মা,উপন্যাস এর সংক্ষিপ্ত বিবরণঃ
মা উপন্যাসের পুড়ো রিভিউটি পড়ুন______
মা- ম্যাক্সিম গোর্কি
ম্যাক্সিম গোর্কির কালজয়ী অসাধারণ উপন্যাস ‘মা’ দুনিয়াজুড়ে সর্বাধিক পঠিত, সবচেয়ে বেশি আলোচিত- এ কথা সকলেই স্বীকার করবে। পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে, যারাই বিপ্লবী শ্রমিক আন্দোলন করবার চিন্তা করছে, সমাজের বৈপ্লবিক পরিবর্তনে শ্রমিক শ্রেণির সচেতন সংঘবদ্ধ নেতৃত্বকারী ভূমিকা প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছে, তাদের কাছে ‘মা’ অবশ্যপাঠ্য উপন্যাস হয়ে উঠেছে। এখনো এ পাঠ থেমে নেই।
প্রায় শতাব্দীকাল জুড়ে পৃথিবীতে কোনো উপন্যাসের এতটা প্রভাবের দ্বিতীয় কোনো তুলনা আছে বলে আমার জানা নেই। জার শাসিত রাশিয়ায় সাধারণ মানুষের কোনো অধিকারই ছিল না। জার সরকারের বিরুদ্ধে রাশিয়ার সকল স্তরের মানুষের বিক্ষুব্ধ আন্দোলনে শরিক হয়েছিলেন মাক্সিম গোর্কির মতো সমাজসচেতন লেখক-বুদ্ধিজীবীরাও।
এই আন্দোলনের পটভূমিতেই গোর্কি সৃষ্টি করেছিলেন তাঁর অন্যতম মহৎ উপন্যাস ‘মা’। সারা পৃথিবীর কোটি কোটি শোষিত, বঞ্চিত মানুষের মুক্তির লড়াইতে অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে বিবেচিত হয়ে এসেছে ‘মা’ উপন্যাস। অনেক জরিপের ফলাফল অনুসারে পৃথিবীর সর্বাধিক পঠিত ও বিক্রীত উপন্যাসের নাম ‘মা’। ১৯০৬-০৭ সালে রচিত হয় এই উপন্যাসটি। মাক্সিম গোর্কিই পৃথিবীতে প্রথম লেখক, যিনি সমাজের বৈপ্লবিক পরিবর্তনের জন্য পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিপ্লবী শ্রমিকদের সংগ্রামের চিত্র অঙ্কন করেছেন। আর এই চিত্র ধারণ করে, পৃথিবীতে এই ধারার প্রথম উপন্যাস হিসেবে চিহ্নিত হয়ে রয়েছে ‘মা’।
প্রচলিত ধারণা হচ্ছে, সমাজ বা পৃথিবীর যত পরিবর্তন সাধিত হয়, তার নেতৃত্ব দান করেন অগ্রসর চিন্তা ও ব্যক্তিত্বের অধিকারী কিছু মানুষ। এরাই ইতিহাসের বীর। ইতিহাসে এই মানুষগুলোই বীর বা নায়ক হিসেবে পূজিত হয়ে থাকেন। গোর্কি এই ধারণার বিপক্ষে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দিলেন যে বীর বলে আলাদা কিছু নেই। সাধারণ মানুষই ইতিহাস নির্মাণ করে এবং সাধারণ মানুষরাই ইতিহাসের বাঁক পরিবর্তন করে। বিশেষ পরিস্থিতি এবং প্রয়োজনের কারণে মানবসমাজে যে রূপান্তর সাধিত হয়, সেই রূপান্তরের মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষই পরিবর্তিত হয়ে যায় অসাধারণ মানুষে। যেমন, ‘মা’ উপন্যাসের মা ও তার ছেলে পাভেল।
এই উপন্যাসের প্রধান চরিত্র মা-কে বিপ্লবী মা হয়ে ওঠার জন্য আলাদা কোনো পরিপ্রেক্ষিত নির্মাণের প্রয়োজন হয়নি। সাধারণ একজন মা-ই হয়ে উঠেছিলেন অসাধারণ। নিতান্তই সাধারণ একজন গৃহিণী ছিলেন তিনি। স্বামী বেঁচে থাকতে সবসময় ভয়ে ভয়ে থাকতেন। কারণ তার সঙ্গে কোনোদিনই মানবিক ব্যবহার করেনি স্বামী। ইচ্ছামতো মারধর করেছে, গালমন্দ করেছে। সেই জীবনকেই স্বাভাবিক জীবন হিসেবে ধরে নিয়ে তিনিও তদানীন্তন কোটি কোটি রুশ রমণীর মতো নিজের জীবনকে কাটিয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কিন্তু তাকে অন্য রকম হয়ে উঠতে হলো। হলো ছেলে পাভেলের কারণে, আসন্ন রুশ বিপ্লবের অগ্নিগর্ভ সময়ের কারণে।
