সেই সময় | সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
প্রকাশনা: আনন্দ পাবলিশার্স
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৫২৩
মূল্য: ৫০/-
উনবিংশ শতাব্দীর হালচালের দিকে ফিরে যাওয়া এক কালজয়ী উপন্যাস ‘সেই সময়’। লেখকের ভাষ্যমতে ১৮৪০ থেকে ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দের পটভূমিতে রচিত এ উপন্যাস। যেখানে কাহিনির মূল নায়ক হচ্ছে ‘সময়’। আর এ সময়ের প্রতীক হচ্ছে কাহিনির মূল চরিত্র জোড়াসাঁকোর সিংহ বাড়ির কনিষ্ঠপুত্র নবীনকুমার সিংহ। মূলত তার জন্মকাহিনী থেকে তার জীবনের নানা ঘটনার দিকগুলো, শেষদিকে এক অচেনা যুবতীর মধ্যে নিজের মাতৃরুপ দর্শন, তার অদ্ভুত ধরনের মৃত্যু সবই সেই প্রতীকের ধারাবাহিকতা।
নবীনকুমারের চরিত্রে এক অকাল মৃত অসাধারণ ঐতিহাসিক যুবকের কিছুটা আদল রয়েছে। তবে তা কিয়দাংশ মাত্র। বইয়ের প্রতি পাতায় দেখা যায় রথী মহারথীরা ছুটে চলেছেন এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে। এমনকি ঠাকুরবাড়ির দেবেন্দ্রনাথ বাবুর সনাতন ধর্ন থেকে ব্রাহ্মধর্মে প্রতিষ্ঠিত হওয়া থেকে রয়েছে কিভাবে তা ধীরে ধীরে অন্যদের আক্রোশে পরিণত হয়!
এছাড়াও আরো দেখা যায় হেয়ার সাহেব ভারতের শিক্ষা প্রসার ঘটাচ্ছেন। বিদ্যাসাগর মশাই ব্যস্ত বিধবাবিবাহের আইন পাস ও তার কার্যকর করা নিয়ে। রয়েছে বিখ্যাত লেখক মধুসূদন দত্তের পতন-উত্থান-পুনরায় পতনের গল্প। সেই সাথে নিজেকে সামান্য লেখক বলে দাবি করা গন্ধর্বনারায়ণ ওরফে দীনবন্ধু মিত্রের ‘নীলদর্পণ’ উপন্যাস কিভাবে উপরমহলের সাহেবদের মনেও ভয় ধরিয়ে দেয় তার বিবরণ।
বইটি পড়ার সময় সিপাহী বিদ্রোহের পুরো বিষয়টি আমার চোখের সামনে এসেছে। এত নিপুণ বর্ণনা! এছাড়া মনশ্চক্ষুতে ভেসেছে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিস্তার আর বাঙালী বাবুদের নারী-সুরা-বেলাল্লাপানার চূড়ান্ত নিদর্শন! শেষে একটা জিনিস মনে দাগ কেটেছে সেটি হচ্ছে এই উপন্যাসের গল্পের একপর্যায়ে জন্মগ্রহণ করেন দেবেন্দ্রনাথ বাবুর ত্রয়োদশ সন্তান শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর! লোমহর্ষক না?
অহংকার, মদত, ঘাত, প্রতিঘাত, প্রেম, অভিমান, ব্যভিচার, কুসংস্কার, সমাজসংস্কারের মতো বিষয় গুলো সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এত দীর্ঘ উপন্যাস পড়তে গিয়েও খেই হারিয়ে ফেলিনি বা বিরক্তি বোধ আসেনি। বহমান নদীর মতো পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠায় বুঁদ হয়ে থাকার মতোন ভালো ব্যাপার বুঝি আর হয় না!
Leave a comment