপরের ছায়া ও মায়া। প্রতিটি নারী-পুরুষ এমন একটি পবিত্র বাসনা হৃদয়ে পোষণ করে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়। কিন্তু কখনো কখনো সুখের সে জীবনে নেমে আসে ঘোর অমানিশা। অতল আঁধারে ছেয়ে যায় স্বপ্নের আলোয় সাজানো সংসার। হৃদয়ে আনন্দ-ভালোবাসার যে বীজ বপন করে রাখে, তা যেন পোকায় খেয়ে ফেলে। পরিণামে দাম্পত্যজীবন তখন অপরিহার্যভাবে ভাঙনের মুখোমুখি হয়। এই ভাঙন ও বিচ্ছেদের কারণ কখনো হয়ে থাকে অতি সামান্য। কখনো হয়ে থাকে খুবই তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে। মুহূর্ত মাত্র সময় কেউ একজন উত্তেজিত না হয়ে চুপ থাকলেই হয়তো মিটে যেত দহনের সেই আগুন। হয়তো সামান্য একটু ছাড় দিলেই কঠিন পরিণামের দিকে গড়াত না দিঘল প্রণয়ের সম্পর্ক। স্বামী-স্ত্রীর মাঝে সুখময় জীবন গড়ার সঠিক দিকনির্দেশনা না থাকার অভাবে ভেঙে ফেলতে হয় সাজানো স্বপ্নের বাগান। যে মুখ দেখে একে অপরে জীবনের তৃপ্তি অনুভব করত, ঠুনকো কারণে তাদের চলে যেতে হয় দূর থেকে বহুদূরে। এ গ্রন্থের প্রথম অধ্যায়ে দাম্পত্যজীবন সুখময় করে তোলার প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা আলোচনা করেছি অতীব যত্ন ও গুরুত্বের সঙ্গে।
৩. সহিহ বুখারি : ২/৭৫৮ ৪. সুনানে তিরমিজি : ২/২৯৫
বর্তমান সময়ে তালাক আমাদের সামাজিক ও পারিবারিক জীবনের এক মরণ বিষফোড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। শহুরে জীবনে এর কঠিন প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হচ্ছে। প্রতিনিয়ত ভাঙছে সংসার ভাঙছে জীবন। তালাকের হার এখন ঊর্ধ্বমুখী। অভিজ্ঞতার আলোকে দেখেছি এর সর্বনাশা পরিণাম। রাজধানী ঢাকার স্বর্ণপ্রসবিনী উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জামিয়া আকবর কমপ্লেক্সে ইফতা পড়াকালীন দেখেছি, প্রায় প্রতিদিনই লোকেরা অস্থির চিত্তে ছুটে আসত তালাকের মাসআলা নিয়ে। অধুনা দেশের প্রায় প্রতিটি ইফতা বিভাগে চিত্র প্রায় একই। সামান্য থেকে সামান্য বিষয়ে স্বামী তার প্রিয়তমা স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দিচ্ছে। ঝগড়া হয়েছে তো রাগ প্রশমিত করতে তিন তালাক দিয়ে বসছে। 