সাধারণ একজন মা থেকে বিশ্ববিপ্লবের মা হয়ে ওঠার যে বিবর্তন-চিহ্ন, সেই বিবর্তনই আসলে এই উপন্যাসের বিষয়বস্তু। কেমন ছিলেন মা? কেমন ছিল মায়ের চেহারা? কোন ধারণাটি ফুটে উঠত মায়ের মুখের দিকে একবার মনোযোগের সঙ্গে তাকালে? ছেলে পাভেল যেদিন প্রথম পরিপূর্ণভাবে মায়ের দিকে দৃষ্টি দিয়েছিল, সেই বর্ণনাতেই পুরোপুরি ধরা পড়ে মায়ের অবয়ব এবং সকল বৈশিষ্ট্যই। পাভেলের মনে পড়ল ‘বাবা বেঁচে থাকতে সারা বাড়ির মধ্যে মাকে যেন কোথাও দেখাই যেত না। মুখে একটিও কথা ছিল না, স্বামীর মারের ভয়ে সর্বক্ষণ যেন কাঁটা হয়ে থাকত।’
মায়ের দিকে পরিপূর্ণ মমতার সঙ্গে তাকিয়ে পাভেলের বুকটা মোচড় দিয়ে উঠেছিল। কারণ সে মায়ের মধ্যে দেখতে পেয়েছিল একটা করুণ অসহায় প্রতিমূর্তি। ‘লম্বা দেহটা সামনের দিকে ঝুঁকে পড়েছে খানিকটা; হাড়ভাঙা খাটুনি আর স্বামীর ঠ্যাঙানিতে শরীরটা গেছে ভেঙে। একেবারে নিঃশব্দে চলাফেরা নড়াচড়া করে একপাশে একটু কাত হয়ে, যেন সর্বদাই কিসের সঙ্গে ধাক্কা খাবে এমন একটা ভয়। চওড়া লম্বাটে ফোলা ফোলা কোঁচকানো মুখ। তাতে জ্বলজ্বল করছে একজোড়া ঘন ভীরু আর্ত চোখ, বস্তির আর দশটা মেয়ের মতোই। ডান ভুরুর ওপর দিকে একটা গভীর কাটা দাগ থাকায় ভুরুটা একটু ওপর দিকে টানা। মনে হয় ডান কানটাও বাঁ কান থেকে কিছু ওপরে। এর ফলে সর্বদাই যেন উদ্বেগের সঙ্গে কানখাড়া করে আছে এমনই একটা ভাব মুখে।’ সেই মা-এর বদল শুরু হয়।
ছেলে পাভেলের বদলের সঙ্গে সঙ্গে। কারখানা বস্তির অন্য সব তরুণের মতো শুরুর দিকে পাভেলও একই রকম জীবনযাপনে অগ্রসর হয়। এমনকি রোববার রাতে ভদকা খেয়ে মাতাল হয়ে বাড়ি ফেরাও বাদ যায় না। কিন্তু যেকোনোভাবেই হোক, বিপ্লবী গোপন রাজনীতির সঙ্গে যোগাযোগের ফলে আমূল বদলে যায় পাভেলের জীবনযাপন। পরিবর্তিত হয়ে যায় তার মুখের ভাষাও। কারখানা বস্তিতে নিজেদের মাকে সম্মান দিয়ে কথা বলে না কোনো যুবক। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হয়ে ওঠে পাভেল। মায়ের সঙ্গে কথা বলে বিনম্র ভাষায়। এমনকি বস্তির কেউ যা কল্পনাও করতে পারে না, সেই ঘটনাও ঘটে এই ঘরে। ছেলে কারখানার কাজ সেরে এসে ঘরের কাজে মাকে সাহায্যের জন্য হাত লাগায়। নিজেই ঘর ঝাঁট দেয়, নিজের বিছানা নিজেই গুছিয়ে রাখে। আর কাজের পরে বাইরে না বেরিয়ে ঘরে বসে বসে বই পড়ে। মা সব পরিবর্তনই খেয়াল করে।
