সিরাতের প্রচলিত ভুল (pdf read 10÷1) লেখক : মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ আল আওশান | Sirater Procholito Bhul By Muhammad ibn Abdullah al-Awshan

বইঃ সিরাতের প্রচলিত ভুল
লেখক : মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ আল আওশান
প্রকাশনী : নবপ্রকাশ
বিষয় : সীরাতে রাসূল (সা.)
অনুবাদক : আব্দুল্লাহ আল মাসুম
পৃষ্ঠা : 216
ভাষা : বাংলা।
     
সাপ্লায়ার জানিয়েছেন এই পণ্যটি 28 February প্রকাশিত হতে পারে। প্রকাশিত হওয়ার সাথে সাথে পণ্যটি পেতে আগেই অর্ডার করে রাখুন ।

Image


      (বইটি ক্রয়ের পূর্বে এক দশমাংশ পড়ুন সম্পূর্ণ ফ্রিতে)
শুনতে অবাক লাগলেও সত্য, সিরাতের নানা এমন অনেক কাহিনী প্রচলিত আছে আমাদের মধ্যে যেগুলোর ঐতিহাসিক সত্যতা পাওয়া যায় না।ঠিক ১২ই রবিউল আউয়ালেই কি রাসূল সাঃ পৃথিবীতে এসেছিলেন? রাসূলের সাথে বিয়ের সময় খাদিজার বয়স কত ছিল? 
এক ব্যক্তিকে দেয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে গিয়ে রাসূল কি সত্যিই বসেছিলেন পথের ধারে?রাসূলের জীবনের নানা চমকপ্রদ যেসব ঘটনা আমাদের মজলিশে-মাহফিলে বয়ান করা হয় সেসব কতটুকু নির্ভরযোগ্য?ইতিহাসে প্রথমবারের মত সিরাতের নানা বর্ণনাগুলো ঐতিহাসিকভাবে পর্যালোচনা করেছেন সৌদি আরবের প্রখ্যাত ঐতিহাসিক মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ আল আওশান। না, তিনি এই বইয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেন নি। শুধু ঐতিহাসিক সূত্রগুলো পর্যালোচনা করে দেখিয়েছেন। বিচক্ষণ পাঠক ঠিকই বুঝে নিবেন কোন বর্ণনা শুদ্ধ আর কোনটা প্রশ্নবিদ্ধ।

               নবীজির মক্কার জীবন

নবীজির জন্মতারিখ……

নবীজি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মতারিখ নিয়ে আজও পৃথিবীতে নানা রকমের বক্তব্য শোনা যায়। মুসলিম উম্মাহ এখনো এ বিষয়ে কোনো ঐকমত্যে পৌঁছাতে সক্ষম হয়নি। জন্মসন নিয়ে মোটামুটি একই রকমের বক্তব্য পাওয়া গেলেও দিন বা সময় নিয়ে একাধিক মত রয়েছে। অধিকাংশ ঐতিহাসিক ও আলেমের মতে, হস্তীবাহিনীর মক্কায় কাবাঘর আক্রমণের বছর নবীজি জন্মলাভ করেন। তবে কারও মতে, হস্তীবাহিনীর আক্রমণের এক মাস পর তিনি জন্মলাভ করেন। আবার কারও মতে, ৪০ দিন এবং কেউ ৫০ দিন পরের কথা উল্লেখ করেন। শাইখ সুহাইলি ও ইবনে কাসির এ মতকে সর্বাধিক সঠিক বলে আখ্যায়িত করেন।
আবার কোনো কোনো ঐতিহাসিক বলেন, হস্তীবাহিনীর আক্রমণের ১০ বছর পরে নবীজি জন্মলাভ করেন। কেউ কেউ ২৩ বছর, আবার অনেকে ৩০ বছরের কথাও বলেছেন।
