বই এর নাম :- সেরিনা
লেখক :- মুহাম্মদ জাফর ইকবাল
ধরন :- সাইন্স ফিকশন
প্রকাশনী :- সময়
পৃষ্ঠা সংখ্যা :- ১২৫ পৃষ্ঠা
মুদ্রিত মূল্য :- ২৫০ টাকা
ব্যক্তিগত রেটিং :- ৯/১০
📝 ভূমিকা:-
আমরা সবাই জানি যে আমাদের ফুসফুস পানির নিচে শ্বাস নেবার উপযোগী নয়।আর আমাদের চামড়া শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যম হতে পারে না।কিন্তু এমন ক্ষমতা যদি কারো হত?কেমন হত তার জীবন?সমাজে কি সে স্বাভাবিকভাবে চলতে পারতো?বইয়ের মূল চরিত্র সেরিনা নামক একটি মেয়ে যার রয়েছে এই অসাধারণ ক্ষমতা।তার জীবনের কাহিনী নিয়ে সাজানো হয়েছে বইটি।
📖 সংক্ষিপ্ত কাহিনী :-
শামীম একজন ডাক্তার, ডাক্তারী না করে বিদেশে ল্যাবরেটরিতে গবেষণা করতো। এক গাড়ি দুর্ঘটনায় স্ত্রী কন্যা মারা যাওয়ার পর দেশে চলে এসেছে। ট্রেনে করে যাওয়ার সময় এক গ্রামে ঘুরতে গিয়ে হাঠাৎ করেই একটা নবজাতক কন্যা শিশুকে এক ডোবার ভেতরে আবিষ্কার করে বসে এবং নিজের চেষ্টায় হাসপাতালে ভর্তি করে।এই ছোট্ট মেয়েটা পানির কতক্ষণ ডুবে ছিল? পানির ভেতরে কিভাবে বেঁচে ছিল সেটা একটা রহস্য হয়ে দেখা দেয়।
কিছুক্ষণ পরেই চিন্তা করতে গিয়ে শামীম আবিষ্কার করে,কোন এক অদ্ভুত কারণে এই ছোট্ট মেয়েটা এক অস্বাভাবিক ক্ষমতা নিয়ে জন্ম নিয়েছে।সে পানির নিচে শ্বাস নিতে পারে তার চামড়ার মাধ্যমে। শামীম মেয়েটিকে নিজের কাছে নিয়ে আসে এবং অ্যালেক্স নামক এক আমেরিকান গবেষক বন্ধুর সাহায্যে মেয়েটির চিকিৎসা করে বাঁচিয়ে তোলে।
একে একে তের বছর কেটে যায়, সেই ডোবার ভেতরে পাওয়া ছোট মেয়েটির নাম সেরিনা। গ্রীক উপাখ্যানে মৎস্যকন্যার নাম ছিল সাইরেন- সাইরেন থেকে সেরিনা।সেরিনা প্রতিদিন ঘন্টার পর ঘন্টা পুকুরের নিচে পানিতে ঘুরে বেড়ায়, মাছেদের সাথে খেলা করে, তাদের সাথে সাঁতার প্রতিযোগিতা করে, মাছের মত নিঃশব্দে সাঁতার কেটে ঘুরে বেড়ায়, ঘুমায়।
শামীম জানে এই অসাধারণ ক্ষমতার কথা বাইরের মানুষ জানতে পারলে সেরিনার বিপদ। তাকে নিয়ে গবেষণা শুরু হয়ে যাবে। তাকে কেটে কুটে দেখবে কিভাবে সে চামড়া দিয়ে নিঃশ্বাস নেয়।তাই শামীম এবং সেরিনা কাউকেই বলেনা তার এই অস্বাভাবিক ক্ষমতার কথা।
কিন্তু কতদিন আর লুকিয়ে রাখবে তারা ? এক সাঁতার প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কারণে বিদেশি সিক্রেট এজেন্সির নজরে পড়ে যায় সে। তারা চায় সেরিনাকে নিয়ে গবেষণা করতে।ধরে নিয়ে গিয়ে কেটে কুটে দেখতে চায় কিভাবে সেরিনা পানির নিচে চামড়া দিয়ে শ্বাস নেয়।
এই সিক্রেট এজেন্সির ক্ষমতা ও টাকার কোন অভাব নাই।যে কোন দেশ থেকে যে কাউকে অনায়াসেই তারা ধরে নিয়ে যেতে পারে। আর সেই মানুষটি যদি হয় সেরিনার মতো এমন অস্বাভাবিক ক্ষমতার অধিকারী তাহলে তো কথাই নেই।
এই এজেন্সি তাদের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে তুলে নিয়ে যেতে চায় সেরিনা’কে, তারা কী পারবে?
সেরিনা কী বাঁচাতে পারবে নিজেকে এমন শক্তিশালী প্রতিপক্ষের হাত থেকে?
কী হবে যদি তারা সেরিনাকে ধরে নিয়ে যায়?
❣️পাঠ প্রতিক্রিয়া :-
মুহাম্মদ জাফর ইকবালের সাইন্স ফিকশন- সেরিনা। একটি দুখী মেয়ের গল্প। সেই সাথে গল্প একজন অসহায় পিতারও। বইটি পড়তে পড়তে মনের অজান্তেই চোখ ভিজে যাবে।
বইয়ের শেষ প্যারাটা অসাধারন! স্তব্ধ হয়ে ভাবার মতন।মেয়ে বাবার আকুলতা যে কাউকে ছুঁয়ে যাবে।রাগ হবে মানুষের নির্মমতার ওপর।এক কথায় সাবলীল সুখপাঠ্য একটি বই । বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী বললেই হয়ত অনেকের চোখের সামনে ভেসে উঠবে এলিয়েন আর পৃথিবীর মানুষের মারামারি,হাজার বছর পরের জগত এবং ভারী ভারী সায়েন্টিফিক টার্মসের ব্যবহার।কিন্তু এর বাইরে একেবারে সহজবোধ্য কিন্তু চিন্তার খোরাক জোগানো একটা বই হল সেরিনা।পড়ার শেষে যা আপনাকে আবেগতাড়িত করবে,মনে হবে ইশ! কেন এটা হল? এমন হলে কতই না ভাল হত!! একটা ভাল লেখার এটাই বিশেষত্ব।
এছাড়াও,
বইটি পড়ে যখন ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম সেখান থেকে একজন মেয়ে মন্তব্য করেছিলো …
” সেরিনা বইটা আমি ক্লাস ৯ এ থাকতে পড়েছিলাম প্রথমবার। বইটা পড়ে লাস্ট মুহুর্তে কান্না করে দিছিলাম 😢
ওই বইটি পড়েই ঠিক করেছিলাম নিজের মেয়ে হলে নাম রাখবো সেরিনা।”
এই মন্তব্য দেখার পর আমি এতটাই অভিভূত হয়েছিলাম যে আমার মনে হলো সময় ব্যায় করে বইটা পড়া সার্থক হয়েছে।
লেখকের সুস্বাস্থ্য এবং মঙ্গল কামনা করছি।
পরিশেষে,
নিজে বই পড়ুন এবং অন্যকে বই পড়তে উৎসাহিত করুন।
ধন্যবাদ ❤️