খেয়াল করে যে ‘ছেলের মুখখানা দিনে দিনে ধারালো হয়ে উঠছে, চোখ দুটির গাম্ভীর্য বাড়ছে, আর ঠোঁট দুটি যেন একটি কঠিন রেখায় আশ্চর্য সংবদ্ধ।’ ছেলে যে অন্যদের চেয়ে অন্যরকম, তা নিয়ে মায়ের খুশি এবং কৃতজ্ঞতার সীমা-পরিসীমা নেই। কিন্তু ছেলে যে অন্যরকম কিছু কাজকর্মের সঙ্গে জড়িত, এটা জানার পরে মা ভয় পেয়ে যায়। সেই ভয় চরমে ওঠে যখন জানতে পারে যে ছেলে যেসব বই পড়ে সেগুলো নিষিদ্ধ বই, যাদের সঙ্গে ওঠাবসা করে তারা সবাই পুলিশের চোখে সন্দেহভাজন ও বিপজ্জনক, যে গোপন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত সেই সংগঠনকে উচ্ছেদ করার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করে রেখেছে জারের পুলিশবাহিনী। সব মা-ই এই সময় যা করে, ছেলেকে এমন কাজ থেকে বিরত থাকতে বলা, এই উপন্যাসের মা সেই কাজটি করেননি। কারণ, মনে হয়েছিল, মনে হওয়ার পেছনে যথেষ্ট বাস্তব কারণও ছিল, যে—তার ছেলে কোনো খারাপ কাজ করতে পারে না।
ছেলের কাজ দেখতে দেখতে একসময় মা নিজের অজান্তেই ছেলের কাজের সহযোগী হয়ে দাঁড়ায়। তার সম্পৃক্তির সূত্রপাতও ঘটে খুব সাধারণভাবে। তাদের বাড়িতে একদিন বৈঠকে বসে পাভেল ও তার সহযোদ্ধারা। সেই প্রথম মা দেখা ও চেনার সুযোগ পায় পাভেলের সহযোগীদের। আন্দ্রেই ও নাতাশা বাইরের শহর থেকে আসে। আর অন্যরা মায়ের আগে থেকেই চেনা। দাগি চোর দানিলার ছেলে নিকলাই, কারখানার পুরোনো কর্মী সিজভ-এর ভাইপো ফিওদর এবং কারখানার আরো দুজন পরিচিত শ্রমিক। তারপরে একের পর এক বৈঠক হতে থাকে তাদের ঘরে। আসতে থাকে সাশা, ইয়াকফ সোমভ, মাজিন, ইভান বুকিন, রীবিন, আরো অনেকে। তাদের খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করে মা। চেষ্টা করে তাদের আলোচনার বিষয়বস্তুগুলো ভালোভাবে অনুধাবন করতে। তারপর স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছায় যে এরা খারাপ কোনো কিছু করছে না।
এদের আলোচনা থেকে সাধারণ মানুষের যে অবস্থার কথা বেরিয়ে আসে, নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই সেগুলোকে সত্যি বলে বুঝতে পারে মা। এটাও বুঝতে পারে যে এই অবস্থা পাল্টানোর জন্য ওরা যে সংগ্রামের পথ ধরছে, সেই সংগ্রামেরও কোনো বিকল্প নেই। কোনো কোনো বিষয়ে একটু দ্বিমতও যে তার তৈরি হয় না, তা নয়। যেমন ধর্ম এবং ভগবান প্রসঙ্গে। যখন ওদের আলোচনা থেকে এমন মতামত বেরিয়ে আসে যে ‘ধর্মটর্ম মিথ্যে’, তখন মা কথা না বলে পারে না। দৃঢ়তার সঙ্গেই প্রতিবাদ করে—‘দ্যাখো ভগবান নিয়ে ও কথাগুলো একটু রয়েসয়ে বলো তোমরা… তোমাদের মনে যা খুশি থাক, কিন্তু আমার কথা ভেবো একবার। আমি বুড়োমানুষ। আমার দুঃখের মধ্যে ওইটুকুই তো ভরসা। ভগবানকে তোমরা আমার কাছ থেকে কেড়ে নিলে কোথায় দাঁড়াব আমি বলো তো?’ মায়ের এই অনুভূতিকে কেউ হেসে উড়িয়ে দেয়নি। বরং পাভেল আশ্বস্ত করেছে তাকে এই বলে যে, ‘তুমি যে দয়ালু ভগবানে বিশ্বাস করো তার কথা বলিনি আমি। বলেছি আমাদের ধর্মের পাণ্ডা-পুরুতরা যে রাক্ষুসে ভগবানকে খাড়া করেছে তার কথা।