এ প্রসঙ্গে ইমাম জাহবি বলেন, ‘আবু আহমাদ হাকিম বর্ণনা করেন, হস্তীবাহিনীর আক্রমণের এক মাস পর নবীজি জন্মলাভ করেছেন এবং অনেকেই এ মত ব্যক্ত করেছেন। আবার কেউ ৪০ দিনের কথাও বলেছেন। আমার মতে, মূলত এখানে শব্দের ভুল হয়েছে। এর ফলে পরবর্তী সময়ে এই ভুলটিই সর্বত্র প্রসিদ্ধি লাভ করে। অর্থাৎ যাঁরা ৩০ অথবা ৪০ বছরের কথা বলেছেন, তাঁরা দিনের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে ভুলক্রমে দিনের জায়গায় বছরের কথা উল্লেখ করেছেন। অন্যথায় সঠিক বক্তব্য হচ্ছে ৩০ অথবা ৪০ দিন।’
এ বিষয়ে প্রখ্যাত ঐতিহাসিক আবু ইসহাক মুত্তালিব ইবনে আবদুল্লাহর সূত্রে তাঁর দাদা কায়েস থেকে বর্ণনা করেন, কায়েস বলেন, ‘আমি এবং নবীজি একই বছর অর্থাৎ হস্তীবাহিনীর আক্রমণের বছর জন্মগ্রহণ করি। তাই আমি ও মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ যেন দুটি জন্ম।’
ইমাম জাহবি এ সূত্রকে ‘হাসান’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
অপর ঐতিহাসিক ইবনে সাদ ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, হাজ্জাজ ইবনে মুহাম্মদ প্রখ্যাত তাবেয়ি সাঈদ ইবনে জুবায়ের সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাসের (রা.) সূত্রে বর্ণনা করেন, ‘নবীজি হস্তীবাহিনীর আক্রমণের বছর জন্মলাভ করেন।’
ইমাম জাহবি তাঁর তারিখুল ইসলাম গ্রন্থে উপরিউক্ত বর্ণনার সনদকে
সহিহ বলে সাব্যস্ত করেছেন।
খলিফা ইবনে খাইয়াত তাঁর ঐতিহাসিক গ্রন্থে এবং ইবনে কায়্যিম তাঁর আয-যাদ (যাদুল মায়াদ) গ্রন্থে ওই মতকে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য বলেছেন। ইবনে কায়্যিম আরও বলেছেন, ‘হস্তীবাহিনীর বছরে যে নবীজি জন্মলাভ করেছেন, এ বিষয়ে কোনো মতানৈক্য নেই।’
এক বর্ণনায় আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমি হস্তীবাহিনীর দুজন সেনাপতিকে মক্কার রাস্তায় রাস্তায় মানুষের কাছে খাবার ভিক্ষা চাইতে দেখেছি; তারা অন্ধ ও পঙ্গু হয়ে গিয়েছিল।’
এবার আসা যাক সময় ও মাসের ব্যাপারে। অধিকাংশ ঐতিহাসিক ও আলেম বলেছেন, নবীজি রবিউল আউয়াল মাসে জন্মগ্রহণ করেছেন। তবে এক বর্ণনায় রমজান মাসের কথা পাওয়া যায়। ইমাম ইবনে কাসির বলেন, ‘রমজানের কথাটি মালেকি মাজহাবের মুহাদ্দিস ইবনে আবদুল বার জুবায়ের ইবনে বাক্কার থেকে বর্ণনা করেছেন। এ মতটি নিতান্ত দুর্লভ।
রবিউল আউয়ালে নবীজির জন্ম হওয়ার সমর্থনে হাদিসের বর্ণনা পাওয়া যায়। সাহাবি আবু কাতাদা (রা.) বলেন, নবীজিকে প্রতি সোমবার রোজা রাখার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে উত্তরে তিনি বলেন, ‘কারণ এই সোমবারে আমি জন্মলাভ করেছি এবং এই সোমবারেই আমার ওপর প্রথম ওহি অবতীর্ণ হয়।
