◆বই পরিচিতি:
বইয়ের নাম: মানবতার দেওয়াল
(একটি সামাজিক উপন্যাস)
লেখক: নাবিল হায়দার
প্রকাশায়: পরিবর্তন প্রকাশন
প্রকাশকাল: অমর ২১ই বইমেলা মার্চ ২০২২
মুদ্রিত মূল্য: ২৭৫ টাকা মাত্র
বইয়ের পৃষ্ঠা সংখ্যা: ১৭৬
◆লেখক-পরিচিতি: জন্ম: ২০০১,১৩ই সেপ্টেম্বর, কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলায়। ভালোবাসেন পড়তে-লিখতে; বলে যেতে জীবনের গল্প। সমস্যাবহুল জীবনের সমাধান-সম্ভাবনা খোঁজেন ভাবনার তলদেশ থেকে। সামাজিকতার ভেতর থেকেই চান ভারসাম্যপূর্ণ-আদর্শ-সুন্দর সমাজ গঠনে অবদান রাখতে। তিনি বিশ্বাস করেন, পরস্পর সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধে।
লিখে চলেছেন গল্প-উপন্যাস-কবিতা। ‘মানবতার দেওয়াল’ প্রকাশিত প্রথম উপন্যাস; প্রথম বই।
◆চরিত্র-চিত্রণ: তামিম, ইমতিয়াজ, ইতি, সানজিদা, সালেহ আরসালান, বরকেত হুসেন, তামিমের মা, ইমতিয়াজের মা, নাসরিন বেগম, আয়ান, স্মিতা, নাহিদা, ফাইজা, স্নেহা, সাজিদ।
◆পাঠ-সংক্ষেপ: “ইমতিয়াজের নির্মম মৃতুর” স্বপ্ন দেখে ঘুম ভাঙে ইতির। প্রায় তিন বছর ধরে যে স্বামীর এতটুকু সহানুভূতি পাওয়ার সৌভাগ্য হয়নি ইতির ; সেখানে ইমতিয়াজের প্রসঙ্গে তামিম কোমল ব্যবহার করে ইতির সাথে! কে হয় এই ইমতিয়াজ তামিমের!
তামিম-ইমতিয়াজের সেই ছোটবেলার বন্ধুত্ব। কিন্তু জীবনের মধ্য পর্যায়ে এসে তাদের সম্পর্কে কিছুটা ভাঁটা পড়ে; তবে তা দীর্ঘ হয় না। তামিম স্কুল থেকে আর ইমতিয়াজ মাদরাসা থেকে পড়াশুনা সমাপ্ত করে সমাজের অজ্ঞাত মানুষজনকে ইহকাল ও পরকাল উভয় শিক্ষায় শিক্ষিত করার সংকল্প করে।
ইমতিয়াজের বিয়ে ঠিক হয় সানজিদা নামক একটি নিম্নবৃত্ত পরিবারের মেয়ের সাথে; যে ইমতিয়াজকে মন দিয়ে দিয়েছে সেই ছোটবেলায়। কিন্তু আমাদের সমাজ, সমাজের কিছু কলুষিত মানুষ! হঠাৎ একদিন রসুলপুর গ্রামের মানুষ জানতে পারে, ইমতিয়াজকে সানজিদার ধর্ষণের দায়ে কারাবদ্ধ হতে হয় এবং সেখানেই আত্মহত্যা করে ইমতিয়াজ। কিন্তু আসলেই কি তা ঘটেছিল, যা দেখানো হয়েছে! বন্ধুর মৃত্যুর শোকে পাগলপ্রায় অবস্থা হয় তামিমের, তার জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য হয়ে উঠে বন্ধুর খুনিকে খোঁজে শাস্তি দেওয়া। তখন ইতি ভালোবেসে একপ্রকার পরিবারের অবাধ্য হয়েই বিয়ে করে তামিমকে; অথচ প্রায় তিন বছরেও একটু স্ত্রীর অধিকার পায় না ইতি। সব মেনে নিয়ে আল্লাহর উপর ভরসা রেখে তামিমের বাজে আচরণ সহ্য করেও ইতি পড়ে থাকে তামিমের কাছে।
আর ইতির ঘনিষ্ঠ বন্ধু সানজিদা; যে ইমতিয়াজের জন্য পাগলপ্রায় ছিল! সানজিদা আস্কারায় সালেহ্ আরসালান নামে এক তরস্ক যুবককে বিয়ে করে।
তামিমের বাবা বরকত হুসেন, যে তামিমের মাকে ডিভোর্স দিয়ে নাসরিন বেগম নামে একজন মহিলাকে বিয়ে করেন, রসুলপুর গ্রামের “আইডল পলিটিক্যাল লিডার” হিসেবে খ্যাত। তিনি কি আসলেই আইডল ছিলেন, নাকি কুলষিত এক বিষাক্ত মানব!