তাতেও বিচলিতভাব কাটেনি মায়ের। বলেছে—‘ওসব শোনার মতো শক্তি আমার নেই।’এই নিয়ে আর কথা চালাতে না চাইলেও ধীরস্থির গম্ভীর রীবিন পাঠচক্রের অন্যদের মনে করিয়ে দিয়েছে যে, ‘পবিত্র স্থান কখনো শূন্য থাকে না। ভগবানের যেখানে আসন, সেই জায়গাটা ক্ষতবিক্ষত। মানুষের হৃদয়ে ওটা ভারি ব্যথার জায়গা। ভগবানকে যদি বিলকুল বার করে দাও, তবে দগদগে ঘা হয়ে থাকবে ওখানটায়।’ এই বিষয়ের নিষ্পত্তি হয়নি। কারণ—নিষ্পত্তি সম্ভবও নয়। কিন্তু তারপরেও মা অনুভব করেন যে, ওরা যে কাজটি করছে সেই কাজটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাশিয়ার মানুষকে বাঁচাতে হলে, মুক্তি দিতে হলে এই পথের কোনো বিকল্প নেই। আর এই বিপ্লবীদের নিয়ে চিন্তা করতে বসে তাদের মহত্ত্বে অভিভূত হয়ে পড়েন মা।
নিজেকে বিশ্লেষণ করে মা বুঝতে পারেন যে, ‘আমরা শুধু ভালোবাসি নিজেদের যতটুকু দরকার, তার ওপরে যেতে পারিনে।… যেসব ছেলে জেলে পচছে, সাইবেরিয়ায় যাচ্ছে, কেন? না, দুনিয়ার মানুষের জন্য… জান দিচ্ছে সব। কচি কচি মেয়েগুলো হিমের রাত্তিরে জল-কাদা-বরফ ভেঙে ক্রোশের পর ক্রোশ একলা হেঁটে শহর থেকে এখানে আসছে… কেন? কেন এত কষ্ট সয় ওরা? কে এসব করায় ওদের? না, ওদের বুকের ভেতর আছে খাঁটি ভালোবাসা।’ নিজেকে তাদের তুলনায় নিতান্ত ক্ষুদ্র মনে হয় তার। তুচ্ছ মনে হয়। কিন্তু আন্দ্রেই তাকে মনে করিয়ে দেয় যে, মা যে ভূমিকা পালন করছেন সেটিও গুরুত্বপূর্ণ, সেটিও প্রয়োজনীয়। কারণ, তার ভাষায়—‘আমরা সবাই বৃষ্টির মতো। বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটা ফসল ফলাবার কাজে লাগে’। যথারীতি তাদের বাড়িতে পুলিশের হামলা হয়। খানাতল্লাশি চলে গভীর রাতে। গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হয় আন্দ্রেইকে। যে মায়ের অত্যন্ত প্রিয়পাত্র। তারপর একের পর এক ঘটতে থাকে ঘটনা। পাভেলও গ্রেপ্তার হয় একপর্যায়ে।
সে সময় ছেলের কিছু কিছু কাজের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেয় মা। তার মধ্যে একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে পুলিশবাহিনীর রক্তচক্ষু এড়িয়ে নিষিদ্ধ পত্রিকা কারখানার মধ্যে নিয়ে শ্রমিকদের মাঝে বিলি করা। আর এসব করতে করতে নিজের অজান্তে, দলের সকলেরই অজান্তে মা শুধু আর মা থাকেন না, হয়ে ওঠেন কমরেড। পাভেল দীর্ঘমেয়াদে জেলে চলে যাওয়ায় সংগঠনের সিদ্ধান্ত অনুসারে মা এসে ওঠেন শহরে নিকলাই ইভানভিচের বাড়িতে। নিকলাই ইভানভিচের প্রতিও মায়ের স্নেহ এবং মুগ্ধতা পরিচয়ের প্রথম দিন থেকেই। মা আগেই খেয়াল করেছিলেন যে, ‘সব দিক থেকে ওর জুড়ি নেই। কখনো বড় কিছু নিয়ে কথা কয় না। বাড়িঘর, বাচ্চাকাচ্চা, রুটি-মাংসের দর, ব্যবসা-বাণিজ্য, থানা-পুলিশ— এইসব অর্থাৎ আটপৌরে জীবনের বেসাতি ওর বিষয়বস্তু।
