বইয়ের নাম- দখল
লেখক- লতিফুল ইসলাম শিবলী
প্রকাশক- নালন্দা
মুদ্রিত মূল্য – ৩০০ টাকা
পড়লাম লতিফুল ইসলাম শিবলী ভাইয়ের “দখল” বইটি। এ নিয়ে দ্বিতীয় বারের মতো তাঁর লেখা পড়েছি।
এই বইটির কাহিনি বিস্তৃত হয়েছে ঢাকা শহরের আন্ডারওয়ার্ল্ডের অন্ধকার জগত কে কেন্দ্র করে। সাধারণ মানুষদের জানার বাইরে একটি বিশাল চ্যানেল রয়েছে যা বেসরকারি ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে পুরো একটি রাষ্ট্রকে।
এই আন্ডারওয়ার্ল্ডের নেতৃত্ব পরিবর্তনের সময় একটি বিশেষ ঘটনার সাক্ষী হয় কবি অনিন্দ্য আকাশ এবং তার বান্ধবী জেনিফার। কবি অনিন্দ্য আকাশের কবিতার শক্তিতে উজ্জীবিত হয়ে জেনিফার নামের দুঃসাহসী মেয়েটি সদ্য নেতৃত্ব পাওয়া ডেভিডকে প্রভাবিত করে ফেলে। নিজের বলিষ্ঠ বক্তব্যে বদলে দেয় বছরের পর বছর ধরে চলে আসা একটি নিয়ম।
তখন থেকে কবি এবং জেনিফার জড়িয়ে যায় এই আন্ডারওয়ার্ল্ডের ভয়ংকর সব ঘটনার সাথে। জেনিফারের হৃদয় দখলে নামে গ্যাংস্টার ডেভিড এবং কবি অনিন্দ্য আকাশ। শহর দখল ও হৃদয় দখলকে কেন্দ্র করে ঘটতে থাকে ভয়ানক সব ঘটনা।
লেখক তার এই বইয়ে চমৎকার ভাবে সমাজতন্ত্র, বাম রাজনীতির প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন। ডেভিড চরিত্রকে আদর্শবান কমিউনিস্ট থেকে সর্বহারা দলের প্রতিনিধি এবং শেষমেশ গ্যাংস্টারের ভূমিকায় দেখিয়েছেন। উচ্চ শিক্ষিত ডেভিডকে তুলনা করা হয়েছে আলোর জন্য হাহাকার করতে থাকা জোনাকির সাথে।
এছাড়া কানা ফারুক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দস্তগীর চরিত্র কে দেখে মোটেই অচেনা লাগবে না। আশেপাশে তাকালেই এদের দেখা মেলে এমনটাই অনুভূত হবে।
লেখক বিশ্বে জনপ্রিয়তা পাওয়া সমাজতন্ত্র কেন ব্যর্থ হলো তা তুলে ধরেছেন। এছাড়া নিজের স্বার্থে রাজনীতিকে ব্যবহার এবং আদর্শের সাথে সমঝোতা করে ফেলার বিষয়টা তুলে এনেছেন। পড়তে গিয়ে পাঠকের কাছে মনে হবে সব কিছুই তার চেনা। আশেপাশে এগুলোই তো ঘটছে।
লেখকের বইয়ে অনেক তথ্য, যুক্তি, আদর্শের সত্য রুপ উন্মোচন সহ বিভিন্ন বিষয় থাকে। এগুলো পাঠক কে টেনে ধরে রাখবে এটা নিসন্দেহে বলা যায়।
বইটির ভাষা, ঘটনার ধারাবাহিকতা বর্ণনা, সব কিছু চমৎকার লেগেছে। এক বসাতে শেষ করার মতো বই। এরপর কি ঘটতে যাচ্ছে এই ভাবনা থেকে বই ছেড়ে উঠে যাওয়া যাবে না।
কিছু বই থাকে যেগুলো পড়তে গেলে শেষটা সহজে অনুমান করে ফেলা যায়। কিন্তু এই লেখকের বইয়ে আমি শেষটা কোনোভাবেই অনুমান করতে পারিনি।
শেষমেশ বইটি থেকে দু একটা পছন্দের লাইন তুলে দিচ্ছি-
১. রক্ত মাংসের শরীর নিয়ে নারীকে নিষ্পাপ স্পর্শ করা যায় না। নারীর মন স্পর্শ না করে তার দেহ স্পর্শ করাটা বর্বরতা।
২. ভালোবাসা কঠিন এক দুর্বলতার নাম। এই দুর্বলতা কোনোভাবেই কারো হাতে তুলে দিতে নাই। তবে দুর্বলতার নিজস্ব প্রকাশ আছে, আর সেই প্রকাশ শুধু সেই দেখতে পায় যার জন্য ভালোবাসা তৈরি হয়।
৩. অশ্রু এমন এক অভিব্যক্তি যার অনেকগুলো অর্থ থাকে।
৪. আদর্শ মানুষ ছাড়া আদর্শবাদ বয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব না। মাত্র কয়েকজন বিশ্বাসী মানুষ নিয়ে উলটে দেয়া যায় একটি রাষ্ট্র।
৫. অস্ত্র দেখে ভয় পাওয়া মানুষরা কবিতা লেখে কীভাবে?
এক রমণীর জন্য কোমল হৃদয়ের কবি কেমন করে হয়েছিল খুনি আর এক কুখ্যাত খুনি কেমন করে হয়েছিল ক্ষমাশীল তা জানতে হলে পড়তে হবে চমৎকার এই বইটি।
Leave a comment