তখন একটুও চিন্তা করছে না যে, এর পরিণাম কী হতে পারে আগামী জীবনে। বর্তমানে তালাক সম্পর্কে এত ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছে, যা আমাদের শিক্ষিত সমাে কল্পনাই যায় না। ইসলাম সম্পর্কে ন্যূনতম জ্ঞান রাখে না, এমন ব্যক্তিও দেদারছে দিচ্ছে তালাকের সমাধান। ইসলামের নীতি অনুযায়ী তালাক পড়ে স্ত্রী সম্পূর্ণ হারাম হয়ে যাচ্ছে আর মূর্খ সমাজপতি ও জ্ঞানপাপীরা অবলীলায় তালাক হচ্ছে না বলে ফতোয়া দিচ্ছে। সমাজের গভীরে প্রবেশ করলে এর হাজারো চিত্র ভেসে উঠবে চোখের সামনে। এসবের পেছনে অন্যতম কারণ হলো-তালাক সম্পর্কে অজ্ঞতা। স্বামী জানে না ইসলামের তালাক নীতি। জানে না স্ত্রীও। 
ঝগড়া-বিবাদের সময় এমন অনেক কথা স্বামী বলে ফেলে, যাতে বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে; কিন্তু এতে তাদের অনুভূতিতেও নেই। সকালে তালাক দিয়ে সন্ধ্যায় পুনরায় একসাথে মিলিত হচ্ছে। আজ তালাক দিচ্ছে তো আগামীকাল ভুলে যাচ্ছে। কেউ আবার প্রয়োজনের কারণে তালাক দিচ্ছে। কিন্তু সে জানে না যে, কীভাবে স্ত্রীকে তালাক দিতে হয়, কখন তালাক দিতে হয়। পরে একসাথে তিন তালাক দিয়ে এসে মুফতি সাহেবের নিকট কাকুতি-মিনতি করে। জুড়ে দেয় সে কী কান্না! পুনরায় সে ফিরে পেতে চায় তার স্ত্রীকে। চোখের পানি তখন বাঁধ মানে না যেন যাপিত জীবনের সমস্ত আবেগ, ভালোবাসা গদগদ করে ওঠে। কিন্তু তখন আর কিছুই করার থাকে না। 
যদি সে ইসলামের তালাক নীতি সম্পর্কে জানত, তাহলে তাকে কঠিন এ সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো না। ইসলাম তালাকের যে সুন্দর ও উপকারী নিয়ম প্রণয়ন করেছে, তার সুবিধা গ্রহণ থেকে সে বঞ্চিত হয় অজ্ঞতার কারণে। বর্তমান বহু দাম্পত্যজীবন হারাম ও অবৈধে রূপান্তর হচ্ছে ইসলামের তালাক নীতি সম্পর্কে না জানার কারণে। তাই বিস্তারিতভাবে ইসলামের তালাক নীতি সম্পর্কে প্রামাণিক আলোচনা করা জরুরি মনে করেছি। সহজ ও সাবলীল ভাষায় তালাকের বিশদ বিবরণ ফুটিয়ে তুলেছি। এ গ্রন্থটি লেখায় আমার মূল উদ্দেশ্য হলো সাধারণ মানুষকে তালাকের শরঈ রূপরেখা সম্পর্কে অবহিত করা এবং সুন্দর ও সুখময় দাম্পত্যজীবনের সঙ্গে পরিচিত করে তোলা। ইসলাম যে সুন্দর ও কল্যাণকর তালাক নীতি প্রদান করেছে, তা সাধারণ মুসলমানদের বোধগম্য করা। ইফতা পড়াকালীন এ চিন্তাটি আমার করোটিতে আসে। সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ ও তাদের অকল্পনীয় দুঃখ-হতাশা দেখে এই গ্রন্থ রচনার বাসনা জাগে হৃদয়ে।
