বইয়ের নাম: মোহমেঘ
লেখক: শারমিন আঞ্জুম
প্রকাশনী: উপকথা
প্রচ্ছদ: সাদিতউজ্জামান
মূল্য: ৩০০ টাকা
রিভিউ লেখনীতেঃ আরফিয়া
√ প্রথমত তখন আমি শারমিন আঞ্জুম আপুকে চিনতাম না। বইয়ের জগতে আমি সদ্য পা রেখেছি। প্রচ্ছদে থাকা আকৃষ্ট করার মতো এই মেয়েটি দেখেই আগ্রহ জন্মেছিলো। তারপর ‘মোহমেঘ’ নামটি আমার ভীষণ পছন্দ হয়ে গেলো। তখনই ঠিক করেছিলাম এই বইটি আমি কিনবো। অথচ এটি কেনা হয়েছে সবার শেষে।
√ বাস্তবিক অর্থে একটা মেয়ের জীবন কতোটা কঠিন, সেটা শুধু মাত্র একটা মেয়েই জানে।
’মোহমেঘ’ তরু নামে একটি মেয়ের আত্মকথন মাত্র।
ডিভোর্সের পর একটি মেয়ে দ্রুত আরেকটি বিয়ে করে নিলে সে হয়ে যায় উচ্চ পর্যায়ের চরিত্রহীন। পুরুষের প্রতি তার কামনার বিশ্রী সব বর্ণনার গুঞ্জন উঠে চারদিকে।
আবার ডিভোর্সের পর যদি মেয়েটি একা চলার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে সমাজের কিছু মুখোশধারী পশু মেয়েটিকে সরকারি বস্তু ভাবতে শুরু করে। মাথার উপর স্বামীর নিরাপত্তার ছাদ নেই, এমন একটি মেয়ের দিকে এগিয়ে আসে কতোগুলো লোলুপ দৃষ্টি!
√ তরু মেয়েটির জীবনে এমন একটি মুহূর্তের বর্ণনা পড়তে গিয়ে কখনো মনে হয়েছে, ‘বিয়েটা না ভেঙে ওখানে মাটি আকড়ে পরে থাকাই মনে হয় ভালো ছিলো। মানসম্মানটুকু হয়তো থাকতো।’ কিন্তু পরমূহুর্তে মনে পরলো, আত্মসম্মানটুকু তো থাকতো না।
√ একটা মেয়ের জন্য তার সংসার, স্বামী ছেড়ে একা জীবন-যাপন করা কতোটা কঠিন? এই বইয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। তরুর ভাষায় ডিভোর্সি মেয়েদের মানসিক অবস্থার সুনিপুণ বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।
√ আট বছরের সংসার, ভালোবাসায় সিক্ত করে রাখা স্বামী ফেরদৌস, দীর্ঘদিনের অভ্যাস ছেড়ে গিয়ে হঠাৎ একা হয়ে যাওয়া মেয়েটাকে প্রত্যহ সইতে হয়েছে নিজ পরিবারের অবহেলা, প্রতিবেশীদের কানাঘুষো, আশেপাশের পুরুষদের নোংরা দৃষ্টি।
সেই সাথে নিজের মনের সাথে দ্বন্দ তো আছেই।
নিজের সাথে লড়াইয়ে কখনো হেরে গিয়ে ফিরতেও চায় ফেরদৌসের কাছে।
একে তো মনের মাঝে ফেরদৌসের মোহের মেঘ ভীড় করে আছে, তার উপর অতীত যেনো দুহাতে জাপটে ধরে নিজের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।
নিজের মন, অতীতের ছায়ার সাথে লড়াই করে সম্মুখে দাঁড়িয়ে থাকা উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ, সুখী জীবনের দিকে হাত বাড়াতেও ভয় হয় তরুর।
পুরুষ মানুষের প্রতি বিশ্বাসটাই যেনো উঠে গেছে।
অথচ তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ভবিষ্যৎ, সামের কল্পনার থেকেও চমৎকার একজন মানুষ। বাস্তবিকভাবে যার দর্শন কখনো মিলবে না। এমন ধৈর্য্য, এমন ত্যাগ নিয়ে ভালোবাসার মতো পুরুষ এই জগতে নেই। এতো নিখুঁত ভালোবাসা পৃথিবীর বিষাক্ত বাতাসে দূষিত হয়ে গেছে।
কিন্তু তরু তো ফেরদৌসের মোহ থেকে নিজেকে মুক্ত করতেই পারছে না। মন তো পাপ-পূর্ণের বাইরে গিয়ে নিজের মতো সিদ্ধান্ত নেই। ছেড়ে আসা অতীত নিয়ে দুঃখবিলাস করতে গিয়ে বর্তমান সায়ের এর সাথে করা অন্যায় তরুর চোখেই পরে না। তার চোখে তো মোহের মেঘ।
√ সাংসারিক জটিলতা, মানসিক দ্বন্দ সেই সাথে পাতায় পাতায় চমৎকার থ্রিল, পিলে চটকানো রহস্য, মুখোশের আড়ালে কিছু সত্য- সব মিলিয়ে বইটি চমৎকার। বই পড়তে গিয়ে যে চরিত্রগুলোর মোহে পরে গিয়েছিলাম, বইয়ের শেষে এসে সত্যের মুখোমুখি যখন হলাম, মনে হলো নিজেরই মোহমেঘ কেটে গেলো।
Leave a comment