বইয়ের নাম: সবিনয় নিবেদন
লেখক: বুদ্ধদেব গুহ
প্রকাশনা: আনন্দ প্রকাশনী
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ১৫৫
মূল্য: ৩০০ টাকা মাত্র
◽পত্রোপন্যাস! সাহিত্যের এই ধারার সাথে আমার এর আগে পরিচয় হয় মেমসাহেব বই দিয়ে। সবিনয় নিবেদন বইটির মাধ্যমে এই ধারার স্বাদ আবার আস্বাদনের সুযোগ হলো। কেউ যদি এই ধারার আরো কিছু বইয়ের নাম বলেন তাহলে সত্যি খুব খুশি হবো।
◽আচ্ছা, আধুনিকতার এই সহজ(?!) যুগে, যেখানে আমাদের রুচিশীলতা, অনুভূতি, ভালোবাসা, ঘৃনা কিংবা অন্যান্য আবেগ ফেসবুকের সবুজ আলো, মেসেঞ্জারের টুং টাং শব্দ, ইনস্টাগ্রামের লাল হৃদয় এবং টুইটারের টুইটের মধ্যে সীমাবদ্ধ সেখানে এই বইয়ের চিঠিগুলো হঠাৎই যেনো প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলে আমাদের সামাজিকতার নামে অসামাজিকতাকে। চিঠিতে একজন মানুষ যেভাবে নিজের রং ঢেলে দিয়ে এঁকে তুলে ধরে নিজেকে, নিজের পরিপার্শ্বকে, ধ্যান ধারণাকে, মনোভাব কিংবা অন্তরের গহীনে লুকোনো কোনো গোপন দুঃখকে কিংবা ভয়ংকর কোনো পাপকে সেটা কি অন্য কোনো উপায়ে এত নিখুত ভাবে করা যায়? মনে হয় না। দুটি মানুষ পাশাপাশি বসে কথা বলে একে অপরকে যতটুকু চিনতে পারে, চিঠিতে পারে তার চেয়ে শতগুণ বেশি। সবকিছু মিলিয়ে মনে হয়, সামাজিকতা ও যোগাযোগ আরো শ’খানেক মাইল পিছিয়ে গিয়ে যদি চিঠির ভেতর সীমাবদ্ধ থাকতো তাহলে বোধ হয় মন্দ হতো না।
◽দুজন সুরুচিসম্পন্ন মানুষের চিঠি আদানপ্রদানের মাধ্যমেই এগিয়ে যেতে থাকে বইটি। গল্পের নায়িকা ঋতি বেতলার জঙ্গলে নিজের কাকা কাকীর সাথে বেড়াতে যায়। সেখানে এক হাতির দলের সামনে দুর্বিপাকে পড়ে যায় তারা। কিন্তু এই দুর্বিপাকই তাকে পরিচয় করিয়ে দেয়, গল্পের নায়ক রাজর্ষির সাথে। রাজর্ষি বসু, একজন ফরেস্ট অফিসার, দূর্দান্ত, ঝকঝকে, সুশিক্ষিত এক যুবক। যাকে প্রায়ই অরণ্যদেব বলে সম্বোধন করে ঋতি। মূলত প্রথম চিঠিটি শুধু ধন্যবাদ জানিয়ে ঋতি রাজর্ষিকে পাঠালেও, এক পর্যায়ে পরস্পরকে চিঠি লেখা তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়। যদি আপনি ভেবে থাকেন এসব চিঠি শুধু – ” আপনি কেমন আছেন? খেয়েছেন? বাড়ির সবাই কেমন?” এই ধরনের তাহলে আপনার ধারণা ভুল। চিঠিতে উঠে আসতে থাকে তাদের পরস্পরের সমস্যা, এসবের সমাধান, পরামর্শ, যুক্তিতর্ক, জীবনবোধ, ভাবাবেগ ইত্যাদি বিষয়। আরেকটি বিষয় হলো, রাজর্ষির চিঠিতে জামশেদপুর, রাচি, বেতলা, পালামৌ, হাজারীবাগ, এমনকি পূর্ব আফ্রিকার তানজানিয়া, নাইরোবি, সেশেলেস দ্বীপপুঞ্জের দুর্দান্ত বিবৃতি উঠে আসে। মূলত উঠে আসে অরণ্য এবং অরণ্যের হরেক ঋতুতে হরেক রুপ-মাধুর্য্য-গন্ধ-শব্দ। ফলে ঋতি এসব জায়গা নিজের চোখে দেখতে না পেলেও, দেখতে পায় কল্পনার চোখ দিয়ে। কিন্তু উপন্যাসের ঘটনা এতটুকুতেই থেমে নেই। ঋতির জীবনে আরো একজন আছে, তার বাগদত্তা, অশেষ। অন্যদিকে রাজর্ষির জীবনে আছে তার প্রাক্তন স্ত্রী বনী যাকে রাজর্ষি কোনোদিনই ফিরিয়ে দিতে পারে না। হঠাৎ যেনো রং বদলাতে থাকে অশেষ, বিলেত যাওয়ার পর থেকেই চেনা জানা মানুষটি হঠাৎ কেমন অচেনা হয়ে যায় ঋতির কাছে। ঋতি বুঝতে পারে অশেষ তার মোহ ছিল, ভালোবাসা নয়। কিন্তু রাজর্ষির কাছেই বা কি নিশ্চয়তা নিয়ে যাবে ঋতি, যে নিজের প্রাক্তন স্ত্রীকে ভালবাসে আজও। দ্বিধাদ্বন্দ্বের এই মুহূর্তে ঋতি নেয় তার জীবনের সিদ্ধান্ত।
◽ বইটির বিভিন্ন বিষয় বেশ ভালো লেগেছে। ঋতির চিঠির চেয়ে রাজর্ষির চিঠিগুলো বেশি মুগ্ধতা নিয়ে পড়েছি। এত সুন্দর করেও চিঠি লেখা যায়! চিঠিগুলোতে রাজর্ষির জীবনবোধ প্রতিফলিত হয় ব্যাপকভাবে, যার সাথে আমি আপনি সম্পূর্ণ একমত নাও হতে পারি।
হ্যাপি রিডিং 🌻
Leave a comment