এই যে রূপ রস আর গন্ধের পৃথিবীতে কিছু সুবিধাবাদী হায়েনার দল আছে এরা পৃথিবীকে মহনরক করতে চায়। সাম্রাজ্যবাদ আর পুঁজিবাদের এক অদৃশ্য কারাগারে আমরা বন্দী। আমরা জানি না আমরা কবে মানুষ থেকে হয়ে গেছি আদিম রোবট। আমরা এমন এক অভিনয় শিখে গেছি যেখানে আগ্নেয়গিরির মধ্যে বসেও পুষ্পের হাসি হাসতে জানি। অথচ আমাদের অস্তিত্বে এক আদিম হাহাকার আছে: এক চিলতে রোদের জন্য আবহমানকালের বুকফাটা হাহাকার। যাপিত জীবন মানে এক নদী পিরানহার মাঝে ডুবে যাওয়া জাহাজের ডুবুডুবু যাত্রীদের মতো ডুব জলে কঙ্কালের সাঁতার কাটা। এক প্রাগৈতিহাসিক দানব আমাদের পরাজিত করে। আর আমরা ঠকে ঠকে আরও ঠকতে চাই কারণ আমরা পাশ্চাত্য নই; নিরন্তর ঠকে যাওয়া প্রাচ্য। ঠকে যাওয়ার অমোঘ নিয়তি নিয়ে আমাদের জন্ম।
“মহানরক” কাব্যটি কবি Hashim Kiam স্যারের একটি মূল্যবান বই। বইটিতে ধরা পড়েছে আমাদের বর্তমান সমাজের সাম্রাজ্যবাদী শোষক শ্রেণির নির্মমতা আর নিষ্ঠুরতা। মাত্র বিশটি কবিতার বইটি যেন শোষণ আর বঞ্চনার টাটকা দগদগে ঘায়ের প্রতিচ্ছবি। যেন ঠকে যাওয়া মানুষের গোপন বিদ্রোহ। এ যেন বঞ্চিত অবহেলিত শোষিত মানুষের নীরব ভাষ্য। কবিতার ব্যাপ্তি শুধু বাংলাদেশের মধ্যেই নয়। সমগ্র নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষের কথা। সাম্রাজ্যবাদের কড়াল গ্রাসে কীভাবে বিভিন্ন জনপদ উপদ্রুত হয়েছে তারই ব্যঞ্জনাময় বহিঃপ্রকাশ।
আছে কবির নিষ্পাপ স্বীকারোক্তি:
আমি ব্রাহ্মণ নই – নমশূদ্র
আমি আশরাফ নই – আতরাফ, আমাকে কোল অথবা কৈবর্ত-ও বলতে পার।
কবি যেন নিম্নস্তরের সব মানুষের প্রতিনিধি। স্বাভাবিক বেঁচে থাকার মধ্যেও মানুষ যে সর্বদা বঞ্চিত হয়ে চলেছে তা যেমন তার চোখ এড়িয়ে যাচ্ছে তেমনি সে বুঝে উঠতে পারছে না কোনটি গোলাপ আর কোনটি হুকা; কোনটি চন্দ্রনাভি আর কোনটি নিকোটিনমাখা ওষ্ঠ। সেজন্য তিনি ভাবছেন তিনি যেন এক আদিম রোবটের প্রতিনিধি। অথচ স্বপ্ন দেখতে ভুলে যাচ্ছে না:
হয়ত সে একদিন বিশাল ঝড় হবে
স্বপ্নমুক্তি সেদিন রঙিন ডানা মেলে অবাধে উড়বে।
সুন্দর উপমা, সাবলীল বর্ণনা, সীমাহীন অমীমাংসিত প্রশ্ন , সময় সচেতনতা, যুগ যন্ত্রণা আর শোষিত বঞ্চিত মানুষের হাহাকারের এক জ্বলজ্যান্ত প্রতিচ্ছবি যেন কবিতাগুলি। যারা বর্তমান সময়কে নিয়ে, সমাজকে নিয়ে সন্তুষ্ট, যারা ভাবে ভালো আছে, বেশ আছে তাদের যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে এক অদৃশ্য আদিম কারাগারে প্রাগৈতিহাসিক দানবের মহানরকে আমাদের বাস।
ঝরঝরা বাক্যে লেখা কবিতাগুলো একটানা শেষ করা যায় কোনো ক্লান্তি ছাড়া। কবির জন্য রইলো নিরন্তর শুভকামনা। আরও আরও যুগোপযোগী কবিতা দিয়ে আমাদের ধন্য করুন।
বইটি গিফ্ট করে পড়ার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য B M Tohidul Islam ভাইর প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা। ব্যস্ততার কারণে আগে পড়ে শেষ করে রাখলেও পাঠানুভূতি ব্যক্ত করতে পারিনি।
Leave a comment