“যে ফজরের সালাত আদায় করলো, সে আল্লাহর তত্ত্বাবধানে চলে এলো। আল্লাহ যেন নিজ তত্ত্বাবধানের কোনো কিছু সম্পর্কে তোমাদের বিরুদ্ধে বাদী না হন। কারণ, তিনি যার বিরুদ্ধে আপন তত্ত্বাবধানের কোনো কিছু সম্পর্কে বাদী হবেন, তাকে পাকড়াও করবেন, এরপর তাকে উপুড় করে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করবেন। ”[৮০]
এই হাদীস আমার ভাবনার জগৎটাই এলোমেলো করে দিচ্ছে। কী মোহগ্রস্ততায় আমি নিজেকে নিজে ঠেলে দিচ্ছি অনিশ্চিত অন্ধকারে, জানি না। বিছানার মোলায়েম স্পর্শে সালাতকে ভুলে থেকে আগুনের নির্মম স্পর্শের জন্যে কেন নিজেকে প্রস্তুত করছি তিল তিল করে, জানি না। শুধু জানি, এই আত্মবিধ্বংসী অভ্যাস থেকে আমাকে মুক্ত হতে হবে। হতেই হবে।
এই হাদীস আমার ভেতর আরেকটা উপলব্ধির জন্ম দিয়েছে। আমার অস্থিরতাপূর্ণ আটপৌরে জীবন, বেলা করে ঘুম থেকে ওঠার পর শুরু হওয়া উদয়াস্ত ব্যস্ততা, যেখানে আসমানী মদদের ছিটেফোঁটা নেই, সেই জীবনটাকে আল্লাহর কাছে সমর্পিত করতে পারলে আরেকটু কি গোছানো হতো? আরেকটু নির্ভার হতো? মনে হয় হতো। বিশ্বাসী অন্তর আমাকে কেন জানি প্রণোদনা দিচ্ছে এদিকে। এই সমর্পণের চমৎকার একটি সিঁড়ি হলো ফজরের সালাত। তাহলে কেন এই সুযোগ হাতছাড়া করবো আমি?
আমার মানসিক যন্ত্রণা আরও বহুগুণ বেড়ে গেলো, যখন জানতে পারলাম, আমাকে প্রচণ্ডভাবে নিন্দা করা হয়েছে কুরআনের পাতায়। আমি উৎসুক হয়ে আয়াতটা খুলে পড়তে লাগলাম:
فَخَلَفَ مِنْ بَعْدِهِمْ خَلْفٌ أَضَاعُوا الصَّلَاةَ وَاتَّبَعُوا الشَّهَوَاتِ فَسَوْفَ يَلْقَوْنَ غَيًّا
“এদের পরে এমন সব মন্দলোক স্থলাভিষিক্ত হলো, যারা সালাত নষ্ট করলো এবং প্রবৃত্তির অনুসরণ করলো। এরা শিগগির ‘গাই’ (জাহান্নামের একটি উপত্যকা)—এর মুখোমুখি হবে। ”
কারা সেই হতভাগ্য, যাদেরকে আল্লাহ নিজেই ‘মন্দ’ বলছেন! এরা তারাই, যারা আমার মতো সালাতে হেলা করে। বলতে দ্বিধা নেই, চিন্তাভাবনা করে দেখলাম, আমি সেই মন্দলোকদেরই একজন হয়ে যাচ্ছি।
আমি সালাত নষ্ট করছি।
নিজের খেয়াল—খুশি মতো ঘুমিয়ে থাকছি, আল্লাহর সামনে াঁড়ানোর চেয়ে আয়েশি ঘুমের স্বা আস্বাদনে প্রবৃত্ত হচ্ছি।
জাহান্নামের উপত্যকাই কি তবে আমার শেষ ঠিকানা?
আমি কি এতটাই নীচ?
আমি কি এতটাই হীন?
হ্যাঁ, আমি এতটাই নীচ ও হীন যে, আমার কানে এমনকি নির্গত হয় শাইত্বানের ¯্রাব। খতীব সাহেবের মুখে অনেকবার এ কথাটা শুনেছি, কিন্তু কথাটা খুব হালকা বলে মনে হতো। বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ হতো। যখন আল্লাহর রাসূলের ﷺ কাছ থেকেই শুনলাম, তখন কি আর সংশয়ের সুযোগ থাকে?
আমাদেরকে গল্পটা শোনাচ্ছেন ‘আবদুল্লাহ ইবন মাস‘ঊদ।
ذكر عند النبِيّ صلَّى اللهُ عليه وسلَّم رجل، فقيل: ما زال نائما حتّى أصبح، ما قام إِلَى الصَّلاَة، فقال: ذاك رجل بال الشيطان في أذنِه. [৮২]
“রাসূলুল্লাহর ﷺ কাছে এক ব্যক্তি সম্পর্কে আলোচনা হলো। বলা হলো: ভোর হওয়া পর্যন্ত সে ঘুমিয়ে ছিলো, সালাতে দাঁড়ায়নি। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন: সে এমন লোক, শাইত্বান যার কানে প্রসাব করেছে। ”[৮৩] এই যে শাইত্বানের প্রসাব করে দেয়া, এটার অর্থ হলো, শাইত্বান আমার উপর জয়ী হয়েছে। আমি যে তার অনুগত ও বশ্য, সেই সত্যের স্মারক হলো তার এই প্রসাব করে দেওয়া। ছোটলোকের ছোটলোকি কারবার আর কি! কিন্তু আমার সাথে কেন এই ছোটলোকির সুযোগ সে পেলো? কারণ, আমিও তার কথা মেনে নেওয়ার মধ্য দিয়ে তার মতই নীচ হয়ে গেছি।
ছিঃ।
এ কেমন আমি?
এখানেই শেষ নয়। দুনিয়ায় যতো ভর্ৎসনাপ্রকাশক শব্দ আছে, এর মধ্যে জঘন্যতম অভিব্যক্তির একটা তালিকা যি করা হয়, তাহলে নিশ্চিতভাবে ‘মুনাফিক’ শব্দটা প্রথমদিকেই থাকবে। চোখ বন্ধ করে কল্পনা করার চিন্তা করি, কেউ যদি আমাকে ‘মুনাফিক কোথাকার!’ বলে, আমার কেমন অনুভূতি হয়! অথবা আমি যদি কাউকে ‘মুনাফিক’ বলে সম্বোধন করি, তাহলে কী বিপুল তেজ ও ক্রোধ নিয়ে সে আমার দিকে তেড়ে আসবে? এর কারণ কী? কারণ হলো, মুনাফিকি একটি ঘৃণিত চরিত্র, গর্ব করার মতো কোনো বিষয় নয়।
বই: বৃষ্টিমুখর রৌদ্রমুখর
লেখক: আব্দুল্লাহ মাহমুদ নজীব
মুদ্রিত মূল্য: ৩৪৫৳
বিক্রয় মূল্য: ২৫৯৳
অর্ডার করতে ইনবক্স করুন
অথবা
ফোন করুনঃ 01844-218944