কিন্তু ওর কথায় লোকের কৃত্রিমতা, গলদ, স্থূলতা, মাঝেমধ্যে তাদের হাস্যাস্পদতা, আর সবকিছুতে তাদের ত্রুটি পরিষ্কার হয়ে যায়।’ নিকলাই পাভেল বা আন্দ্রেইয়ের মতো শ্রমিক শ্রেণির মানুষ নয়। আবার রীবিনের মতো চাষিও নয়। সে শিক্ষিত বড় ঘরের সন্তান। সরকারি চাকুরে। তবু সে এই বিপ্লবের কাজে যোগ দিয়েছে কেন? কারণ খুঁজতে গিয়ে মায়ের মনে হয়েছে যে নিকলাই ইভানভিচ ‘যেন বহুদূরের একটা আলাদা জগতের মানুষ। সেখানে সবাই সাচ্চা মানুষ; সাচ্চা সহজ তাদের জীবন। এখানকার সবকিছুই যেন ওর কাছে নতুন। না পারছে এখানকার জীবনকে মেনে নিতে, না পারছে তার সঙ্গে নিজেকে খাপ খাওয়াতে। ওর রুচিতে বাধছে। আর বাধছে বলেই এই অবস্থাটা বদলানোর জন্য ওর এই একনিষ্ঠ চাঞ্চল্যহীন শান্ত গভীর পণ।’ নিকলাইয়ের বাড়িতে আসার পরে মা সার্বক্ষণিক সংগঠনের কর্মী হয়ে যান। নিজের অজান্তেই মানসিক বিবর্তনের চূড়ান্ত ধাপে গিয়ে পৌঁছায়। প্রধান কাজ তার বিভিন্ন প্রদেশে বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে চাষি-মজুরদের কাছে সংগঠনের পত্রিকা পৌঁছে দিয়ে আসা। নিষিদ্ধ পত্রিকা। তাতে সত্য কথা লেখা থাকে বলেই তা নিষিদ্ধ। খুবই বিপজ্জনক কাজ। কিন্তু মা সেই কাজ করে চলেন দ্বিধাহীন সাহসিকতার সঙ্গে। খুবই ব্যস্ত থাকতে হয় তাকে।
‘মাসের মধ্যে বারকয় বেশ বদলে, কখনো সন্ন্যাসিনী, কখনো লেস আর কাটা কাপড়ের ফিরিওয়ালি, কখনো সংগতিসম্পন্ন নাগরিকা বা মুসাফির সেজে, ঝোলাকাঁধে নয়তো স্যুটকেস হাতে, প্রদেশটা চক্কর দিয়ে আসে। ট্রেনে, জাহাজে, হোটেলে, সরাইখানায় যেখানেই যাক, সেই শান্ত-শিষ্ট সহজ-সরল মিশুক মানুষটি।’ এইভাবে কাজ করতে করতে নিজের চোখও বেশি করে খুলতে থাকে তার। এইভাবে ঘুরে বেড়ানো আর আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে ‘মানুষের ব্যস্তসমস্ত উদ্বিগ্ন জীবন ক্রমশ বিস্তারিত বিচিত্র রূপে উদ্ঘাটিত হতে লাগল তার সামনে। সর্বত্র পরিষ্কারভাবে দেখতে লাগল মানুষকে বোকা বানিয়ে রাখা, লুট করা, লাভের জন্য তার যা-কিছু সম্ভব শুষে নেওয়া, তার রক্ত পান করার রূঢ় অনাবৃত নির্লজ্জ লিপ্সা। মা দ্যাখে সংসারে কিছুর অভাব নেই, তবু দুনিয়ার অজস্র ধনসম্ভারের সামনে জনগণ অনশনে ধুঁকে ধুঁকে জীবন কাটায়। শহরের গির্জায় গির্জায় কী অঢেল ঐশ্বর্য!
সোনা রুপো দুহাতে ছড়ানো—তার এককণারও দরকার নেই ভগবানের, অথচ সেই গির্জারই দরজায় অর্ধ-উলঙ্গ ভিখারির দল অবহেলায় ছুড়ে দেওয়া একটা ছোট্ট তামার পয়সার জন্য শীতে কাঁপতে কাঁপতে হাত পেতে দাঁড়িয়ে থাকে।… যিশুখ্রিস্ট দীনদুখিরই বন্ধু। অতি সাধারণ বেশ তিনি পরতেন। কিন্তু গির্জায় গির্জায় সেই খ্রিস্টেরই মূর্তি সোনা-জহরত সিল্ক-সাটিনে মোড়া। শান্তির আশায় ভিক্ষুকের দল সেই দেবতার দুয়ারে যখন এসে দাঁড়ায়, সেই সিল্ক ঘৃণাভরে খসখস করে। আপনা থেকেই রীবিনের কথা মনে পড়ে—দেবতার নামেও ব্যাটারা আমাদের ঠকিয়েছে!’ মা খুশির সঙ্গে লক্ষ করেন, মানুষ এখন প্রশ্ন করতে শুরু করেছে। একেবারে মৌলিক সব প্রশ্ন। চারদিকে এত অঢেল খাবার, তবু কোটি কোটি মানুষ খেতে পায় না কেন? চারদিকে এত বুদ্ধির দীপ্তি, তবে কেন ওরা এত মূর্খ? মা অনুভব করতে পারেন যে এই প্রশ্নই মানুষকে এনে দেবে তার কাঙ্ক্ষিত মুক্তি।
