|| রিভিউ ||
বইঃ প্রিন্স অফ পার্সিয়া – দ্য স্যান্ডস অফ টাইম
মূলঃ জেমস পন্টি
ভাষান্তরঃ রুদ্র কায়সার
প্রকাশকঃ সতীর্থ প্রকাশনা
প্রকাশকালঃ এপ্রিল, ২০২১
ঘরানাঃ অ্যাডভেঞ্চার/ফ্যান্টাসি
প্রচ্ছদঃ লর্ড জুলিয়ান
পৃষ্ঠাঃ ১৮৪
মুদ্রিত মূল্যঃ ২৮০ টাকা
ফরম্যাটঃ পেপারব্যাক
কাহিনি সংক্ষেপঃ শক্তিশালী এক সাম্রাজ্য পার্সিয়া। এখানকার দূরদর্শী বাদশাহ শারামান একদিন ভরা বাজার থেকে একটা বাচ্চা ছেলেকে তুলে আনলেন। নিজের পুত্র হিসেবে স্থান দিলেন নিজের পরিবারে। ছেলেটার নাম দাস্তান। যার শরীরে রাজরক্ত না থাকলেও বাদশাহ শারামানের ছেলে হিসেবে ও পার্সিয়ার শাহজাদা হিসেবে বেড়ে উঠতে লাগলো সে।
অনেক পরে বাদশাহ’র নির্দেশ অমান্য করে আলামুত শহরে আক্রমণ চালালো পার্সিয়ান সেনাবাহিনী। এই আক্রমণ পরিচালনার অগ্রভাগে রইলো শাহজাদা দাস্তান আর তার দুই ভাই যুবরাজ টাস ও গার্সিভ। সবসময়ের মতোই তাদের পরামর্শদাতা হিসেবে ছিলেন বাদশাহ শারামানের ভাই ও রাজকীয় প্রধান উপদেষ্টা নিজাম। আলামুত শহর দখলে তো এলোই সেই সাথে দখলে এলো এখানকার শাহজাদী তামিনা, যার রূপ ও গুণের কোন শেষ নেই।
ওদিকে বিজয় উদযাপনের সময় রহস্যজনকভাবে মারা গেলেন বাদশাহ শারামান। সন্দেহের তীর তাঁরই পালকপুত্র দাস্তানের দিকে। সবাই ভাবতে শুরু করলো সিংহাসনের লোভে বাদশাহকে খুন করেছে দাস্তান। পালাতেই হলো তাকে। ঘটনাক্রমে তার সঙ্গী হলো আলামুতের শাহজাদী তামিনা। আর দাস্তানের হস্তগত হলো এমন এক ছোরা, যার কাঁচের হাতলের ভেতরে রয়েছে অদ্ভুত ক্ষমতাসম্পন্ন বালি যা সময়কে পেছনের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
একদিকে বাদশাহকে খুনের দায়ে পুরো পার্সিয়ান সেনাবাহিনী খুঁজছে দাস্তানকে। আর অন্যদিকে সময় নিয়ন্ত্রক ছোরার খোঁজে দাস্তানের পেছনে লেগে আছে ভয়ঙ্কর গুপ্তঘাতকদের সংগঠন হাসানসিনের বেশ কয়েকজন সদস্য। ষড়যন্ত্রের শিকার দাস্তান ও শাহজাদী তামিনার জীবন মারাত্মকভাবে ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেলো। নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার সাথে সাথে দাস্তানকে ঠেকাতে হবে এক ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্র, যা বাস্তবায়িত হলে সময়ের লাগাম ছুটে যাবে খোদ সময়ের হাত থেকেই। ভয়াবহ বিপদের মধ্যে পড়ে যাবে সমস্ত বিশ্ব।
পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ ২০১২/২০১৩ সালের দিকে আমার ডেস্কটপ কম্পিউটারে হাতে গোনা যে কয়টা গেম ছিলো, তার মধ্যে একটা ছিলো ‘প্রিন্স অফ পার্সিয়া’। অনেক খেলেছি গেমটা। অনেক মানে, অনেক। এরপর ‘প্রিন্স অফ পার্সিয়া – দ্য স্যান্ডস অফ টাইম’ নামে একটা হলিউড মুভিও রিলিজ পায়। সেটাও দেখেছিলাম। কিন্তু এটাকে বই হিসেবে কখনো হাতে নিয়ে পড়বো এমনটা কখনোই ভাবিনি। মুভির কাহিনিটাই বর্ণিত হয়েছে জেমস পন্টি’র ‘প্রিন্স অফ পার্সিয়া – দ্য স্যান্ডস অফ টাইম’ বইটাতে। উপন্যাস আর কমিকসের মিশেলে এটার ভাষান্তর করেছেন রুদ্র কায়সার।
কিশোর অ্যাডভেঞ্চার ও ফ্যান্টাসি ধাঁচের এই উপন্যাসে যুক্ত করা হয়েছে বেশ কিছু ইলাস্ট্রেশন। এই ব্যাপারটা ভালো লেগেছে। রুদ্র কায়সারের অনুবাদ মোটামুটি সহজবোধ্য হলেও ছিলো বেশ কিছু বানান জনিত আর বাক্য গঠন জনিত সমস্যা। যেমন ‘সাম্রাজ্য’ কথাটাকে বারবার ‘সম্রাজ্য’ লেখা হয়েছে। ‘ছাদ’-কে লেখা হয়েছে ‘ছাঁদ’। এছাড়াও ছিলো বেশ কিছু টাইপিং মিসটেক। এসব কারণে বইটা পড়তে গিয়ে ঠিক যতোটা উপভোগ করবো বলে ভেবেছিলাম, ততোটা করতে পারিনি।
‘প্রিন্স অফ পার্সিয়া’ গেমের সাথে উপন্যাসটাকে মিলানো যাবে না সম্পূর্ণভাবে। বরং মুভি’র সাথে মিল পাওয়া যাবে। যেহেতু আমি মুভিটা অনেক আগে দেখেছিলাম, তাই স্পয়লার খেয়ে বসে ছিলাম আগে থেকেই৷ কিন্তু কেউ যদি মুভিটা না দেখে থাকে, তার কাছে ‘প্রিন্স অফ পার্সিয়া – দ্য স্যান্ডস অফ টাইম’ বইটা বেশ উপভোগ্য লাগবে। বিশেষ করে অ্যাডভেঞ্চার ও ফ্যান্টাসি জনরার ভক্ত পাঠকদের জন্য ভালো একটা চয়েজ হতে পারে বইটা।
বইয়ের প্রোডাকশন কোয়ালিটি চমৎকার। সতীর্থ বরাবরের মতোই প্রোডাকশনে কোন ছাড় দেয়নি। ব্যাপারটা ভালো লেগেছে। তবে লর্ড জুলিয়ানের করা প্রচ্ছদটা আমার কাছে খুব একটা ভালো লাগেনি। উনার বেস্ট কাজগুলো দেখতে দেখতে অভ্যস্ত, যে কারণে এই সাদামাটা প্রচ্ছদটা সম্ভবত আমাকে টানতে পারেনি।
ব্যক্তিগত রেটিংঃ ৩/৫
গুডরিডস রেটিংঃ ৩.৪৭
Leave a comment