boi mrittu Khuda by kazi nazrul Islam pdf book download মৃত্যুক্ষুধা লেখক: কাজী নজরুল ইসলাম

বই: মৃত্যুক্ষুধা
ধরণ: জীবনধর্মী উপন্যাস 
লেখক: কাজী নজরুল ইসলাম 
প্রকাশনা: মাওলা ব্রাদার্স 
প্রথম প্রকাশ: ১৯৩০
পৃষ্ঠাসংখ্যা: ৮০
মুদ্রিত মূল্য: ১২৫ টাকা
ব্যক্তিগত রেটিং: ১০/১০
✍️Halima Akter Tanny (review all credit)

জগতে ক্ষুধা আছে বলেই মানুষ ক্ষুধা মেটানোর জন্য বিভিন্ন রকম কাজ করে। এই ক্ষুধা আছে বলেই এত এত বিপত্তি, সংগ্রাম। ক্ষুধার তাড়নায় মানুষ হিতাহিত জ্ঞানও ভুলে যায়। অসৎ, অসুন্দর পথে পা বাড়াতেও দু’বার ভাবে না। ধর্ম, নীতি, সন্তান, সম্পর্ক সব তুচ্ছ হয়ে যায় এই ক্ষুধার কারণে। এক দরিদ্র পরিবারে  কতগুলো ক্ষুধায় কাতর মুখের চিত্র কখনও কি আমরা ভেবে দেখেছি?একদিকে ক্ষুধার তাড়না, অন্যদিকে জরা, ব্যাধি, মৃত্যুর মিছিল। মৃত্যু যেন সেখানে কাউকেই আর অবাক করে না। মরে গেলেই বোধহয় ঘাড় থেকে বোঝা নামল!!
কাহিনিসংক্ষেপ : পুতুল-খেলার কৃষ্ণনগর। যেন কোন খেয়ালি শিশুর খেলাশেষের ভাঙা খেলাঘর। এই কৃষ্ণনগরেরই একটি সড়ক, যার নাম চাঁদ সড়ক। চাঁদ সড়কে রয়েছে একটি বস্তি। সেখানে নিম্নশ্রেণীর মুসলমান আর রোমান ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের দেশী কনভার্ট ক্রীশ্চান মিলে গা-ঘেঁষাঘেঁষি করে বাস করে। তাদের মধ্যে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঝগড়া, অকথ্য ভাষায় গালাগালি যেন নিত্যদিনকার ব্যাপার। তবে যত ঝগড়াই হোক দিনশেষে একে অন্যের বিপদে সব ভুলে মানুষগুলো পাশে দাঁড়ায়। বস্তির একটি পরিবার হলো প্যাঁকালেদের পরিবার। পরিবারে আছে প্যাঁকালের মা, তিন বিধবা ভ্রাতৃবধূ ও তাদের একডজন ছেলেমেয়ে। ছোটবোন বিবাহিতা পাঁচিও ওদের ঘাড়ে চরেছে। এত বড় পরিবারের বোঝা বহন করতে হয় প্যাঁকালেকে। পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা যদিও তার বোঝা হালকা করার জন্য দিনরাত খাটে তবে তাতে বিশেষ লাভ হয় না। প্যাঁকালের বয়স ১৮/১৯। রাজমিস্ত্রীর কাজ করে আবার থিয়েটারেও গান করে, দলে নাচে, সখী সাজে। এই পরিবারের সেজ বউ অসুস্থ, তার দুধের শিশু এক ফোঁটা দুধ না পেয়ে মৃতপ্রায়। পরিবারের সবচেয়ে সুন্দরী, বুদ্ধিমতী বউ মেজবউ। রূপ যেন তার আগুন। খানিক লেখাপড়াও জানে সে। মেজবউয়ের আচরণ যেন খানিক রহস্যে ভরা,তাই দূর থেকেই সবাই সেই আগুন দেখে, তাতে হাত পোড়ানোর সাহস পায় না। শ্বাশুড়ির মেজবউকে নিয়ে ভয় হয়,তাই তাকে সংসারে বেঁধে রাখার জন্য প্যাঁকালেকে বিয়ে করতে বলে কিন্তু সে রাজি হয় না৷ সে ভালোবাসে ক্রিশ্চান কুর্শিকে। অত্যাধিক বিয়ের চাপ আর লোকজনের নানানরকম কথায় আর টিকতে না পেরে প্যাঁকালে বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। এরমধ্যে ঘটে যায় নানা ঘটনা। একদিন মসজিদের সিঁড়িতে আল্লাহর অনুগ্রহের জন্য লুটিয়ে পড়া মেজবউ হয়ে যায় হেলেন। অন্যদিকে এই ক্ষুধা, দারিদ্র্য, মৃত্যুর মাঝে আবির্ভূত হয় দেশপ্রেমিক, সমাজকর্মী, আত্মত্যাগী, সংসারবিরাগী আনসার। যে আশ্রয় নেয় তার বোন লতিফার বাসায়। লতিফার স্বামী স্থানীয় কোর্টের নাজির। কৃষ্ণনগরে এসে আনসারের মনে উদয় হয় রুবির সাথে তার শৈশব প্রণয়ের স্মৃতি। রুবি সদ্য বিধবা কৃষ্ণনগরের ম্যাজিস্ট্রেটের কন্যা। প্রচন্ড জেদী রুবি শুধু বাবা-মাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য বিধবাদের বেশভূষায় থাকে। আনসার রাজবন্দী হয়ে রেঙ্গুনে চলে যায়। রুবি আসে লতিফার বাসায়। মেজবউ ওরফে হেলেন থাকে বরিশালে। তার বসন এখন কালোপেড়ে শাড়ি।পায়ে পাম্প সু। কৃষ্ণনগরে ছেলেমেয়েকে ফেলে সে এখন ক্রীশ্চান মিশনারীর কাজ করে। এরইমধ্যে কৃষ্ণনগর থেকে একদিন চিঠি আসে। চিঠি পেয়ে মূর্ছা যায় মেজবউ। কি ছিল সেই চিঠিতে?রুবি আর আনসারের কি আর দেখা হয়েছিল? এসব জানতে হলে বইটি পড়তে হবে।
পাঠপ্রতিক্রিয়া: প্রথমেই বইটা পড়ার পর আফসোস হয়েছে। কেন এই বইটা আগে পড়লাম না!! মাত্র ৮০ পৃষ্ঠার একটি বই কিন্তু এমন জীবনবোধে ভরপুর! উপন্যাসের ভাষাশৈলী, ব্যবহৃত উপমা, নতুন নতুন শব্দগুচ্ছ এক কথায় অনবদ্য। “পুতুল-খেলার কৃষ্ণনগর।  যেন কোন খেয়ালি শিশুর খেলাশেষের ভাঙা খেলাঘর।” উপন্যাসের সূচনাই পুরোটা পড়তে বাধ্য করে। উপন্যাসের আমার দুটি প্রিয় চরিত্র মেজবউ এবং আনসার।মেজবউয়ের অতি দুঃখের মধ্যে গুণগুন করে গান করা, হাসিমুখ যেন ক্ষণিকের জন্য পুরো আবহই পাল্টে দেয়।আনসার চরিত্রটি যেন লেখক নিজেই। আনসারের ব্যক্তিত্ব,সব কিছুর ঊর্ধ্বে দেশপ্রেম মুগ্ধ করে। উপন্যাসটিতে প্রধানত দুঃখ, ক্ষুধা, দুর্দশা এসব ফুটে উঠেছে।তবে সেখানে অনন্যসাধারণ প্রেমও ছিল গৌণভাবে।প্রথম বিশ্বযুদ্ধ উত্তর  এসব দুঃখ-যন্ত্রণা মানুষকে কীভাবে গ্রাস করেছিল তা উপন্যাসটি পড়লে চোখের সামনে ভেসে উঠে। আর এসবকিছু লেখকের খেয়ালি মনের সৃষ্ট কিছু নয় বরং তা লেখকের কাছথেকে দেখা ঘটনাপ্রবাহ , যেখানে লেখক উপন্যাসের স্বার্থে চরিত্রগুলোর পরিবর্তন ঘটিয়েছেন মাত্র। এ প্রসঙ্গে “চাঁদসড়কে নজরুল” স্মৃতিকথায় আকবর উদ্দীন বলেছেন, মৃত্যুক্ষুধা বইয়ে চাঁদ সড়কের কতগুলো সত্যিকার চরিত্র কেবল নাম বদল করে ব্যবহার করা হয়েছে। ১৯৩০ সালে মৃত্যুক্ষুধা প্রকাশিত হলেও ১৯২৭ সাল থেকে সওগাত পত্রিকায় তা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়ে আসছিল। ১৯২৬ থেকে ১৯২৯ সাল পর্যন্ত কাজী নজরুল ইসলাম কৃষ্ণনগরে চাঁদ সড়কের কাছে একতলা এক বাংলো প্যাটার্নে বসবাস করতেন। আর এসময়ে তিনি সেখানকার মানুষের দারিদ্র্য, ক্ষুধা, দুর্দশা খুব কাছ থেকে দেখেছেন তাছাড়া নজরুল নিজেই এসময় খুব দুঃখ-দুর্দশায় ছিলেন প্রকাশকদের পেমেন্টের অভাবে, অথচ সেই প্রকাশকদের দল তাঁর লেখা দিয়ে রমরমা ব্যবসা করত।দারিদ্র্য কীভাবে মাকেও  সন্তানের মৃত্যু কামনা করতে বাধ্য করতে পারে, ধর্মান্তরিত করতে পারে তার স্বরূপ জানতে হলে বইটা পড়তে হবে।
 