সোমবারের তারিখ উল্লেখ করতে গিয়ে ইবনে কাসির বলেন, ‘নবীজি রবিউল আউয়ালের ২ তারিখে জন্মলাভ করেন। ইবনে আবদুল বার তাঁর বিখ্যাত জীবনীগ্রন্থ আল ইসতি আব ফি মা’রিফাতিল আসহাব-এর মধ্যে ২ তারিখের কথা উল্লেখ করেছেন।’ অপর ঐতিহাসিক ওয়াকিদি আবু মা’শার নাজিহ ইবনে আবদুর রহমান মাদানির সূত্রে ২ তারিখের কথা বলেছেন।
আবার কোনো ঐতিহাসিক রবিউল আউয়ালের ৮ তারিখের কথা বলেছেন। ইবনে হাজামের সূত্রে হুমাইদি ও মালিক, উকাইল ও ইউনুস ইবনে ইয়াজিদ বিখ্যাত তাবেয়ি জুহরির সূত্রে মুহাম্মদ ইবনে জুবায়ের ইবনে মুতইম থেকে এ রকম বর্ণনা করেন। ইবনে আবদুল বার একাধিক ঐতিহাসিকের বরাতে ৮ তারিখের মতকে সহিহ বলে উল্লেখ করেছেন। তা ছাড়া হাদিসের প্রখ্যাত হাফেজ মুহাম্মদ ইবনে মুসা খাওয়ারিজমি নিশ্চিতভাবে এ মতকে সমর্থন দিয়েছেন এবং হাফেজ আবুল খাত্তাব ইবনে দিহইয়া আত তানবির ফি মাওলিদিল বাশিরিন নাযির গ্রন্থে এ মতকেই অগ্রাধিকার দিয়েছেন।
কারও মতে, রবিউল আউয়ালের ১০ তারিখে নবীজির জন্ম হয়। এ মতটি আবু জাফর বাকেরের সূত্রে ইবনে আসাকির এবং শাবির সূত্রে মুজালিদ বর্ণনা করেছেন।
আবার কারও মতে, রবিউল আউয়ালের ১২ তারিখে নবীজির জন্ম হয়। আবু ইসহাক স্পষ্ট ভাষায় ১২ তারিখের কথা ব্যক্ত করেছেন। এ ছাড়া আবু শাইবা তাঁর মুছান্নাফ গ্রন্থে আফফানের সূত্রে সাহাবি জাবের ও ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণনা করেন, তাঁরা বলেছেন, নবীজি হস্তীবাহিনীর আক্রমণের বছর রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখে জন্মলাভ করেন। এ তারিখেই তাঁর ওপর প্রথম ওহি অবতীর্ণ হয়। এ দিনেই তিনি ঊর্ধ্বগমন করেন এবং মদিনায় হিজরত করেন। আর এ দিনেই তাঁর ওফাত হয়।
উল্লেখ্য, এই ১২ তারিখের কথাটি সর্বমহলে বেশি প্রসিদ্ধ।
তবে অনেকে ১৭ রবিউল আউয়ালের কথাও বলেছেন। ইবনে দিহইয়া এ মতটি শিয়া সম্প্রদায়ের কারও সূত্রে উল্লেখ করেন। তা ছাড়া ২২ রবিউল আউয়ালের কথা ইবনে হাজমের লেখা থেকে ইবনে দিহইয়া বর্ণনা করেছেন। তবে সে ক্ষেত্রে ইবনে হাজমের সঠিক অবস্থান সেটাই, যেটা তাঁরই সূত্রে হুমাইদি উল্লেখ করেছেন। সেটা হলো ৮ তারিখ। ইবনে কাসির উপরিউক্ত মোট ছয়টি বক্তব্য উল্লেখ করেছেন।
এগুলোর কোনোটিই সহিহ হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত নয়। এ ছাড়া ১২ তারিখের সমর্থনে সাহাবি জাবের ও ইবনে আব্বাস-এর সূত্রে যে হাদিস উল্লেখ করা হয়েছে, তা সাব্যস্ত হলে উম্মাহর মধ্যে এ বিষয়ে যে দীর্ঘ বিতর্ক চলে আসছে, এক নিমেষেই তার অবসান ঘটত। কিন্তু ওই হাদিসের সনদ দুর্বল হওয়ায় তাও সম্ভব হয়নি। কারণ ইবনে কাসির বলেন, ‘এ হাদিসের সনদে বিচ্ছিন্নতা রয়েছে।’
