আগেই কয়ে নিই ধর্ম নিয়ে কচলাইতে চাইলে অনেক লোক পাবেন৷ আমি শুধুমাত্র বইটার রিভিউ করেছি৷
প্রেমের স্বরুপই বোধহয় ব্যাথা পাবার৷ আগলে রাখবো বলে কাছে এসে এরপর মন উঠে গেলে দু’জন দুই মেরুতে৷ দেয়া কথাগুলো পরে থাকে শতেক দেয়াল উঠে যায় দু’য়ের মাঝে৷ একজন সব ভুলে নতুন আমিত্বকে নিয়ে শুরু করে অপরজন তা পেরে ওঠে না৷ পেরে ওঠার সব শক্তিটুকু তো সেই মানুষটিকেই দিয়ে দিয়েছে দুয়ে মিলে ‘আমরা’ হবে বলে৷
প্রেম কি নিদারুণ নিষ্ঠুর ভয়ংকর রকমের স্রোত হয়ে দু’টো শরীরকে দু’টো মনকে এক করে দেয়৷ সমাজ, সংষ্কার, লাজ,লজ্জা এসব ঠুনকো জিনিস কর্পূরের মতোন উবে যায়। সুন্দর সুস্থ দৈহিক-মানসিক মিলনের আকাঙ্খা দু’টো মানুষকে ভেসে নিয়ে বেড়ায়৷ প্রেমটুকু যে কি ভীষণ দারুণ। মান, অভিমান, রাগ সব অলংকার ঠুনকো হয়ে ঝরে পরে দু’জনের এক হবার সাথে সাথেই৷ এরপর প্রেম চলে গেলে থেকে যায় স্মৃতিগুলোর যন্ত্রণা। নিষ্ঠুর নিরুত্তাপ উদাসীনতা অঙ্গে লেগে থাকে প্রেমহীন মানুষের অঙ্গে৷
কৃষ্ণ তাঁর প্রেমের জন্যই শ্রীকৃষ্ণ৷ পূজিত হোন রাধা’কে সঙ্গে নিয়েই। রাধাকৃষ্ণ। অথচ রাধার সেই কৃষ্ণ দর্শনের আকুতি কেউ জানতে চায় না৷ যমুনার তীরে রাধার অশ্রুগুলো সেই কবে শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়। আকুতি ভরা প্রেম প্রার্থনা –
“যমুনার তীরে একা উঁচু এ মহলে,
আমি ব্রজ বিলাসিনী ডুবেছি অতলে৷
রাধা অভাগিনী মোর নাম,
দেখা দাও ঘনশ্যাম।”
কিন্তু কৃষ্ণ আসে না৷ কৃষ্ণ তখন রাজা। কৃষ্ণ কংস বধ করে মথুরার সিংহাসনে৷ বিশ্ব সংসার সাজাতে বসে৷ তাঁর অনেক কাজ৷ বালসুলভ আচরণ তাঁর মানায় না তখন৷ কিন্তু রাধা? কি তাঁর অপরাধ? এই যে সে কৃষ্ণ প্রেমে সাড়া দিয়েছিলেন? অভাগীর ভাগ্যে ওটুকু প্রেম জোয়ারের পর যে চিরকাল কাটলো চোখের জলকে নদী বানিয়ে তার বোধহয় কোন দাম হয় না৷
সেই সুর রাধার যেনো হয়ে বাজতে থাকে –
” ভ্রমর কইয়ো গিয়া শ্রীকৃষ্ণ বিচ্ছেদের অনলে আমার অঙ্গ যায় জ্বলিয়া।
কইয়ো কইয়ো কইয়ো রে ভ্রমর কৃষ্ণরে বোঝাইয়া মুই রাধা মইরা যামু কৃষ্ণ হারা হইয়া রে ভ্রমর…”
রাধা অপেক্ষা করে প্রতি পূর্ণিমাতে অঙ্গে কুমকুম লাগিয়ে নিজেকে সাজিয়ে কানু আসবে বলে৷ কানু ভালোবাসবে বলে৷ রাধা অপেক্ষা সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালিয়ে যমুনার তীরে কানু আসবে বলে৷ রাধা কান পেতে থাকে কানু বাঁশি বাজাবে বলে। সেই করুণ অভিমানী বাঁশি রাধাকে ডাকবে বলে। রাধা অপেক্ষা করে সেই বাঁশি শুনে ছুটে যাবে কানুর তরে। কানুর কাছে সমার্পিত করবে নিজেকে।
কিন্তু কানু আসে না৷ কানু আসে না৷
লোকে বলে কৃষ্ণ ভগবান৷ তবে কেন সে মান রাখতে পারবে না জেনেও রাধার প্রেম চাইতে গেলো? এতো করে যে চাওয়া বিখ্যাত হবার পরে মিইয়েই বা কেন গেলো? শুদ্ধ যে প্রেম, সে প্রেম রাধার। শুধু এক আকাশ বিষাদ আর অশ্রুজল। এসব দিয়েই কি ভগবান পূজিত হোন, মহান হয়ে থাকেন চিরকাল?
আর আমরা এই নিয়ে খুশি থাকি কৃষ্ণের সাথে কৃষ্ণের আগে রাধার নাম ধরে ডাকা হয় “রাধাকৃষ্ণ”। রাধা নামে মাতম তুলি। ভবের ঘোরে হারিয়ে যাই কিন্তু অমন অবহেলা তো রাধার পাবার কথা ছিলো না। ভালোবাসাহীন অমরত্বে আদতে কি লাভ? কি পাওয়া হয় তাতে? একটুকরো ছিন্ন প্রেম পাওয়াতে যদি কেউ অ’ঈশ্বরও হয় আমি তাকেই সমর্থন করবো৷ করে যাবো আমিত্ব থাকা পর্যন্ত।
রাধাকৃষ্ণ।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়৷
মাটিগন্ধা।
১৬০৳।
#টিম_শর্মিষ্ঠা_০৯
Leave a comment