সানজিদার অতীতের স্মৃতিচারণের মাধ্যমে এক নিষ্ঠুর সত্য ফুটে উঠে ইতির চোখের সামনে। যে মানুষগুলো আগে শ্রদ্ধার পাত্র ছিল, সে মানুষগুলোই হয়ে উঠে ঘৃণার পাত্র!
নাসরিন বেগম তামিমকে সম্পদের লোভ দেখিয়ে মা ও বউকে ছেড়ে দিতে বললেও তা দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করে তামিম। এমনকি তার বাবার এতটুকু সম্পত্তির ভাগ নিতেও রাজি হয় না তামিম। তাহলে কি শেষে তামিম তার বন্ধুর খুনি সম্পর্কে অবগত হতে পেরেছিল!
সর্বশেষে, ইতির দীর্ঘ ধৈর্য্যধারণের ফল সে পায়, পায় তামিমের কাছ থেকে স্ত্রীর মর্যাদা, তামিমের ভালোবাসা। আর সানজিদা! তাকে অসুখীর মধ্যেও সুখী থাকতে হয় সালেহ আরসালানের সাথে!
উপন্যাসের মাঝখানে আয়ান-স্মিতার কিশোর বয়সের ভিন্নধর্মী এক প্রেমকাহিনীও ফুটে উঠে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণভাবে।
◆ব্যক্তিগত মতামত: কিছু নবীন লেখকদের বই পড়ে আমার একটা ভুল ধারণা জন্মেছিল নবীন লেখকদের উপর। তাই তেমন একটা পড়তে আগ্রহ পায় না নবীন লেখকদের বই। মানবতার দেওয়াল বইটির রিভিউ পড়ে ভেবেছিলাম, মোটামুটি ভালোই হবে বইটা। তাই মোটামুটি আগ্রহের সাথেই শুরু করি বইটা। আর আলহামদুলিল্লাহ্, আমার একটুও হতাশ হতে হয়নি বইটি পড়ে। বস্তুত নাবিল হায়দার ভাইয়া আমার এতোদিনের ভুল ধারণাটাই ভেঙে দিলেন।
যারা সামাজিক উপন্যাস পড়তে সাচ্ছন্দবোধ করেন; তাঁরা নির্দ্বিধায় পড়তে পারেন বইটি। আশা করি, পুরোপুরি হতাশ হবেন না।
লেখকের পরবর্তী বইয়ের অপেক্ষায় রইলাম, ইনশাআল্লাহ।
◆ব্যক্তিগত রেটিং: ৯.৫/১০
©সাইমুন আকতার দিনা
০৫/০৮/২০২২
সন্ধ্যা: ৭:০৮🥀🖤
(বি:দ্র: ছবির দিকে কেউ নজর দিয়েন না। অলস মাইয়া, ছবি তুলতেও ইচ্ছে করেনা। এটা আগের তোলা।😑)
Leave a comment