তাই যেহেতু নবীজির জন্মতারিখ গ্রহণযোগ্য কোনো বর্ণনার মাধ্যমে প্রমাণিত হলো না, তাই জ্যোতির্বিদদের বক্তব্য গ্রহণ করে এ ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তে উপনীত হতে কোনো অসুবিধা নেই। অবশ্য অনেকে ৯ রবিউল আউয়ালকে নির্দিষ্ট করে তা সাব্যস্ত করতে চেয়েছেন।
শাইখ মুহাম্মদ ইবনে উছাইমিন বলেন, আধুনিক বিশ্বের কিছু জ্যোতির্বিজ্ঞানীর করা হিসাব ও নবীজির বয়সসীমা পর্যবেক্ষণ করলে তাঁর জন্মতারিখ হয় রবিউল আউয়ালের ৯ তারিখ; ১২ হতে পারে না।’
সোমবারে জন্মলাভ প্রসঙ্গে কেউ নবীজিকে সরাসরি জিজ্ঞেস করেনি। বরং সোমবারে রোজা রাখার ব্যাপারে তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে। তবু জবাবে নবীজি তাঁর জন্মদিনের বার উল্লেখ করে বলেছিলেন, ‘এই দিনে আমি জন্মলাভ করি।’ অতএব, সোমবারে রোজা রাখার বিশেষত্ব হচ্ছে তিনটি। যথা :
প্রথমত, এই দিনে বান্দার আমল আল্লাহ তায়ালার দরবারে পেশ করা
হয়; বৃহস্পতিবারেও অনুরূপ করা হয়ে থাকে। দ্বিতীয়ত, এই দিনে নবীজি জন্মলাভ করেন।
তৃতীয়ত, এই সোমবারেই তাঁর ওপর প্রথম ওহি অবতীর্ণ হয়; অর্থাৎ তিনি নবুওয়াত লাভ করেন।
লক্ষণীয়, নবীজি নিজে কোনো তারিখের কথা উল্লেখ করেননি এবং সাহাবিদের কেউই তাঁকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেননি। অথচ সাহাবিগণ হচ্ছেন মানুষের মধ্যে কল্যাণকর বিষয়ে সবচেয়ে আগ্রহী। এতে বোঝা যায়, নবীজির জন্মদিনের তারিখ থেকে বিশেষ কোনো বিষয় সাব্যস্ত হয় না; অন্যথায় তিনি কখনোই তাঁর উম্মতের কাছ থেকে তা গোপন রাখতেন না।
যারা প্রতিবছর ১২ রবিউল আউয়ালে নবীজির জন্মদিনের নামে আনন্দ উৎসবের আয়োজন করে থাকে, তারা মূলত অজ্ঞতাবশত তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীতে এমনটি করে থাকে। কারণ নবীজি ১১ হিজরির ১২ রবিউল আউয়ালে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুর তারিখের ব্যাপারে তেমন কোনো মতভেদ নেই। হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি এমনটিই উল্লেখ করেছেন।
বাল্যকালে দাদা আবদুল মুত্তালিবের বিছানায় নবীজি বসতেন ইবনে ইসহাক আব্বাস ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে মা’বাদের সূত্রে বর্ণনা করেন, কুরাইশের মহান নেতা আবদুল মুত্তালিবের জন্য কাবাঘরের পাশে বিশেষ বিছানা বিছানো হতো। যেখানে তাঁর সম্মানে তাঁর সন্তানদের কেউ বসতেন না। কিন্তু বালক নবীজি কখনো সেই বিছানায় এসে বসতেন। যার কারণে তাঁর চাচারা তাঁকে সেখান থেকে সরিয়ে দিতে চাইতেন। ব্যাপারটি দাদা আবদুল মুত্তালিবের নজরে পড়ল। তখন প্রিয় নাতি বালক নবীজির পিঠে হাত বুলিয়ে তিনি তাঁর চাচাদের বললেন, ‘ওকে ছেড়ে দাও। আমার এই নাতির হিসাব আলাদা।’
হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানির তাকরিব গ্রন্থের আলোকে আব্বাস ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে মা’বাদ ইবনে আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব ষষ্ঠ শতাব্দীর নির্ভরযোগ্য ঐতিহাসিকদের একজন। তাই নবীজির সাহাবিদের অন্তর্ভুক্ত না হলেও তিনি স্বীয় গোত্র কিংবা পরিবারের কারও সূত্রে যা কিছু বর্ণনা করেছেন, তা হুবহু সাহাবিদের সূত্রের মতো না হওয়াটাই স্বাভাবিক। এ কারণে তাঁর সনদে বিচ্ছিন্নতা রয়েছে।
ইবনে ইসহাকের সূত্রে তাঁর বর্ণনা বায়হাকি তাঁর দালায়েল গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।
ইবনে সাদ তাঁর তাবাকাত গ্রন্থে এ ঘটনা নিজ শাইখ ওয়াকিদির সূত্রে উল্লেখ করেছেন, যার বর্ণনাকে প্রত্যাখ্যাত বলা হয়েছে। ইমাম জাহবি তারিখুল ইসলাম গ্রন্থে সিরাতের বর্ণনায় আবদুল্লাহ ইবনে
শাবিবের সূত্রে এ ঘটনা উল্লেখ করার পর বলেন, ‘আবদুল্লাহর বর্ণনা দুর্বল।’ ইবনে কাসির এ ঘটনা ইবনে ইসহাকের সূত্রে বর্ণনা করলেও এ ব্যাপারে নীরব থেকেছেন।
নবীজির বাল্যকালে দুর্ভিক্ষ ও বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা
ইবনে সাদ তাঁর তাবাকাত গ্রন্থে মাখরামা ইবনে নওফেল জুহরির সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি তাঁর আম্মা রুকাইকা বিনতে আবু সাইফিকে বলতে শুনেছেন, তিনি বলেন, আমি কুরাইশের নেতা আবদুল মুত্তালিবের জন্মকালে ছিলাম। দীর্ঘ কয়েক বছর মক্কায় দুর্ভিক্ষ চলছিল, বৃষ্টিও হচ্ছিল না। কুরাইশদের খাদ্যপণ্য ও খেতের ফসল শেষ হয়ে মক্কার ঘরে ঘরে অভাব দেখা দেয়। বাজারেও খাদ্যসংকট দেখা দেয়। ক্ষুধার যন্ত্রণায় নারী ও শিশুরা হাহাকার করছিল।
এরই মাঝে একদিন ঘুমের মধ্যে স্বপ্নে দেখি, কেউ ডেকে বলছে, ‘হে কুরাইশের সন্তানগণ, তোমরা শুনে রাখো! শেষ নবী তোমাদের মাঝেই প্রেরিত হয়েছেন। তিনি তোমাদের জন্য সর্বক্ষেত্রে উন্নতি ও সজীবতা ফিরিয়ে আনবেন। অতএব, তোমরা তোমাদের মধ্যে এমন একজনকে লক্ষ্য করো, যিনি তোমাদের মধ্যে বংশীয় মর্যাদায় সমপর্যায়ের; যিনি সর্বাধিক সম্মানিত ও উজ্জ্বল বর্ণবিশিষ্ট হবেন। তিনি যেন তাঁর পরিবারের সকলকে নিয়ে এবং তোমরা তোমাদের গোত্রীয় প্রত্যেক শাখা থেকে একজন করে বেরিয়ে পড়ো। অতঃপর পবিত্রতা অর্জন করে সুগন্ধি লাগিয়ে মক্কার আবু কুবায়েস পাহাড়ের চূড়ায় আরোহণ করো। এরপর এই মহান ব্যক্তি তোমাদের জন্য বৃষ্টি চেয়ে প্রার্থনা করবেন এবং তোমরা “আমিন আমিন” বলবে। তাঁর দোয়ার ফলে তোমরা অবশ্যই পানি লাভ করবে।’