উপন্যাসের শেষ অংশে বাস্তবের সঙ্গে সংগতি রাখার জন্য অনিবার্যভাবেই পুলিশের হাতে ধরা পড়তে হয় মাকেও। কিন্তু এই মা তো ততদিনে অন্য মানুষ। ধরা পড়তে পড়তেও নিজের আরদ্ধ কাজ শেষ করার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বিন্দুমাত্র ভীত নয় পুলিশের চোখরাঙানিতে। কারণ ততদিনে তিনি জেনে গেছেন যে ‘যে আত্মার নতুন করে জন্ম হয়েছে’, তাকে মারতে পারবে না কেউ-ই।
উপন্যাসের মা চরিত্র লেখকের এক অবিস্মরণীয় সৃষ্টি। সাধারণ এক নারী থেকে মা-এর এই অনন্য উত্তরণ বা বিবর্তন পাঠকের কাছে মোটেই অবিশ্বাস্য মনে হয় না। তার কারণ মা-এর বুকভর্তি ভালোবাসার পরিচয় পাঠক ক্ষণে ক্ষণেই উপলব্ধি করতে পারেন। সেই ভালোবাসাই মাকে রক্ত-মাংসের জীবন্ত চরিত্র রূপে পাঠকের সামনে হাজির করে। সেই ভালোবাসা প্রথমে কেন্দ্রীভূত ছেলে পাভেলের প্রতি, তারপরে সেটি পরিব্যাপ্ত হয় পাভেলের সঙ্গী-সহযোদ্ধাদের প্রতি, তারপর তাদের সংগঠনের প্রতি এবং সবশেষে দেশের প্রতিটি নির্যাতিত মানুষের প্রতি। মা চরিত্রের পাশাপাশি উপন্যাসের অন্য উজ্জ্বল চরিত্রের মধ্যে রয়েছে পাভেল। উপন্যাসে তার প্রত্যক্ষ উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে কম। কিন্তু ব্যাপ্তি সেই তুলনায় অনেক বেশি। সে কারান্তরালে যাওয়ার সময় যেন নিজেকে সরিয়ে নিয়ে যায় উপন্যাসের পাতা থেকে। কিন্তু পুরো উপন্যাস আবর্তিত হয় তাকে ঘিরেই। তাই যখন আবির্ভূত হয়, তখন সেই পূর্ণ জ্যোতি-বিচ্ছুরিত চরিত্র নিয়েই আবির্ভূত হয়।
দরিদ্র-কারখানা মজুরের ছেলে পাভেল, যার জীবন হওয়ার কথা ছিল কারখানা-বস্তির অন্য তরুণদের মতোই। তাদের বস্তিতে ‘রোকবারগুলোয় ছোকরারা অনেক রাত্তিরে বাড়ি ফেরে ছেঁড়া কাপড়ে, সর্বাঙ্গে ধুলো-কাদা মাখা, কালশিটে-পড়া চোখ, জখমি নাক; কখনো আবার বন্ধুদের ঠেঙিয়ে এসে বিদ্বেষের সঙ্গে আস্ফালন করে, আর নয়তো গুঁতোনি খেয়ে কাঁদতে কাঁদতে আসে’। বাপ মারা যাওয়ার দুই সপ্তাহ পরে পাভেলও সেই রকম ভোদকা খেয়ে পুরোপুরি মাতাল অবস্থায় বাড়িতে আসে, মায়ের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। তারপরেও কিছুদিন যাবত পাভেলের চালচলনও অন্য অল্পবয়সী ছোকরাদের মতোই থাকে। বেতনের টাকা পেয়ে একটা অ্যাকর্ডিয়ন কিনে এনেছে, এনেছে কড়া ইস্ত্রির খড়খড়ে শার্ট, জমকালো টাই, গালস, ছড়ি—ফুলবাবু সাজার সব উপকরণ।
মা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেনে নিয়েছিল নিজের ভবিতব্য। এখানে সব পুরুষ যেমন অমানবিক হয়ে ওঠে, তার ছেলেও তেমনই হবে, এ আর নতুন কী! কিন্তু সেই অবিশ্বাস্য নতুন ঘটনাটাই ঘটে পাভেলের জীবনে। কোনো এক সোনার কাঠির স্পর্শে আমূল বদলে যেতে থাকে পাভেল। ফুলবাবু সাজার খরচ কমতে থাকে, বাড়তে থাকে ঘরের তাকে বইয়ের সংখ্যা। বাদবাকি মাইনের টাকা পুরোটাই তুলে দেয় মায়ের হাতে। মায়ের সঙ্গে কথা বলার ভাষাও বদলে গেছে আমূল। এমন সম্মান এবং ভালোবাসা মিশিয়ে মায়ের সঙ্গে কথা বলে না কারখানা-বস্তির কোনো ছেলে। মায়ের অতীত জীবনের দুঃখের প্রতি সহানুভূতি জানায় না কোনো ছেলে। একা পাভেলই সেটা করে।এইভাবে আমূল বদলে যায় পাভেল, কারণ তার সে শুনতে পেয়েছে বিপ্লবের ডাক। সে দ্বিধাহীন কণ্ঠে বলতে পারে—‘শুধু একপেট খেতে পাওয়াটাই আমাদের সব নয়।
