💠 শঙ্খনীল কারাগার
— হুমায়ুন আহমেদ
===============
আজ ১৯শে জুলাই ২০২২!
নন্দিত কথা সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের ১০ প্রয়াণ দিবস!
কিভাবে এবং কত দ্রুত সময় চলে যায়, মনেতো হয় যেন এ সেদিন উনি চলে গেছেন দুনিয়া থেকে!
আজ হুমায়ুন আহমেদের প্রথমদিকে প্রকাশিত একটি উপন্যাস
শঙ্খনীল কারাগার পড়ে শেষ করলাম! স্ক্রিন জেনারেশনের এ যুগে অন্তত হুমায়ুন আহমেদের বই একটা ভালো উপকরণ হতে পারে মানুষকে মোবাইলের রেডিয়েশন থেকে কিছুটা মুক্তি দিতে!
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এ উপন্যাসটি বহুল আলোচিত এবং
হুমায়ুন আহমেদ সাহিত্য অনুধাবনের জন্য উল্লেখযোগ্য কয়েকটি উপন্যাসের একটা! শঙ্খনীল কারাগার নামটিও চমৎকার!
আর ৮/১০ টা চাকুরীজীবি বাঙ্গালী মধ্যবিত্ত বা নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের মত একটা পরিবারের জীবনচিত্র উঠে এসেছে এ উপন্যাসে।
চাকুরীজীবি বাবা, গৃহিনী মা, ২ ভাই ও ৪ বোনের সুখের সংসার ছিল, শেষ বোনের জন্মের সময় মা মারা যায়, বড় বোন রাবেয়া সংসারকে আগলে রাখে! মাঝে ২য় বোনের মৃত্যু, ৩য় বোনের বিবাহের পর দূরে চলে যাওয়া, ছোট ভাই পড়ালেখা বাদ দিয়ে মাঝপথে লেখালেখি ও সাংবাদিকতায় জড়িয়ে যাওয়া, একপর্যায়ে বাবার অবসর!
এখানে নায়ক খোকা, ইউনিভার্সিটি শেষ করে একটা কলেজে শিক্ষকতায় চাকুরী করে! নানাদের সাথে তার মায়ের বিয়ের পর থেকেই বিচ্ছিন্ন থাকা, টানাপোড়েনের সংসারে কতধরনের বাস্তবতার মুখোমুখি হয় তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা! কিন্তু তাদের পরিবারে ভাইবোনদের মাঝে দারুণ ভালোবাসাও আন্তরিকতার সম্পর্ক ছিল!
উপন্যাসের একেবারে শেষ দিকে উঠে এসেছে অন্য আরেক কাহিনী, খোকার মায়ের আগে আরেক বিয়ে হয়েছিল এবং তার বড়বোন রাবেয়া ১ম সংসারের সন্তান, যা খোকা সহ অন্য ভাই বোনরা জানতোনা! রাবেয়াকে স্কুল ছুটির পর গাড়িতে করে বিভিন্ন জায়গায় যিনি বেড়াতে নিয়ে যেতেন, অনেক কিছু কিনে দিতেন, বিদেশ থেকে চকলেট নিয়ে এসেছেন এবং শেষ দিকে রাবেয়াকে অনেক টাকার একটা চেক দিয়ে যান, তিনিই তার আসল বাবা! মেয়ের জন্য বাবার ভালোবাসা, কি দারুণ ভালোবাসা !
মাঝপথে পড়ালেখা বন্ধ করে দেয়া রাবেয়া আবার কলেজে ভর্তি হয়ে পড়ালেখা শেষ করে এবং মেয়েদের হাইস্কুলে চাকুরী নিয়ে দূরে চলে যায় আর ছোট ভাই খোকাকে চিঠি লেখে! কি সুন্দর সে চিঠি! কিংবা খোকার ছোট বোন রুনুর মৃত্যুর পরে খুজে পাওয়া ডায়েরিতে পরিবার ও ভাইবোনদের বিষয়ে লেখা কথাগুলো কি সহজ, সরল ও সুন্দর! চোখের পানি আসবে!!
🔹’দিতে পারো একশ ফানুস এনে?
আজন্ম সলজ্জ সাধ একদিন আকাশে কিছু ফানুস উড়াই। ‘
🔹মৃত্যুর জন্য মানুষ শোক করে ঠিকই, কিন্তু সে শোক স্মৃতির শোক, এর বেশি কিছু নয়।
🔹আশ্বিন মাসে সবচেয়ে সুন্দর জোছনা হয়।
🔹 রমণীর মন সহস্র বর্ষের সখা সাধনার ধন।
🔹 মেয়েদের দু’টি জিনিস খুব খারাপ — একটি হচ্ছে সাহস, অন্যটি গোয়ার্তুমি।
🔹 সব মানুষই তো কবিরে বোকা।
🔹 মেয়ে মানুষের দুঃখ তো বলে বেড়াবার নয়, ঢেকে রাখবার, চিরদিন তিনি তাই রেখে গেছেন।
🔹 আদিগন্ত বিস্তৃত শূন্যতায় কী বিপুল বিষন্নতাই না আনুভব করি….. একদিন যাদের সঙ্গ পেয়ে আজ নিঃসঙ্গতায় ডুবছি!
এরকম দারুণ কিছু লাইন আছে!!
এ বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৭৩ সালে, তার মানে পাকিস্তান পিরিয়ডের শেষ ও বাংলাদেশ সময়ের শুরুর দিকের সমাজ বাস্তবতার পারিবারিক চালচিত্র উঠে এসেছে এ উপন্যাসে।
অত্যন্ত সহজ ভাষায় লেখা এ উপন্যাস একবার শুরু করলে একটানে শেষ হয়ে যাবে আশাকরি! যেহেতু একটি পারিবারিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট উঠে এসেছে তাই আমার খুব ভালো লেগেছে!
হুমায়ুন আহমেদের প্রিয়জন ছিলেন আহমদ ছফা, উনি এবং আনিস সাবেতকে উৎসর্গ করা হয়েছে এ শঙ্খনীল কারাগার! ৭৭ পৃষ্ঠার এ উপন্যাসটি একটি সুখপাঠ্য নিঃসন্দেহে!
Leave a comment