প্রিয় কিছু উক্তি:
📖” প্রভাতের ফুল দুপুরের আগেই ঝরে পড়ল।”
📖”সুতোয় কাপড় হয়, দেশ স্বাধীন হয় না।”
📖” যে দেশের মাথাগুলো নোয়াতে নোয়াতে একেবারে পায়ের কাছে এসে ঠেকেছে, সে দেশের দু-একটা মাথা যদি খাড়া হয়ে থেকে তার ঔদ্ধত্যের শাস্তিস্বরূপ খাঁড়ার ঘা-ই লাভ করে তা’হলে হেঁট মাথাগুলোর অনেকখানি লজ্জা ক’মে যাবে মনে করি।”
📖”মানুষের শুধু পরাধীনতারই দুঃখ নেই, অন্যরকম দুঃখও আছে- যা অতি গভীর, অতলস্পর্শ! নিখিল-মানবের দুঃখ কেবলই মনকে পীড়িত, বিদ্রোহী করে তোলে, কিন্তু নিজের বেদনাল- সে যেন মানুষকে ধেয়ানী সুস্থ ক’রে তোলে। বড় মধুর, বড় প্রিয় সে দুঃখ।”
📖”যে মৃত্যু-ক্ষুধার জ্বালায় এই পৃথিবী টলমল করছে, ঘুরপাক খাচ্ছে, তার গ্রাস থেকে বাঁচবার সাধ্য কারুরই নেই!”
ভালো লাগলে ১০ এর মধ্যে রেটিং দিন
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?