যারা আমাদের ঘাড়ের ওপর চেপে বসে আছে, আমাদের চোখে ঠুলি এঁটে রেখেছে, তাদের দেখাতে হবে আমরা সব দেখতে পাচ্ছি।’ তাই পাভেলের কাছে সবচাইতে বড় হয়ে ওঠে পার্টি এবং বিপ্লব। সেই বিপ্লবী কাজে ব্যাঘাত ঘটবে বলে সে এমনকি সাশার প্রেমকেও গ্রহণ করতে রাজি নয়। জেলে যেতে হয় তাকে। সহযোদ্ধারা তার জেল-পালানোর সম্পূর্ণ বন্দোবস্ত করলেও সে তাতে রাজি হয় না। কারণ তার কাছে মনে হয়েছে যে জেল পালানোর চাইতে বিচারের আদালতে হাজির হয়ে নিজের বক্তব্য তুলে ধরলে তা মানুষের কাছে পৌঁছুবে বেশি করে, তাতে বরং বিপ্লবের প্রতি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষিত হবে বেশি। ফলে সে বিচার নামের প্রহসনের সম্মুখীন হয়, এবং অনিবার্যভাবেই তাকে সাইবেরিয়ায় যেতে হয় নির্বাসনের দণ্ড মাথায় নিয়ে। আদর্শের উজ্জ্বলতায় ঝলমলে চরিত্র পাভেলের। কিন্তু যতটা আইডিয়ালিস্টিত, ততটা যেন রক্ত-মাংসের নয়। তারপরেও পাভেল চরিত্রটি বিপ্লবের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ জ্বালিয়েছে বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি তরুণের বুকে।
এবার লেখোকের কথায় আসি
উনিশ শতকে যে কয়েকজন হাতেগোনা সাহিত্যিক— বিশ্বসাহিত্যে ঝড় তোলেন, ম্যাক্সিম গোর্কি তাঁদের মধ্যে অন্যতম। সাহিত্যপ্রেমীরা ম্যাক্সিম গোর্কির নাম শোনেনি এমন কথা বিরল। ম্যাক্সিম গোর্কি ১৮৬৮ সালের ২৮ মার্চ মধ্য রাশিয়ার ভোলগা নদীর তীরে অবস্থিত নিঝনি নভগরদ শহরের গরীব এক অস্ত্র তৈরির কারিগরের ঘরে জন্ম গ্রহণ করেন৷বাবা ম্যাক্সিম সাভভাতেভিচ পেশকভ ও মা ভার্ভারা ভাসিলিয়েভনা পেশকভা৷ তাঁর প্রকৃত নাম এলেক্সেই ম্যাক্সিমভিচ পেশকভ৷ ছদ্মনাম ম্যাক্সিম গোর্কি৷গোর্কি শব্দের অর্থ তিক্ত বা তেতো কটুস্বাদযুক্ত৷তাঁর পিতা ছিলেন ঠোঁট কাটা স্বভাবের,তাই সমাজের লোকেরা তাকে নাম দিয়েছিল গোর্কি৷কিন্তু ম্যাক্সিম গোর্কি ছিলেন অত্যন্ত বিনয়ী৷তবে,তিনি তাঁর লেখায় কখনো আপোষ করেননি৷সত্যের উপড় কখনো রং চড়াননি৷তাই ম্যাক্সিম গোর্কি তাঁর অনন্য সাধারণ রচনার গূণে সময়কালের গন্ডী পেরিয়ে আজো বিশ্ব সাহিত্যাঙ্গণে অমর হয়ে আছেন৷
এক কথায় তাঁর পরিচয় বলতে গেলে ম্যাক্সিম গোর্কি নামটিই একটা বিশাল উপন্যাস৷১৮৯২-এর ১২ সেপ্টেম্বর রাশিয়ার ৎবিলিসি শহর থেকে প্রকাশিত কাফ্কাজ্ পত্রিকায় তাঁর ‘মাকার চুদ্রা’ গল্পটি বেরোয় এই ম্যাক্সিম গোর্কি নামেই। সেই থেকে দুনিয়াজুড়ে ম্যাক্সিম গোর্কি নামের চিরস্থায়ী হওয়ার শুরু। রুশ বিপ্লবের প্রতি আন্তরিক সমর্থন থাকলেও বিপ্লব-পরবর্তী সরকারের সব কর্মকাণ্ড নির্দ্বিধায় মেনে নেননি গোর্কি। পত্রিকার কলামে বলশেভিকদের নানান বিষয়ে দ্বিমত জানিয়ে লিখেছেন কলাম। তাঁর সেই সব আক্রমণাত্মক নিবন্ধ পড়ে জোসেফ স্তালিনের মন্তব্য ছিল, যদি গোর্কি বিপ্লবের পথ পরিহার করেন, তবে তিনি নিক্ষিপ্ত হবেন বিস্মৃতির গর্ভে। কিন্তু ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ বরাবরই অটুট ছিল তাঁর।
