আমাদের কথা

এমন কোনো মানুষ দেখেছেন যার জীবনে কোনো সমস্যা নেই? না, এমন কোনো মানুষ পৃথিবীতে আপনি খুঁজে পাবেন না। যার যার সমস্যা কেবল সে-ই জানে। যাকে আপনি আজ অফিসে খুব উৎফুল্ল আর হাসিখুশি দেখছেন, তিনি হয়তো অফিসে প্রবেশের পূর্বে দু’খানা টিস্যু চোখের পানিতে ভিজিয়ে রেখে এসেছেন, কিন্তু আপনি তা জানেন না। সুখ-শান্তি জীবনে সমস্যা থাকা না থাকার ওপর সর্বোতভাবে নির্ভর করে না; বরং তা অনেকাংশে নির্ভর করে সমস্যাকে আপনি কিভাবে দেখছেন, কিভাবে মোকাবেলা করছেন তার ওপর।

‘সবাই তো সুখি হতে চায়’ টাইপের কথাবার্তা শুনতে শুনতে আমরা দুনিয়ার জীবনের প্রকৃতিই ভুলে বসেছি। আমরা জীবনের এই দুনিয়ার ক্ষণিকের অংশকেই গোটা জীবন ধরে বসে আছি। তাই সুখ-আহ্লাদ সব এখানেই পূরণ করতে চাই। বস্তুগতভাবে সুখি হতে না পারলে ভাবি জীবনটাই ব্যর্থ হয়ে গেলো। অথচ আমরা আসল জীবনের যাত্রা শুরুই করিনি। পৃথিবীর ক্ষণিকের জীবনের লেনাদেনা সামগ্রিক জীবনের খুবই ক্ষুদ্র অংশ।

দুনিয়াতে সবচেয়ে অসুখী ব্যক্তিকে জান্নাতে একটু ঘুরিয়ে আনা হলে সে জীবনের সকল দুঃখের কথা ভুলে যাবে। দুনিয়ার সবচেয়ে সুখি ব্যক্তি ক্ষণকাল জাহান্নাম ঘুরিয়ে আনলে সে দুনিয়ার সব সুখের কথা ভুলে যাবে। তাই দুনিয়ার জীবনকেই সব প্রাপ্তির একমাত্র স্থান ভাবলে আমরা নিজেদেরকে প্রতারিত করব। সুখি হতে চাওয়ার উম্মাদনায় আমরা দুনিয়ার জীবনের প্রকৃতিই ভুলে গিয়েছি; ভুলে গেছি যে, দুনিয়াতে আমাদের আগমনই হোলো পরীক্ষা দিতে—লিয়াবলুয়াকুম আইয়্যুকুম আহসানু ‘আমালান—তোমাদের মধ্যে কে কর্মে উত্তম তা যাচাই করে নেওয়ার জন্য।

গোটা জীবনটাই একটা পরীক্ষার হল। যার যার (ঈমানের) ক্লাস অনুযায়ী তাকে প্রশ্নপত্র দেওয়া হচ্ছে। উদ্দেশ্য ফেইল করিয়ে দেওয়া নয়, পাশ করিয়ে আরও মর্যাদাবান করে তোলা।

মানুষ হিসেবে কেউই দুনিয়ার এই পরীক্ষা থেকে মুক্ত নয়—সে যে ধর্মেরই হোক কিংবা কোনো ধর্মেরই না হোক। কিন্তু এই আল্লাহর কাছে প্রতিদান কেবল মু’মিনরাই কামনা করতে পারতে পারে। “ইন তা’লামূনা, ফাইন্নাহুম ইয়া’লামূনা কামা তা’লামূন; ওয়া তারজুনা মিনাল্লাহি মা লা ইয়ারজূন—তোমরা (মু’মিনরা) যদি কষ্ট করে থাকো, তো তারা (কাফিররা)-ও তো কষ্ট করছে; তবে তোমরা আল্লাহর কাছ থেকে যা আশা করো তারা তা আশা করতে পারে না”।

তাই সকল সমস্যা থেকে মুক্ত জীবন আসমানের নিচে জমিনের উপরে পাওয়া যাবে না। কিন্তু অনেক সমস্যা থেকে মুক্ত জীবন পাওয়া যাবে। একটু ভেবে দেখুন, দুনিয়াতে মানুষের কত শত রকম সমস্যা রয়েছে। অথচ তার মধ্য থেকে অল্প ক’টি সমস্যাই আপনার জীবনে রয়েছে। অথচ আমাদের যে কৃতকর্ম, তাতে এইসব সমস্যার প্রতিটিই আপনার আমার জীবনে আসতে পারত। কিন্তু আল্লাহ সেগুলো থেকে দয়া করে আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছেন।

আজ যার দূরারোগ্য ব্যাধির কথা শুনেছেন, সেই ব্যক্তি আপনিও হতে পারতেন; যার সন্তানের মৃত্যুসংবাদ শুনেছেন সেই সন্তান হারানো ব্যক্তি আপনিও হতে পারতেন; রোড এক্সিডেন্টে আজ যে লোকদের হতাহতের সংবাদ শুনেছেন আপনি সেই ব্যক্তি হতে পারতেন। মানুষের এমন যত সমস্যার কথা আমরা প্রতিনিয়ত শুনি তার সবগুলোও যদি আমাদের জীবনে আসত তাহলেই বা আমরা কী করতে পারতাম! কিন্তু আল্লাহ আমাদের সামর্থ্যের বাইরে কোনো কিছু আমাদের ওপর চাপিয়ে দেন না। তাই হাজারো প্রকার সমস্যার মধ্য থেকে মাত্র দু’চার প্রকার সমস্যা আপনাকে দিয়েছেন; বাকি হাজারো প্রকার সমস্যা থেকে আপনাকে হেফাজত করে রেখেছেন। দু-চার প্রকার সমস্যা নিয়ে আমাদের অভিযোগের অন্ত নেই, অথচ যে হাজারো প্রকার সমস্যা থেকে আল্লাহ আমাদের প্রতিনিয়ত হেফাজত করে রেখেছেন তা নিয়ে কোনো কৃতজ্ঞতা বোধ নেই।

মনে রাখবেন, আপনার জীবনে সুখ-শান্তির দেখা আপনি সেদিনই পাবেন, যেদিন আপনার জীবনে আসা সমস্যাগুলো সম্পর্কে অভিযোগ না করে উত্তমভাবে ধৈর্য ধারণ শুরু করবেন, আর যে হাজারো সমস্যা আপনার জীবনে আপতিত হওয়া সম্ভব ছিলো কিন্তু আল্লাহ বাঁচিয়ে দিয়েছেন সেগুলোর কারণে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাবেন।

এটাই সুখ-শান্তির একমাত্র সুত্র। এখন এটা আপনার সিদ্ধান্ত আপনি অর্জন করবেন না হেলায় হারাবেন।

সিয়ান | বিশুদ্ধ জ্ঞান | বিশ্বমান