বই: ফুড কনফারেন্স
লেখক : আবুল মনসুর আহমদ
রেটিং : ★★★★★/৫
আবুল মনসুর আহমদ -এর ক্লাসিক পলিটিক্যাল স্যাটায়ার ‘ফুড কনফারেন্স ‘ মোট ৯টি গল্পের সংকলন। এই ৯টি গল্প যেন গল্প নয় ;একেকটা বিদ্রুপের কামান যার থেকে অনবরত নিক্ষিপ্ত হচ্ছে সমাজের স্বার্থান্বেষী,ক্ষমতালোভী, অসৎ, নির্বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তিবর্গের প্রতি তীব্র বিদ্রুপের গোলা।যাইহোক ফুড কনফারেন্স, সায়েন্টিফিক বিযিনেস, এ.আই.সি.সি, লঙ্গরখানা, রিলিফ ওয়ার্ক, গ্রো মোর ফুড, মিছিল, জমিদারি উচ্ছেদ, জনসেবা য়ুনিভার্সিটি – এই মোট নয়টি গল্প স্থান পেয়েছে ফুড কনফারেন্স বইটিতে।
.
১৯৪৩ এর দুর্ভিক্ষে খাদ্যের অভাবে দেশের জনগণ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়াতেও টনক নড়েনি দেশের ক্ষমতার গদিতে বসা স্বার্থান্বেষী মন্ত্রী নেতাদের।টনক নড়বেই বা কী করে? তাদের খোরাকের অভাব ছিল না। দেশের মানুষ না খেয়ে মরলেও তারা তো দিব্যি খেয়ে,পরে বেঁচে রইলো।বরং তারা খুশি হয়েছিল লাভের আশা দেখে!
বাঙালিকে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র ব্যবসা বোঝালে বাঙালি ব্যবসার জন্য ব্যবসা বুঝত না। বাঙালি বুঝত ধর্মের জন্য ব্যবসা,শিক্ষার জন্য ব্যবসা।কালাবাজার ব্যবসা বাঙালি ভালোই বুঝত।
রিলিফ ওয়ার্ক -এর নামে সমাজের গরীব, কঙ্কালসার মানুষদের ডিঙিয়ে ধনী ব্যক্তিবর্গের ভাড়ার ফুলে ফেঁপে উঠার নিদারুণ চিত্র লেখক ব্যাঙ্গাত্মকভাবে তুলে ধরেছে।
সুযোগ সুবিধার লোভ দেখিয়ে,জমিদারি উচ্ছেদের লোভ দেখিয়ে দেশের জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে ক্ষমতাসীন মেম্বার কী কৌশলেই না নিজেই জমিদারি দখল করে! জনসেবার নাম দিয়ে, ফ্রীতে খাবার দেওয়ার কথা বলে যত সুন্দর করে ব্যাপারী দল খোরাকী পাস করেছে,তার চেয়েও সুন্দর করে লেখক তাদের কালোবাজারি বর্ণনা করেছে। লেখকের এমন রচনা স্বার্থান্বেষী, ক্ষমতালোভী মানুষের মুখে ঝামা ঘসে দিয়েছে।
.
প্রতিটি গল্পই মন মুগ্ধকর। তবে ফুড কনফারেন্স, সায়েন্টিফিক বিযিনেস,রিলিফ ওয়ার্ক,জমিদারি উচ্ছেদ,গ্রো মোর ফুড খুব বেশি ভালো লেগেছে। সবার পড়া উচিত বইটি। অবশ্যই আয়োজন করে পড়বেন। যদি আবার নিজের মুখেই ঝামা ঘসে যায়?
তাই তো অন্নদাশঙ্কর রায় বলেছেন, ‘আবুল মনসুর আহমেদ ফুড কনফারেন্স লিখে অমর হয়েছেন।’
Ismat Jahan Sumaiya
Volunteer of Writers’ Club BD
Leave a comment