বইঃ মানবজনম
লেখকঃ সাদাত হোসাইন
দামঃ ৭০০/-
প্রকাশনাঃ ভাষাচিত্র
কিছুদিন আগে এই বইটি নিয়ে একটা পোস্ট করি। ভাইরে ভাই,এতো লাইক আর কমেন্ট দেখে আমি অবাক। অবশেষে এই বইয়ের একটা রিভিউ করলাম। দয়া করে সম্পূর্ণ পড়ে দেখেবন।
পাঠ সংক্ষেপঃ
নয়ন, ফতেহপুরের খা বাড়ির নাতি,কোহিনুরের একমাত্র সন্তান। কোহিনূরের সাথে তার বাবা তৈয়াব উদ্দিন খা এর সম্পর্ক যেন অহি নকুলের মতো। বিয়ের পর বাবা মুখ আর দেখেন নি তিনি। তাদের বাড়িতে কাজ করে আসমা নামের এক মেয়ে। আসমার সাথে নয়নের সম্পর্ক ভাই বোনের মতো। কিন্তু হঠাৎ একদিন আসমা সুইসাইড করে। আর তা মেনে নিতে পারে নাহ নয়ন। সুইসাইড করার সময় আসমা গর্ভবতী থাকে। আর তারই রহস্য সমাধান করতে নয়ন আসে ফতেহপুর গ্রামে।
এখানে এসে তার সাথে পরিচয় হয় আব্দুল ফকির নামে এক ব্যাক্তির। সে একজন ওঝা। সাপ, জিন,পরী ইত্যাদি দূর করতে সে সিদ্ধহস্ত। তবে নয়ন জানে সে খুব একটা সুবিধার মানুষ নয়। কিন্তু সে একজন ভালো পিতা তাতে সন্দেহ নেই। তার একমাত্র মেয়ে পারুল। তার একমাত্র ইচ্ছা শহুরে ছেলে বিয়ে করা। তাই হয়তো নয়নের জন্য তার একটা অনুভূতির জন্ম নেয়। আবার, স্ত্রী নূরুন্নাহারের সাথে আব্দুল ফকিরের সম্পর্ক খুব খারাপ। তাকে পাগলের তকমা দিয়ে আব্দুল ফকির তাকে ঘরে আটকে রাখে।কিন্তু কেন?? আব্দুল ফকিরের কোন রহস্যের কথা জেনে গেছে নুরুন্নাহার??????
অন্যদিকে তৈয়ব উদ্দিন খা একজন ক্ষমতালোভী মানুষ। ক্ষমতার জন্য সে সব কিছু করতে পারে। কিন্তু তার স্ত্রী আমোদী তার এই সব কাজ পছন্দ করে না। তাই সে যৌবন কালে তৈয়ব উদ্দিন খা এর হাতে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়। কিন্তু তৈয়ব উদ্দিন খা র পরে এই বংশে তার মতো দানব আর নেই৷ তাই সে তার আরেক নাতি মনির কে তার মতোই দানবে পরিণত করে যে কিনা ছিল সহজ সরল মনের। অবশেষে তার পরিনতি কি হবে?????
হেমা,নয়নের প্রেমিকা। তবে জীবনে তার সমস্যাও কম নয়। তার বাব মা এর ডিভোর্স সে হাসি মুখে মেনে নিলেও মনে মনে সে কি চায় তা সে নিজেও জানে না। তার বাবার রয়েছে আরেকজন প্রিয় মানুষ। সাংসারিক সমস্যা টানাপোড়েনে তার বাবা মুক্তি চায় হেমার মার কাছে। হেমার মা ও মেনে নেয় তা। অন্যদিকে হেমা নয়নকে নিজের কাছে চাইলেও নয়ন যেন আসমার চিন্তায় পাগল। এই সময়ে,দুর্ঘটনার মুখে পড়ে হেমা, চলে যায় কোমায়।
পারুল,যার স্বপ্ন কোনো শহুরে ছেলেকে বিয়ে করে শহরে যাওয়া। এক সময় তার বন্ধু লতার সহায়তায় সে এক শহুরে ছেলের প্রেমে পড়ে। অবশেষে তাদের সম্পর্কের পরিনতি কি হবে??????
পজিটিভ দিক
১) কাহিনী সুন্দর। লেখক প্রায় বিস্তৃত পরিসরে ৫/৬ জনের কাহিনি একসাথে তুলে ধরেছেন। তাই বইএর সাইজ টা বড় হয়েছে।
২) গ্রাম্য পলিটিক্স নিয়ে যাদের কোনো ধারণা নেই তারা এই বই পড়ে এই বিষয়ে পিএইচডি করতে পারবেন।
৩) নতুন নতুন প্রেম করে যে সব কপোতীরা নিজেদেরকে কপোতদের কাছে উজাড় করে দেয়, তারা বুঝতে পারবে তাদের পরিনতি কি হতে পারে।
৪) ❝ কুপুত্র যদি বা হয় কুমাতা কখনো নয়❞ উপন্যাসের আরেক দিক তুলে ধরে।
৫) সৃষ্টিকর্তা আমাদের এই জন্মের সকল পাপের শাস্তি এই জন্মেই দিয়ে থাকে বোধ হয়…তার উপযুক্ত প্রমাণ এই বই।
৬) লেবু বেশি চিপলে যেমন তেতো হয়ে যায়, তেমনি সহজ সরল মানুষকে দানবে পরিণত করলে সে হয়ে ওঠে তার চেয়েও ভয়ঙ্কর…ফুটে ওঠেছে এখানে।
নেগেটিভ দিক
১)কাহিনি খুব সুন্দর হলেও স্টোরি টেলিং একেবারেই স্লো।আমার পড়ার সময় মাঝে মাঝে মনে হয়েছে ছেড়ে দিই।কিন্তু ধৈর্য্য ধরে পড়লে আশা করি ভালো লাগবে।
২) এই উপন্যাসের কোনো চরিত্রই সাংসারিক ভাবে সুখী নয়।প্রতি চরিত্রে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে রয়েছে চরম ঝামেলা। বিশেষ কোন স্ত্রীই তার স্বামীদেরকে ভালোবাসার নজরে দেখে নাহ। বই পড়ার সময় মনে হয়েছে ডিভোর্স লয়্যারদের বই পড়ছি
৩) মাঝে মাঝে কিছু বাড়তি কথাবার্তা দিয়ে বইয়ের পৃষ্ঠা সংখ্যা বাড়িয়েছে।
এইবার আসি আসল কথায়। কয়েকটি লাইনে হুমায়ূন আহমেদের বইয়ের লাইনের ছোয়া পেয়েছি। তবে এমন হতে পারে সাদাত হোসেন সেই লাইন গুলো থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছে তাই সে লাইন গুলো তার মতো তুলে ধরেছেন।হুমায়ূন আহমেদের একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তিনি সাধারণ ভাষায় অসাধারণ বক্তব্য তুলে ধরেন। আর সাদাত হোসেন এখনো সে পর্যায়ে যায় নি। তাই যারা তাকে হুমায়ুন আহমেদ এর সাথে তাকে তুলনা করে তারা নিতান্তই বোকা বলে আমি মনে করি। তবে তার লেখা খুব একটা খারাপ নাহ। পড়ে দেখতে পারেন। আশা করি খারাপ লাগবে নাহ।
পারসোনাল রেটিং৭/১০
Leave a comment