একদিনের ঘটনা মনে পড়ে; হৃদয়ে নাড়া দেয় প্রবলভাবে। তখন সন্ধ্যা পেরিয়ে গেছে। বসে আছি কামরায়। সুরা ওয়াকিয়াহ তিলাওয়াত করে কালামে পাক বন্ধ করে আনমনে কী যেন ভাবছিলাম। ক্লান্ত প্রাণে এক লোক আমার সামনে এসে দাম মেরে বসে পড়ল। আমি কিছুটা হকচকিয়ে গেলাম। তার চোখে মুখে দেখি রাজ্যের হতাশা! মনে হচ্ছে, জীবনের দামি কিছু হারিয়ে ফেলেছে লোকটি। আমি তাকে গ্লাসে ভরে সতেজ পানি হাতে তুলে দিলাম। বললাম, ‘আপনি পানি পান করে শান্ত হয়ে বসুন। আমার এখন কোনো কাজ নেই, আপনার সঙ্গে খোলা মনে কথা বলতে পারব।’ লোকটি একপ্রকার নিশ্চিন্ত হলো। জিজ্ঞেস করলাম- ‘কী হয়েছে, এমন করছেন কেন? আমার প্রশ্নের উত্তরে লোকটি যা বলল, তাতে আমিও যারপরনাই বেদনাগ্রস্ত হয়ে পড়ি। আকাশ ভরা দলা পাকানো কালো মেঘ যেন আমার হৃদয়-মন ঢেকে ফেলল। 
খানিক আগে স্ত্রীর সঙ্গে সাধারণ, অতি সাধারণ একটা বিষয় নিয়ে ঝগড়া হয়েছে তার। কাজ থেকে ফিরেছে মাত্র। মন-মেজাজ কিছুটা রুক্ষ ছিল। তারপর দুয়েক কথায় স্ত্রীকে তিন তালাক মেরে দিয়েছে। বন্দুক থেকে গুলি বের হয়ে গেলে যেমন কিছু করার থাকে না, লোকটিরও তা-ই হলো। ছোট্ট একটি কথায় দীর্ঘ দাম্পত্য সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেল। স্ত্রী তার জন্য হারাম হয়ে যায়। তিন তালাক বলে ফেলার পর হুঁশ ফিরল তার। কিন্তু তখন আর কিছু করার নেই। তার ঘরে অপ্রাপ্তবয়স্ক তিন তিনটে সন্তান আছে। গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জ । ঢাকায় ভাড়া থাকেন। আয়-রোজগার সীমিত। বাসা ভাড়া আর চাল ডাল-নুনের বন্দোবস্ত করে মাস শেষে হাতে থাকে না কানাকড়ি তেমন। ঘটনা বলার পর হাউমাউ করে কেঁদে ফেললেন। এমন তাগড়া কোনো লোককে এভাবে কাঁদতে দেখে আমি নিজেই কেমন বেদনাগ্রস্ত হয়ে পড়ি। ঝিম মেরে বসে থাকি। এমন পরিস্থিতিতে আসলে আমাদেরও বলার থাকে না কিছু। এক আল্লাহর প্রতি নিষ্ঠাপূর্ণ আনুগত্য প্রদর্শনপূর্বক শরিয়তের বিধান জানিয়ে দিই হাতে সময় থাকলে দ্বীনি ইলমের গুরুত্বের কথা বলি। ইসলামের তালাক নীতি কত সুন্দর, তা তুলে ধরি। কেন আগে শিখলাম না, কেন জানলাম না’–ইত্যকার হতাশাব্যঞ্জক কথা বলে নিজেদের অসহায়ত্ব প্রকাশ করে।
২০২০ সালের এক জরিপে উঠে এসেছে আরেক চাঞ্চল্য ও দুঃখজনক সংবাদ। ঢাকায় দৈনিক ৩৯টি ডিভোর্সের ঘটনা ঘটছে। এই সংখ্যা এখন নিয়তই ঊর্ধ্বমুখী। আমাদের জাতীয় জীবনে মাথাপিছু ঋণের মতোই ডিভোর্সের সূচক লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে-অধিকাংশ ক্ষেত্রে তুচ্ছ থেকে তুচ্ছতর বিষয়কে কেন্দ্র করে ভাঙছে দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্নসুখের সংসার। হয়তো একটু সচেতনতা, হৃদয়ে একটু জাগ্রতবোধ থাকলে ডিভোর্সের মতো এত জঘন্য ঘটনার সূচনা হতো না।

তালাক কী ?

