ইসলামী বইয়ের অঙ্গনে কোন বিষয়ে কম কাজ হয় বলে মনে করেন?

একদমই নিজস্ব পার্সপেক্টিভ অনুসারে আমার মনে হয়, ইসলামি বইয়ের অঙ্গনে সবথেকে কম যে বিষয় বা জনরা নিয়ে কাজ হয়, সেটা হচ্ছে ‘উপন্যাস’। কিংবা যতটুকুই হয়, তার ম্যাক্সিমামই আসে দ্বীনি কমিউনিটিকে পাঠক ফোকাসে রেখে! আরেকটু ভালো করে যদি বলি, ফিকশনাল জগতকে যোগ্যহাতে ঘুরিয়ে দেওয়ার স্বপ্ন বা মানসিকতা আমাদের নেই বললেই চলে। আর, এই ফাঁকফোকড়েই রগরগে অশ্লীলতাকে ‘উপন্যাস’ নামে খুব সুন্দরভাবে চালিয়ে দেওয়া কিতাবাদীও সাম্প্রতিক সময়ের একটা বড় অংশের পাঠককে ঘায়েল করে ফেলেছে।

সেই শরৎবাবুর শ্রীকান্ত থেকে নিমাই ভট্টাচার্যের মেমসাহেব! টিপিক্যাল সাহিত্য বলতে আমাদের চোখে যা ভাসে আরকি! সেখান থেকেই নিষিদ্ধ বিষয়গুলোকে জেনারালাইজ করার চেষ্টা চলে আসছে অতি সূক্ষ্মভাবে। হারামকে সবিস্তারে উস্কে দিয়ে অবাস্তব জগত আর ফ্যান্টাসিতে বুঁদ হয়ে থাকা- আলটিমেটলি এইগুলোই হয় এমনতরো উপন্যাসের সারবত্তা! উপন্যাস শব্দটাকে যে বৃত্তের মধ্যে আমরা সীমাবদ্ধ করে রেখেছি, সেই বৃত্তের বাইরে গিয়ে নিরেট বাস্তবতার নিরিখেও যে গোটা জীবনকেও তুলে আনা যায় কলমের ডগায়, আমাদের একটা বৃহৎশ্রেণীর পাঠককে আমরা তা বোঝানোর প্রয়াস নিবো না?
আমাদের সুলেখক আছেন, আছে জনপ্রিয় মাকতাবা! আজকাল ছোটগল্পগুলোও বেশ সাড়া ফেলছে পাঠকমহলে। এমনভাবেই উপন্যাসের দিকে সুনজর দিলে, নতুন করে পাঠককূলের পরিসর বিস্তৃত হওয়ার সম্ভাবনা প্রকট।
সেক্যুলারপাড়ার হররোজ রচিত সব অবাস্তবতাকে আমরা একহাতে নিতে পারি শুধুমাত্র নিজেদের অবস্থান পাকাপোক্ত করার মাধ্যমেই। তাই, উপন্যাসকে শুধু নির্দিষ্ট কিছু পাঠকের জন্য লিমিটেড না করে, সর্বশ্রেণীর উপভোগ্য করে তোলা যায়। উপন্যাস শুধু ভাব বহনকারী নয়, এখানে প্লট, চরিত্র, স্টোরি ফ্লো, এন্ডিং সবটাই সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। অসুস্থ সাহিত্যের ভীড়ে কলম চালিয়ে সুস্থ সাহিত্যকে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ অনেকটা যুদ্ধের মতো। এর জন্য দরকার এই জনরায় কিছু পোক্তহাত আর শক্ত কলমের। আমাদের পাঠককে যাতে সাহিত্য শেখার অজুহাতে সমসাময়িক কিংবা ঐতিহাসিক অশ্লীল উপন্যাসের দিকে ঝুঁকতে না হয়। সাহিত্যের বিপরীতে সাহিত্য হোক, কলমের বিপরীতে কলম।
ব্যক্তিজীবনে আমি এমন কিছু পাঠক দেখেছি, যারা উপন্যাস বলতে পাগল! নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে উপন্যাস নিয়ে বসে থাকার মতো ক্রেজি-রিডার। এমন পাঠককে আপনি দাওয়াহ’র উদ্দেশ্যে একটা আত্মশুদ্ধিমূলক বই দিলে, প্রথমেই নাক সিটকাবে। কারণ, তার পছন্দ গল্প, কাঠখোট্টা প্রবন্ধে তার পোষাবে না। ব্যাপারটা যদি সাইলোজিক্যালি চিন্তা করি, দাওয়াতের ক্ষেত্রেও কিন্তু একেকজন মানুষকে একেকভাবে হ্যান্ডেল করতে হয়, পড়ুয়া বানাতেও যার যার প্রেফারেন্সকে প্রায়োরিটি দিয়েই এগোতে হবে। এটাই হচ্ছে পয়েন্ট! বই এবং বিষয় পাঠক অনুসারে ভ্যারি করে। 
ঠিক এইজন্যই উপন্যাসের পরিসর এক্সটেনশনের দরকার অনেক। যাতে সাহিত্য শিখা হবে, বাস্তবতাও উঠে আসবে আর শেষটায় দেখিয়ে দিয়ে যাবে ইসলামী জীবনব্যবস্থার গুরুত্ব ঠিক কতোটা! ঠিক তেমনি যখন একটা দল ইসলামের ইতিহাসকে গৎবাঁধা একঘেয়ে রচনা বলে দূরে ঠেলে দেয়, তখন যদি গল্পের মোড়কে তাদের শেকড় চিনানো যায়, সেটাই বা কম কিসে? 
ব্যাপারটা এমন না যে, মৌলিক বা প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো বাদ দিয়ে আমাদের সাহিত্য নিয়ে বসে থাকতে হবে। জরুরত গুলো জরুরত; এখানে অগ্রাহ্যের কথা আসতেই পারে না। কথা হচ্ছে, বিপ্লব ঘটানোর জন্য আমাদের প্রত্যেকটা বিষয়, প্রত্যেকটা সেক্টরে কাজ করতে হবে। বাজারে একই ধরনের কন্টেন্টই আমরা বারবার আসতে দেখি! 
ইদানীং, রঙচঙে ফ্যান্টাসি দিয়ে ভরপুর বইগুলোরও হাজারখানেক ভালো রিভিউ দেখতে পাওয়া যায়, অথচ তুলনামূলক ভালো, প্রয়োজনীয় কিংবা ক্ল্যাসিক্যাল শাইখদের দরকারী আলোচনার বইগুলোরই মার্কেটিং কম। এই একঘেয়ে প্লাটফর্ম থেকে বের হয়ে, আমাদের নিজেদের কাজগুলোকে মডিফাই করতে সচেষ্ট থাকা উচিত। উপন্যাস সেক্টরটাকে নিয়ে সিরিয়াসলি কাজ করলে যদি আমরা আরো নির্দিষ্টসংখ্যক পাঠককে আকৃষ্ট করতে পারি, তবে মন্দ কোথায়?
দিনশেষে আমরা সবাই চাই একটা বিপ্লব হোক! সুস্থ সাহিত্যের বিপ্লব। দ্বীনের বিপ্লব। ইসলামের বিপ্লব।
আপনার কাছেও প্রশ্ন থাকলো, ইসলামী বইয়ের অঙ্গনে কোন বিষয়ে কম কাজ হয় বলে মনে করেন? এবং এই বিষয়টায় কেমন জোর দেওয়া উচিত? কেন উচিত?
সবার বিশ্লেষণধর্মী কমেন্ট চাই কিন্তু! -Mahira Isk
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?