লেনিনের কাছে একাধিক ঘটনার প্রতিকার চেয়ে গোর্কি একের পর এক চিঠিও লিখেছিলেন তখন। কখনো কোনো তরুণী কবি, রসায়ন বিজ্ঞানী বা লেখক বন্ধুর গ্রেপ্তারের খবর জানতে পেরে তাঁদের দ্রুত মুক্তির অনুরোধ জানিয়ে পত্র পাঠিয়েছেন। কখনো বা বই প্রকাশনায় আমলাতান্ত্রিক বাধানিষেধের প্রাবল্য দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়ে তা দূর করতে আহ্বান জানিয়েছেন লেনিনকে। লেনিন যে তাঁর পত্রাঘাতকে উপেক্ষা করতেন, তা নয়। যতখানি সম্ভব ব্যবস্থা নিতেন। তবে লেনিনের মৃত্যুর পর, স্তালিন যখন সোভিয়েত রাশিয়ার সর্বেসর্বা, সে সময় গোর্কি আর এমন ভূমিকায় সরব ও সক্রিয় থাকতে পারেননি। গোর্কি যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়েছিলেন ১৯২১ সালেই। লেনিন তাঁকে চিকিৎসার জন্য বাইরে পাঠিয়েছিলেন। সাত বছর নানা জায়গায় কাটিয়ে স্বদেশে ফেরেন ১৯২৮ সালে।
কিন্তু নিরাময় পূর্ণরূপে হয়নি। যক্ষ্মার চিকিৎসা চলার সময়ই ১৯৩৬ সালের ১৮ জুন সকাল ১১টা ১০ মিনিটে তিনি মারা যান। তৎকালীন সরকার গোর্কির চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে তাঁকে বিষ প্রয়োগে হত্যার অভিযোগ আনে। কয়েকজনকে শাস্তিও দেওয়া হয়। সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির কয়েকজন নেতাকেও সন্দেহের তালিকায় এনে তাঁদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। সংশয়ীদের ধারণা, এটি আদতে স্তালিনেরই কীর্তি; পার্টির কুকর্মের একজন দৃঢ়চেতা সমালোচককে সরিয়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর অপছন্দের ব্যক্তিদেরও দল থেকে উৎখাত করার জন্য তিনি অত্যন্ত সতর্কভাবে এই কাণ্ড ঘটিয়েছিলেন।
ম্যাক্সিম গোর্কির মা উপন্যাসটি মূলত বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে লেখা৷””আন্না কিরিলভনা জালোমভা ও পিওৎর জালোমভ”” হলেন মা উপন্যাসের প্রধান দুই চরিত্র পেলাগেয়া নিলভনা এবং পাভেল ভ্লাসব এর উৎস৷সে সময় ম্যাক্মিম গোর্কি জালোমভের পরিবারে নিয়মিত টাকা পাঠাতেন৷জালোমভ অনেক কষ্টের মধ্যেও আন্দোলন চালিয়ে যান৷এমনিভাবে পহেলা মে-কে সার্থক বানাতে এগিয়ে এসেছিল বিপ্লবের এক সাধারণ সৈনিক পিওৎর জালোমভ৷ চরিত্রগত বিশ্লেষণে মা উপন্যাসের লেখক তাঁর উপন্যাসে যে দুটি চরিত্রকে প্রাধান্য দিয়েছেন পাভেল ও নিলভনা চরিত্রের উৎস এবং কর্ণধার আন্না কিরিলভনা জালোমভা এবং পিওৎর জালোমভ এ দুটি বাস্তব চরিত্রের প্রতিফলন উপন্যাসটিকে দিয়েছে অন্যরকম মর্যাদা৷যা বিশ্বসাহিত্যাঙ্গণে বিরল৷বলা হয়ে থাকে এই উপন্যাসের জের ধরেই ১৯১৭ সালে রুশ বিপ্লব সংগঠিত হয়েছিল৷
এতক্ষণ ধৈর্য ধরে এই পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্যা ধন্যবাদ।
Biography Of Maxim Gorki In Bangla
Maxim Gorki |