বাস্তব জগতের ভয়ানক সিরিয়াল কিলার যে খুন করত অপরাধীদের!
ব্রাজিলের অধিবাসী পেদ্রিনহো ম্যাটাডর ওরফে পেদ্রো রদ্রিগেজ ফিলহো কমপক্ষে ৭০ টা খুন করেছে যার ১০ টিই ছিলো তার বয়স ১৮ হওয়ারও পূর্বে। যদিও তার দাবী ছিলো ১০০টার মত খুন করেছে সে। কতটা ভয়ানক সিরিয়াল কিলার ছিলো সে!
পেদ্রো ১৯৫৪ সালে ব্রাজিলে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের সময়ই তার মাথার খুলিতে আঘাত ছিলো। পেদ্রো পেটে থাকা অবস্থায় তার বাবা তার মার পেটে আঘাত করার ফলে তার খুলি আঘাতপ্রাপ্ত হয়। জীবন শুরু হওয়ার পূর্বেই যে আঘাত পেয়েছে, পরবর্তী জীবনে এর প্রভাব পড়াটাই স্বাভাবিক ছিলো তার জীবনে।
পেদ্রো সাধারণ মানুষকে খুন করতো না। সে বেছে নিত অন্যান্য অপরাধী অথবা যারা তার বা তার আপন মানুষদের ক্ষতির কারণ হয়েছে।
বিখ্যাত সিরিয়াল কিলিং নিয়ে লিখা বই ডেক্সটার পড়েছেন বা ডেক্সটার সিরিজ দেখেছেন? ডেক্সটার মর্গান, সিরিয়াল কিলার হলেও যে শুধু খুন করতো অপরাধীদের। বাস্তব জগতেও যে ডেক্সটার মর্গানের মত সিরিয়াল কিলার থাকতে পারে কে ভেবেছিলো?
যদিও পুরোপুরি ডেক্সটারের মত লোক অত ভালো নয়, তবে ব্রাজিলের অধিবাসী পেদ্রো রদ্রিগেজ ফিলহো অন্যান্য সিরিয়াল কিলারদের তুলনায় ভালো।
সাইকিয়াট্রিস্টদের মতে পেদ্রো ছিলো পারফেক্ট সাইকোপ্যাথ।
পেদ্রো প্রথম খুন করে ১৪ বছর বয়সে তাদের এলাকার ভাইস মেয়রকে। মেয়র তার বাবাকে স্কুল থেকে খাবার চুরির মিথ্যা অভিযোগে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে। এই রাগে পেদ্রো সিটি হলের সামনে শটগান দিয়ে গু*লি করে মে*রে ফেলে ভাইস মেয়রকে। এর কিছুদিন পরেই পেদ্রো আরেক গার্ডকে খুন করে যে আসলে খাবার চুরি করেছিলো।
এসব ঘটনার পর পেদ্রো সাও পাওলোতে পালিয়ে যায়। সেখানে তার প্রেম হয় মারিয়া অলিম্পিয়া নামে এক মেয়ের সাথে। তারা একসাথে সুখেই ছিলো কিন্তু এক গ্যাংয়ের হাতে মারিয়া মারা যাওয়ার পরেই পেদ্রো হয়ে ওঠে অনেক বেশী ভয়ংকর। মারিয়াকে খুনের সাথে জড়িতদের পেদ্রো খুজে বের করে৷ প্রচন্ড অত্যাচার করে সবাইকে খু*ন করে।
পেদ্রো কতটা ভয়ংকর ছিলো সেটা এবারের ঘটনায় বুঝবেন।
পেদ্রোর পরের শিকার ছিলো তার আপন বাবা। তার বাবা তার মা কে ম্যাশেটি দিয়ে খুন করে স্থানীয় জেলখানায় আটক ছিলো। পেদ্রো সেখানে দেখা করতে যেয়ে ২২ বার ছুরি দিয়ে আঘাত করে খুন করে তার বাবাকে। এবং ঘটনার এখানেই শেষ নয়। সে তার বাবার বুক কেটে হৃদপিন্ড বের করে কামড় দেয়!
পেদ্রোকে ১৯৭৩ সালে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার করার পর পুলিশ গাড়িতে আর দুই অপরাধীর সাথে আটকে রাখে যাদের একজন ছিলো রেপিস্ট। সবার হাতেই ছিলো হ্যান্ডকাফ। গন্তব্য পৌঁছে পুলিশ গাড়ির দরজা খুলে দেখে পেদ্রো রেপিস্টকে খুন করে ফেলেছে!
অন্যান্য অপরাধীদের ক্ষেত্রে হলে ঘটনা এখানেই শেষ হত। কিন্তু এটা তো পেদ্রিনহো ম্যাটাডরের গল্প। জেলে পাঠানোর পর পেদ্রোর আশেপাশে শুধু অপরাধী। যারা ছিলো পেদ্রোর পছন্দসই শিকার। আগে তো খুজে খুজে খুন করতে হত, এবার খাবার হাতের সামনে প্লেটে রেখে দেয়ার মত অবস্থা হলো শুধু মুখে তুলে খেয়ে নেয়ার অপেক্ষা।
জেলে থাকা অবস্থায় পেদ্রো ৪৭ জন অপরাধীকে খুন করে। এক ইন্টারভিউয়ের সময় পেদ্রো স্বীকার করে অপরাধীদের খু*ন করতে আনন্দ লাগে। ছুরি দিয়ে খু*ন করা তার পছন্দের পদ্ধতি।
পেদ্রোকে প্রথমে ১২৬ বছরের সাজা দেওয়া হয়। কিন্তু জেলে থাকাকালিন তার খুনগুলোর জন্য সেই শাস্তি ৪০০ বছরে গিয়ে ঠেকে। কিন্তু ব্রাজিলিয়ান আইনে ৩০ বছরের বেশী জেলে আটকে রাখার নিয়ম নেই। জেলে থাকাকালিন তার অপরাধগুলোর জন্য অতিরিক্ত ৪ বছর থাকতে হয় তাকে। ২০০৭ সালে এই কুখ্যাত বা বিখ্যাত অপরাধী যাই বলেন কারাগার থেকে মুক্তি পায়। এই ঘটনার জন্য ২০১৯ সালে ব্রাজিলিয়ান আইনে সংশোধন এনে সর্বোচ্চ ৪০ বছর শাস্তির নিয়ম করা হয়।
২০০৭ সালে মুক্তির পর আবার ২০১১ সালে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ২০১৮ সালে তিনি পুনরায় মুক্তি পান। তার নিজস্ব একটা ইউটিউব চ্যানেল ও আছে এখন। ২০২০ সালে তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিলো তিনি আবারও খুন করবেন কি না। এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন ” তিনি আর খুন করবেন না। যদি তার নিজের বা ভালোবাসার মানুষদের উপর জীবনের হুমকি আসে সেক্ষেত্রে করবেন।”
বাইরের দুনিয়ার কাছে কুখ্যাত হলেও সাধারণ ব্রাজিলের জনগণের কাছে পেদ্রো জনপ্রিয়। কারণ পেদ্রো ব্রাজিলের অনেকগুলি অপরাধীর মৃত্যুদূত ছিলো। – ক্রেডিট : অন্বয় আকিব
Leave a comment