বইয়ের নাম: ধনুর্ধর
লেখক: সিদ্দিক আহমেদ
প্রকাশনী: বাতিঘর প্রকাশনি
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ২৮৮
মুদ্রিত মূল্য: ৩২০৳
পাঞ্চালদেশের দুর্বৃত্ত রাজা প্রসেনজিৎ আক্রমন করে বসে কৌশল রাজ্য। বিপদের সময় নিজের হঠকারি সিদ্ধান্তে দক্ষ্য সেনাপতি সুধামাকে কে সরিয়ে দিয়ে নিজের বিপদ আরো নিকটতম করলেন কৌশল রাজা। আক্রমনের মুখে টিকতে না পেরে রাজ্য ছেড়ে পালাতে বাধ্য হলেন। কিন্তু পালানোর সময় রাজপুত্র সহ পালালেন একপথে আর অনীন্দ সুন্দরি রাজকন্যাকে পর্যাপ্ত সুরক্ষা দিয়ে রাজ্য পার করে দেবার দায়িত্ব দিলেন সেনাপতি সুধামার ঔরসজাত পুত্র রুদ্রদামাকে। তীর চালনায় সুনিপুন ও অভূতপূর্ব ধর্ণূকৌশলি রুদ্রদামা অসিম সাহসিকতা ও বুদ্ধি প্রয়োগ করে পাঞ্চালরাজের পাঠানো একের পর এক আক্রমন রুখে দেয়। রুদ্রর দক্ষতায় মুগ্ধ হয় রাজকন্যা।
কৌশলরাজ্যের সিমান্তে পৌছাবার পর সাথে থাকা আদেশ পত্র খুলে হতবাক হয়ে যায় রুদ্র। যে রাজকন্যার সুরক্ষায় এত প্রাননাশ হলো, এত রক্ত ঝড়লো, যাকে অক্ষত অবস্থায় নিরাপদে পৌছে দেবার কথা রুদ্রর সেই রাজকন্যাকেই সীমান্তে হত্যা করার আদেশ দিয়েছেন স্বয়ং সম্রাট। একদিকে রাজ্যাদেশ অনুযায়ি কর্তব্য পালন অন্যদিকে রাজকন্যার প্রতি রুদ্রদামার ভালোবাসা। কোনদিকে যাবে রুদ্র। এইদিকে কৌশলে বারংবার শত্রুর চোখে ধোকা দেবার পরও কিভাবে যেন শত্রুসেনা বার বার তাদের অবস্থানের খোঁজ পেয়ে যাচ্ছে। তবে কি তার সৈন্যদলেই লুকিয়ে আছে বন্ধুবেশি কোন গুপ্তচর? ভাগ্যের নির্মম পরিহাসের তখনও অনেক বাকি। কর্তব্য পালনে একসময় রুদ্রকে মুখোমুখি হতে হয় নিজেরই শিক্ষাগুরু কৌলিয়ের সামনে। যার শিক্ষায় আজকের ধনূর্ধর এই রুদ্র, আজ কিনা তারই প্রাণ নিতে হবে তকে। এ মহা ধর্মসংকট। রুদ্র কি পারবে এমন কঠিন পরীক্ষায় উতরোতে।
বইটির ভূমিকায় লেখক লিখেছেন গল্পটি তিনি নাকি প্রথমে সিনেমার স্ক্রিপ্ট হিসেবে লিখেছিলেন। লেখার পর সেটা নিয়ে দৌড়েছেন নামিদামী পরিচালকদের পিছনেও। সবাই বলেছিল এই ধরনের সিনেমা আমাদের দেশে বানানো সম্ভব না। তারপর বহুদিন পরে তিনি এটাকে উপন্যাসে রূপ দেন। ভূমিকাটা পড়ার পর মনে হয়েছিল লেখক মনে হয় বাড়িয়ে বলেছেন। কিন্তু বইটা যখন শেষ করলাম বুঝতে পারলাম লেখক তিল পরিমান বানিয়ে বলেননি। আসলেই তিনি একটা মাস্টারপিস তৈরি করে ফেলেছেন।সত্যিই এই গল্পটাকে যদি সিনেমায় নেয়া যায় তাহলে সেই সিনেমা অনায়াসে বলিউডের বাহুবলির মতো সিনেমাকে টেক্কা দিতে পারবে।
গল্পের নায়কের রণকৌশল, সাহসীকতা ও দক্ষতায় পাঠক মুগ্ধ হতে বাধ্য। রাজঘরানার কুটকৌশল ও তার উথানপতনের যে চিত্র কাহিনীতে উঠে এসেছে সেটাও বেশ চমৎকার। গল্পের প্রত্যেকটা চরিত্রের চরিত্রায়নে লেখক তার সৃষ্টিশিলতার ছাপ রেখেছেন। সিদ্দিক আহমেদ এর দশগ্রিব বইটি প্রথম পড়েছিলাম। সেটা পড়েই তার ভক্ত হয়ে গিয়েছিলাম। ধণুর্ধর পড়ার পর তার লেখনির প্রতি সম্মান আরো বেড়ে গেল। পয়সা উসুল করা একটা বই। ব্যাক্তিগত রেটিং ৯/১০।
Leave a comment