বাদশাহ_নামদা হুমায়ূন_আহমেদ
[] সর্বশেষ পড়া দুইটি বইয়ের প্রথমটি জুঁই এর দেয়া তার প্রিয় বই “বাদশাহ নামদার”। বইটি আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে। সত্যি বলতে এই বই পড়ার পর হুমায়ূন আহমেদের চরিত্রের বাদশাহী এবং বাদশাহদের মত খামখেয়ালী দিকগুলো ভালোভাবে নজরে এসেছে। আর মুঘল সম্রাট বাদশাহ হুমায়ূনের দিলদরিয়া চারিত্রিক বৈশিষ্টগুলো সম্বন্ধে গভীরভাবে ওয়াকিবহাল হতেও সহযোগিতা করেছে বইটি। মুঘলরা চরিত্রের দিক থেকে উচু স্তরের না হলে এত বড় হিন্দু সাম্রাজ্য ছয়শ বছর শাসন করতে পারতেন না।একদিন বাদশা হুমায়ূন ছদ্মবেশে তার সাম্রাজ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। হঠাৎ তিনি দেখলেন একদল মানুষ একটি মেয়েকে আগুনে নিক্ষেপ করতে চাইছে। তিনি তার ভৃত্যকে মূল ঘটনার কথা জিজ্ঞাসা করলেন। ভৃত্য তাকে সতীদাহের কথা বুঝিয়ে দিলেন। বাদশা হুমায়ূন মেয়েটিকে বাঁচানোর কথা চিন্তা করলেন। তখন ভৃত্য তাকে বললেন মেয়েটিকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে হিন্দু ধর্মীয় সাধারণ মানুষ এবং ধর্মীয় পুরোহিতগণ ক্ষেপে যাবেন।
তখন তিনি মেয়েটির সাথে কথা বলার ইচ্ছা পোষণ করলেন। তিনি কথা বললেন এবং মেয়েটি মিনতিভরে বাঁচার ইচ্ছা ব্যক্ত করল। মেয়েটিকে তিনি বিসমিল্লাহ বলতে বললেন। মেয়েটি বিসমিল্লাহ বলল। তখন তিনি পুরোহিতদের বললেন, মেয়েটি মুসলিম হয়েছে ওর উপর আপনাদের আইন এখন অকার্যকর।
অতঃপর তিনি মেয়েটিকে তার নিজের মেয়ের সাথে থাকতে দিলেন। মেয়েটি সত্যিকারেই মুসলিম হতে চাইলে তিনি মেয়েটিকে আরও কিছুদিন ভাবতে বলেছিলেন।
মুঘল সম্রাটগণ কথা দিয়ে কখনো বরখেলাপ করতেন না।
সম্রাট হুমায়ূনের চিরশত্রু “শের খা” যখন তাকে ধাওয়া করে রাজ্যছাড়া করার উপক্রম করছিলেন, তখন সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসা ভিসতি নিজাম নামক এক ব্যক্তিকে তিনি এক দিনের জন্য সিংহাসনে বসাবেন বলে কথা দিয়েছিলেন। তিনি সিংহাসন ফিরে পাওয়ার পর তার আপন ভাই এবং সকল আমাত্যবর্গের অমত সত্যেও নিজর কথা রেখেছিলেন। তিনি ভিসতি নিজামকে সিংহাসনে বসিয়েছেন এবং যথাযোগ্য মর্যাদা দিয়েছিলেন।
তিনি তার জীবনের অনেকটা সময় রাজ্যহীন ছিলেন। অথচ কোনদিন ধৈর্য হারান নি। তিনি তার বিশ্বস্ত সেনাপতি বৈরাম খাঁনকে (যিনি পরবর্তীতে খাঁন ই খানান উপাধীতে ভূষিত হয়েছিলেন। যার অর্থ রাজাদের রাজা) সেনাপতিকে তিনি বারবার তকদিরের কথা সরণ করিয়ে দিতেন।
মূলত মুঘল সম্রাটগন ধর্মীয় অনুশাসনের ভিত্তির উপর অটল ছিলেন।
সম্রাট বাবরের জীবনবোধ, বদান্যতা, দয়া কতটা প্রগাঢ় ছিল তা জেনেছিলাম, ব্রিটিশ লেখক ইএম ফরস্টার এর লেখা “এ প্যাসেজ টু ইন্ডিয়া” বইটি পড়ার পর। তিনি ডাঃ আজিজ এর জবানীতে বার বার সম্রাট বাবরের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। সম্রাট আকবর তো নিজ নামেই ছিলেন সমুজ্জ্বল মহান “আকবর দ্য গ্রেট”।
দ্বিতীয় বইটি হল বিভিন্ন সময়ে হুমায়ূন আহমেদের বিদেশে থাকা এবং ভ্রমণলিপি। যার নাম “উঠোন পেরিয়ে দুই পা”। বইটির সম্পর্কে পরবর্তী পোস্ট এ বলবো।
___©
Leave a comment