‘ফেরা’ হুমায়ূন আহমেদ লিখেছেন ভাটি অঞ্চল নিয়ে। সোহাগী গ্রামের সহজ সরল কিছু মানুষের জীবনের প্রতিফলন এই বই। পড়তে পড়তে মনে হবে মানুষগুলো বুঝি কত সহজ সরল, আবার পরক্ষণেই মনে হবে তাদের মন বুঝা বড় দায়! এ গ্রামের মতি মিয়ার স্ত্রী শরিফার কঠিন অসুখ। বউয়ের শরীর নিয়ে তার অবশ্য এতো ভাবনা নেই। তাও নিতান্তই নিতে হবে বলে গ্রামের আমিন ডাক্তারের কথায় তাকে ভালো ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যায় বটে। কিন্ত যখন জানতে পারে শরিফার ভালো হতে মাসখানেক লাগতে পারে, সে তার দুই পুত্র নিয়ে চলে আসলেও আমিন ডাক্তার ডাক্তারির দায়িত্ব থেকে বের হয়ে চলে আসতে পারেনা।
মতি মিয়ার চরিত্রটি বড়ই অসহনীয় মনে হবে। তার কোন স্থীর পেশা নেই। গানবাজনাতে আগ্রহ করে। শরিফার অনুপস্থিতিতে ঘরের কাজের সহায়তার জন্য রহিমাকে রাখা হয়। মেয়ে অনুফাকে নিয়ে রহিমা কাজের দায়িত্ব নিজের কাধে নিয়ে নেয়। কতো লুকানো অভিযোগ মনের মাঝে রাখা রহিমা এখনো ভাবে তার স্বামী হুট করেই একদিন ফিরবে। অনুফা পেটে থাকাকালীন লোকটা নিখোঁজ হয়। কত লোক কত কথা বললো, রহিমা এখনো মনে মনে সেসব উপেক্ষা করে।
মাসখানেক পর শরিফাকে নিয়ে আমিন ডাক্তার ফিরে সোহাগীতে। শরিফা সুস্থ্য হলেও আগের মতো নেই। মতি মিয়া যেন মুখঝামটা দেয়ার আরো কারণ খুজে পেলো। ছেলেরাও মায়ের সাথে দূরত্ব বজায় রাখছে, যেন কারো ভ্রুক্ষেপই নেই। এখন মতি মিয়ার ডাক পড়েছে ‘রুপকুমারী’ যাত্রাপালায়। শরিফা না চাইলেও সে যায়। যেন স্ত্রী সন্তান তার জন্য কিছুইনা। বড় ছেলে আজরফ যেন কিশোর থেকে বাড়ির প্রধান হয়ে সব সামলে নেয়। মতি মিয়া চিঠি পাঠায়, আসেও; কিন্ত কিছুই আর আগের মতো নেই….
সোহাগী গ্রামটি ছোট হলেও নানা রকম মানুষের বাস এখানে। তাদের প্রত্যেকের নিজস্ব কাহিনী বিদ্যমান। হুমায়ূন আহমেদ ছোট পরিসরে পাঠককে কল্পনা করে নেয়ার জন্য পর্যাপ্ত প্লট দিয়েছেন। ছোটবেলা থেকেই হুমায়ূন আহমেদের নাটক দেখে দেখে বড় হবার কারণেই হয়তো, বেশিরভাগই যখন হুমায়ূন আহমেদের বই পড়া হয়; অজান্তেই প্রতিটা চরিত্রে নাটক সিনেমার কিছু চরিত্রকে বসিয়ে দিয়ে যেন তাদের কন্ঠ শুনতে পারি! ফেরা পড়ার সময় মনে হচ্ছিলো, মানুষ কীভাবে না ফিরে থাকতে পারে! আসলে কেউ কেউ নীড় থাকার পরেও আসতে পারেনা, হয়তো তাদের শিকড় অত মজবুত হয়ে উঠেনা। আবার কেউ কেউ আমিন ডাক্তারের মতো বারবার ফিরে আসে স্থায়ী নীড় না থাকলেও। একগুচ্ছ চরিত্রকে স্বল্প পরিসরে এনে অনন্য করে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে দেয়ায় হুমায়ূন আহমেদের জুড়ি নেই। ‘ফেরা’ -তে তার ব্যাতিক্রম হয়নি।
উপন্যাসঃ ফেরা
লেখকঃ হুমায়ূন আহমেদ
প্রকাশনীঃ আফসার ব্রাদার্স
প্রচ্ছদশিল্পীঃ ধ্রুব এষ