ভাঁটফুলের_সৌরভ
‘মানুষ মরে গেলে পচে যায়, বেঁচে থাকলে বদলায়, কারণে-অকারণে বদলায়।’ আসলেই কি মানুষ বদলায়? নাকি পারিপার্শ্বিকতার কারণে মানুষকে বদলে যেতে হয়? এই যে আমি, একসময় আমার রিভিউ লেখার খুব শখ ছিল। প্রতিটা রিভিউতে নাম্বার দিতাম, কততম রিভিউ লিখছি মনে রাখার জন্য। সেই আমি আজকাল রিভিউ লিখতে পারি না। গত দুইমাস ধরে অনলাইনে না থাকলেও প্রচুর বই পড়া হয়েছে, কিন্তু একটারও রিভিউ লেখা হয়নি। রিভিউ লেখার নেশাটা ঠিকই আছে। কিন্তু রিভিউ লিখছি না আগের মতো। আমি জানি না এটা আমার কততম রিভিউ। এটা কি বাধ্য হয়ে বদলে যাওয়া না? এই যা! ধান ভানতে শীবের গীত গাওয়া শুরু করেছি। আসল কথায় আসি…
‘ভাঁটফুলের সৌরভ’ পড়েছিলাম আরো তিনমাস আগে। রিভিউ লিখেছিলাম। সত্যিকারের ভাঁটফুলের সাথেই বইয়ের একখানা বুকোগ্রাফি করার চেষ্টা করেছিলাম। মোবাইলের সাথে সাথে সেসবও গেল। আজকে হয়তো সুন্দর করে গতানুগতিক রিভিউ দিতে পারব না। তবুও বইটা সম্পর্কে অল্প কিছু বলতে ইচ্ছে করছে। কারণ, ভালো বইয়ের প্রচার হওয়া উচিত।
ওপরে যে বললাম, মানুষ বদলে যায় বা মানুষকে বাধ্য হয়ে বদলে যেতে হয়। সময়ের সাথে মানুষের মাঝে যত পরিবর্তনই আসুক না কেন, কেউ কি তার অতীতকে ভুলতে পারে? ফেলে আসা জীবন যেন শৈশবের পরিচিত ফুলের মতোই বর্তমানের যাপিত জীবনে এসে সুরভী মাখিয়ে যায়। ‘ভাঁটফুলের সৌরভ’ গল্পগ্রন্থের গল্পগুলো এমনই।
গল্পগ্রন্থটিতে মোট ৭টি গল্প আছে। একেকটা গল্প একেক স্বাদের হলেও গল্পগুলোর মধ্যে একটা সূক্ষ্ম মিল আছে, আর তা হলো প্রতিটি গল্পই জীবনঘেঁষা।
আসিফ আর রেশমার সুখের নীড়ে হঠাৎ করেই ঝড়ো হাওয়ার মতো প্রবেশ করল ‘এক চিমটি অ-সুখ’। গল্পটা পড়ে এক চিমটি ব্যথা বুকে চিনচিন করছিল। বিষণ্ণ হয়ে ভাবছিলাম, এটা হয়তো নিছক গল্প, কিন্তু এমম ঘটনাই নিদারুণ সত্য অনেকের জীবনে।
‘চেয়ার’ গল্পটা পড়তে পড়তে আমি নিজেও রাশেদের সাথে অপেক্ষা করছিলাম। কবে সেই কাঙ্ক্ষিত দিনটি আসবে! আমার মতো অন্য পাঠকদেরও একইরকম অনুভূতি হবে।
‘নো-ম্যানস ল্যান্ডস’ পড়ে চোখ ভিজে এসেছিল। নোমানের মতো কারো কারো হৃদয়জুড়ে ভালোবাসার অথৈ সাগর থাকে। কিন্তু সেই সাগরে ডুব দেওয়া যায় না, উত্থাল ভালোবাসায় ভেসে যাওয়া যায় না। বুকভরা ভালোবাসা নিয়েও একাকী গোটা একটা জীবন কী ভীষণ শূন্যতা নিয়েই কাটিয়ে দিতে হয়!
‘প্রবোধ’ গল্পটা পড়ে লতিফার জন্য খারাপই লাগে। প্রশ্ন আসে মনে, কেন, কীসের জন্য কারো কারো ভাগ্য এমন প্রবঞ্চনা করে!
‘মাস্টারমাইন্ড’ আমার সবচেয়ে পছন্দের গল্প। যদিও বাবাকে নিয়ে লেখা গল্প আমি যতো ভালো হবে হোক অপছন্দের তালিকায় রেখে এসেছি এতকাল। কিন্তু এই গল্পটা এতো ভালো লাগল কেন! কিছু তো আছে গল্পটাতে।
‘মঞ্জুদি’ গল্পটাতে একই সাথে ভালোবাসা ও প্রতিহিংসা দুইয়েরি দেখা মেলে। পড়তে পড়তে মঞ্জুদির জন্য কেমন একটা হাহাকার জেগে উঠে, বুকচিরে নিজের অজান্তেই দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে।
‘আফোটা’ অপূর্ণ এক ভালোবাসার গল্প। সব ভালোবাসা পরিণতি পায় না। মনের গহীনে থেকে যায় আফোটা ফুলের কলির মতোই। এই গল্পের শেষটা হৃদয়কে দুমড়ে মুছড়ে দেয়।
বইটা শেষ করেছি একরাশ বিষণ্ণতা মেশানো মুগ্ধতা নিয়ে। ফাহমিদা বারীর লেখা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। তাঁর শব্দচয়ন বেশ সমৃদ্ধ। মনে হয় যেন তিনি শব্দ নিয়ে খেলতে ভালোবাসেন। লেখনশৈলী বরাবরের মতোই সম্মোহিত করে রেখেছিল পুরোটা সময়। বই এর সাথে ভালো কিছু সময় কাটাতে চাইলে দ্বিধাহীনভাবে ‘ভাঁটফুলের সৌরভ’ হাতে নেওয়া যায়।
একনজরে ‘ভাঁটফুলের সৌরভ’
লেখক- ফাহমিদা বারী
প্রকাশনী- চলন্তিকা
প্রচ্ছদ- সোহেল আশরাফ
মলাটমূল্য- ২০০৳
Leave a comment