বই: বেতাল
লেখক: মুহম্মদ আলমগীর তৈমূর
প্রকাশক: বিবলিওফাইল
মুদ্রিত মূল্য: ২৬০/=
পৃষ্ঠা সংখ্যা : ১৭৬
প্রচ্ছদ: লর্ড জুলিয়ান
একদিকে সদ্য বিজয় লাভ, অন্যদিকে পিতৃবিয়োগ। শ্যামলদের বাড়ির অবস্থাটা অদ্ভুত। ছোটভাই সমু সেই যুদ্ধ থেকেই নিখোঁজ। তাই বিজয়োল্লাসের চেয়ে পিতার সৎকার আর ভাইয়ের খোঁজ করাই তার জন্য মুখ্য হয়ে ওঠে।
দেশের এই জটিল পরিস্থিতিতে লোকবল খুঁজে পাওয়াই মুশকিল। শেষমেশ বাবার দুই ফেল করা ছাত্রই এসে উদ্ধার করে। খাটিয়া তুলে নেয় কাঁধে। ভালো ছাত্ররা এখন সব বাবু। তাদের নাগাল পাওয়া এখন কল্পনাতীত।
এর ভিতর কানাঘুষায় শোনা যায়, প্রতিবেশি বিশু নাকি ওপারের কোন আশ্রমে সমুকে দেখেছে। এক কাপালিকের কাছে দীক্ষা নিচ্ছে। ঘরের ছেলে এখন অঘোরী হবে? তাকে তো ফিরিয়ে আনতে হবে। সদ্য বিধবা মা আর বোনকে রেখে বাবার সহকর্মী ভবতোষ কাকাকে সাথে নিয়ে শ্যামল পাড়ি জমায় কাঁটাতারের ওপারে।
নানা জায়গা ঘুরে, মন্দির খুঁজে অবশেষে এমন এক জায়গায় আশার আলো মিলল আর এমন এক পরিস্থিতির সম্মুখীন হলো, যার কোনো বাস্তবিক বা সন্তোষজনক ব্যাখ্যা নেই। তবে এ জগতে তো ব্যাখ্যাতীত কতকিছুই ঘটে!
লেখকের লেখা বরাবরই আমার পছন্দ। অতিপ্রাকৃত গল্পগুলোর জন্য মুখিয়ে থাকি। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। মোটের উপর আলোচনা করলে বইটাকে অতিপ্রাকৃত কম, ভ্রমণকাহিনী বেশি মনে হবে। বইয়ের নামকরণের সার্থকতা পাওয়া যায় একেবারে শেষে।
চরিত্রদের ভেতর ভবতোষ কাকা একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। তার ব্যক্তিত্বের আচমকা পরিবর্তনে গল্পটাই নতুন মাত্রা পেয়েছে। এছাড়া যোগিনী চরিত্রটি বেশ ইন্টারেস্টিং। শ্যামলের বয়ানে আমরা পুরো গল্পটা জানতে পারি। যাকে নিয়ে এত হাঙ্গামা সেই সমুর ভূমিকা এখানে খুবই কম।
অতিপ্রাকৃত গল্প হিসেবে আরেকটু ডিটেইলের প্রয়োজন ছিল বলে আমার মনে হয়েছে। মাঝে কাহিনী খুবই মন্থর গতিতে এগিয়েছে। শেষদিকে যদিও সেটা কাটিয়ে উঠে গল্প তার আপন গতি পেয়েছে। লেখক যদিও ভূমিকাতে বলে নিয়েছেন, আচমকা শেষ হওয়াই তার পছন্দ। তবুও মনে হচ্ছিল দুম করে যেন সব শেষ হয়ে গেল।
ইদানিং বই পড়ার সময় করে উঠতে পারি না। এর ভেতরও বেতাল শেষ করেছি। ঝরঝরে লেখা হওয়ার কারণে আটকে যেতে হয়নি। মোটামুটি ভালো লেগেছে। তবে অতিপ্রাকৃত হিসেবে জমেনি।
বইয়ের ইলাস্ট্রেশনগুলো বেশ সুন্দর। বিবলিওফাইলের পরিবেশনাও সন্তোষজনক। অতিপ্রাকৃতের শিরশিরে অনুভূতি আস্বাদনের খুব বেশি এক্সপেকটেশন না থাকলে অবসর সময়ে ‘বেতাল’ হাতে সময়টা খুব একটা খারাপ কাটবে না।
Leave a comment