তালাক অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়। এটি কেবল পারিবারিক ও সামাজিক কোনো সংকট নয়। এর সাথে জড়িয়ে আছে দ্বীনের অতীব গুরত্বপূর্ণ অনেক বিধাবিধান। তাই দাম্পত্যজীবনে পা রাখার পূর্বেই আবশ্যক হচ্ছে, দাম্পত্যজীবনের প্রয়োজনীয় বিধিবিধান ও মাসআলাগুলো জেনে নেওয়া। দাম্পত্যজীবন সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা। দাম্পত্যজীবন কীভাবে সুখময় করে তোলা যায়, সে সম্পর্কে ধারণা অর্জন করা। দুনিয়াতে মানুষ কত সাধারণ থেকে সাধারণ বিষয় আরম্ভ করার পূর্বে সে বিষয়ে পর্যাপ্ত ধারণা অর্জন করে নেয়। ব্যবসা শুরু করার পূর্বে কীভাবে ব্যবসায় লাভবান হওয়া যাবে, তা নিয়ে করে বহু কর্মশালা। আয়োজন করে বিভিন্ন কোর্স। আজকাল সামান্য মাছ চাষের প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজনও করা হয়। গ্রামের সাধারণ জেলেরা তাতে সোৎসাহে অংশগ্রহণ করে। কিন্তু বৈবাহিক জীবনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ও দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কে মানুষ জড়িয়ে যায় ন্যূনতম কোনো ধারণ অর্জন ছাড়াই। অথচ এর সাথে জড়িয়ে আছে মানুষের জীবনের বহু অধ্যায়। পৃথিবীতে মানুষের অধিকাংশ সুখ-দুঃখ জড়িয়ে আছে এই একটি সম্পর্কের সাথে। তাই অপরিহার্য হলো- বৈবাহিক সম্পর্কে জড়ানোর পূর্বে স্বামী-স্ত্রী উভয়কে এ বিষয়ে যথাসাধ্য জ্ঞান লাভ করা। ইসলামের আলোকে দাম্পত্যজীবনের আলোকিত রূপরেখা সম্পর্কে অবগত লাভ করা। তাহলে দাম্পত্যজীবনে উদ্ভূত সকল সমস্যা থেকে সহজে উত্তোরণ লাভ করা যাবে; এড়ানো সম্ভব হবে বহু বিপদ-আপদ।
গ্রন্থটি দুটি অধ্যায়ে সাজিয়েছি। প্রথম অধ্যায়ে আলোচনা করেছি সুখময় দাম্পত্যজীবন গঠনের উপায় ও পদ্ধতি সম্পর্কে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও মহান সাহাবায়ে কেরামের দাম্পত্যজীবনের সার্বিক চিত্র তুলে ধরেছি, যা থেকে পাঠক/পাঠিকা তাদের জীবনের যুগপৎ পাথেয় ও দিকনির্দেশনা লাভ করবে, ইনশাআল্লাহ। দ্বিতীয় অধ্যায়ে আলোচনা করেছি তালাকের শরঈ রূপরেখা; সেইসাথে আনুষঙ্গিক অন্যান্য বিধিবিধান। এখানে গুরুত্বের সঙ্গে বাংলাদেশে প্রচলিত তথাকথিত মুসলিম পারিবারিক আইনের ইসলামবিরোধী বেশ কিছু ধারা-উপধারা আলোকপাত করেছি।
সম্প্রতি তালাক পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে এক মরণ বিষফোড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভেঙে যাচ্ছে বহু সংসার। কেড়ে নিচ্ছে পরম শান্তি। ইসলাম প্রদত্ত দাম্পত্যজীবন এবং তালাক প্রদানের শরঈ রূপরেখা সম্পর্কে অজ্ঞতাই এর প্রধানতম কারণ। তাই মুসলিম পরিবারগুলোর মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে এ দিকটি বিশেষভাবে আলোচনায় তুলে এনেছি।
দীর্ঘ তিন বছর একটু একটু করে (কোনোদিন এক-দুই পৃষ্ঠা, কোনোদিন কয়েকটি লাইন) এগিয়েছে এর রচনার কাজ। মোটামুটি একটি পর্যায়ে আসার পর বেশ অনেক দিন পাণ্ডুলিপি আকারে পড়ে থাকে। অন্যান্য গ্রন্থ রচনার ফাঁকে ফাঁকে এই পাণ্ডুলিপিটিও ঘষামাজা করতে থাকি। অবশেষে এখন সবকিছু চূড়ান্ত হয়ে প্রিয় পাঠককুলের হাতে হাতে, আলহামদুলিল্লাহ!
আরো পড়তে অথবা দেখতে :- অনুগ্রহ করে Hardcopy ক্রয় করুন। 

অনুরোধঃ– বই :  হ্যাপি ম্যারিড লাইফ – জুবায়ের রশীদ এর প্রি অর্ডার চলছে … তাই হ্যাপি ম্যারিড লাইফ – Happy Married Life বইটি PDF Free Download চাহিয়া লেখকদের নিরুৎসাহিত করিবেন না।
We Respect Every Author Hardwork – boipaw.com™
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?