রুকাইকা সকালে স্বপ্নের এ ঘটনা কুরাইশের লোকদের জানালে তারা সবাই তাঁর স্বপ্নের বর্ণনা অনুযায়ী সে ধরনের লোক খুঁজতে লাগল। অনেক খোঁজাখুঁজির পর তারা নিশ্চিত হলো, এমন লোক আমাদের মধ্যে শুধু একজনই আছেন। তিনি হচ্ছেন আবদুল মুত্তালিব। কুরাইশের সবাই আবদুল মুত্তালিবের কাছে সমবেত হয়ে স্বপ্নের কথা খুলে বলল।
এরপর আবদুল মুত্তালিব সবাইকে নিয়ে যথারীতি আবু কুবায়েস পাহাড়ের উদ্দেশে রওনা হলেন। সঙ্গে করে প্রিয় নাতি মুহাম্মদকে নিয়ে চললেন। পাহাড়ের চূড়ায় ওঠে বালক নবীজিকে পাশে বসিয়ে তিনি প্রার্থনা শুরু করলেন, ‘হে মালিক! এরা সবাই তোমারই বান্দা ও তাদের সন্তান। এদের সঙ্গে যেসব নারী ও শিশু সমবেত হয়েছে, এরাও তোমার দাসী ও তাদের পরিবার। ও মালিক! তুমি দেখতে পাচ্ছ, আমাদের ওপর কেমন আপদ নেমে এসেছে। আজ কত দিন বৃষ্টি নেই, মাটি ফেটে যাচ্ছে। খাদ্যপণ্য ও শস্য সব নিঃশেষ হয়ে সর্বত্র দুর্ভিক্ষ হানা দিয়েছে। তুমি দয়া করে আমাদের ওপর থেকে এ দুর্ভিক্ষ উঠিয়ে নাও। মাটির উর্বরতা ও জমির সজীবতা আমাদেরকে দান করো।’
দেখা গেল, আবদুল মুত্তালিবের প্রার্থনা শেষ না হতেই প্রবল বর্ষণে মক্কার উপত্যকা প্লাবিত হয়ে যায়। সবার প্রথম নবীজি পানি পান করলেন। এরপর সবাই পানি নিয়ে ঘরে ফিরল। অভাবনীয় এ অবস্থা দেখে রুকাইকা আনন্দে
গাইতে শুরু করলেন : প্রশংসার আধিক্যের ফলে আল্লাহ আমাদের শহরকে প্লাবিত করলেন
অথচ আমরা নির্জীব হয়ে গিয়েছিলাম, অনাবৃষ্টি দীর্ঘদিন ধরে লেগে ছিল, প্রবল বৃষ্টির পরে তিতির পাখি তার পথ খুঁজে পেল এতে সমস্ত প্রাণী এবং গাছপালাও সজীব হয়ে উঠল, মেঘের বরকতময় পানি দ্বারা সকলে সিক্ত হলো সৃষ্টিজগতে তাঁর মতো ন্যায়পরায়ণ আর কেউ নেই ।
মুদার গোত্রের সুসংবাদদাতা কতই না উত্তম! বিশ্বস্ত মুহাম্মদের মাধ্যমে আল্লাহ আমাদের অশুভ বিষয় সরিয়ে নিলেন,
হিশাম কালবি প্রত্যাখ্যাত। ইমাম বায়হাকি তাঁর দালায়েল গ্রন্থে ওই বর্ণনা দুটি সনদে উল্লেখ করেছেন। প্রথম সনদে তাঁদের দুজনের মধ্যে আবদুল আজিজ ইবনে ইমরান রয়েছেন। তিনিও প্রত্যাখ্যাতদের একজন। দ্বিতীয় সনদে জাহার ইবনে হিসন তাঁর দাদা হুমাইদ ইবনে মুনহিব থেকে বর্ণনা করেছেন। ইমাম জাহবির ভাষ্যমতে তাঁরা দুজনে অজ্ঞাত।
আরো পড়তে অথবা দেখতে :- অনুগ্রহ করে Hardcopy ক্রয় করুন।
We Respect Every Author Hardwork – boipaw.com™
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?