রিভিউ/পাঠপ্রতিক্রিয়া নং- ১৬, ২০২২
- বই : ত্রিমোহিনী
- লেখক : কাজী রাফি
- প্রকাশনা : পার্ল পাবলিকেশন
- পৃষ্ঠা সংখ্যা : ৪৫৬
- মুদ্রিত মূল্য : ৬০০ টাকা
হাসান আজিজুল হক সাহেব বইটির ভূমিকা লিখতে গিয়ে লেখক এবং বই উভয়েরই উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন, একেবারে ‘জিনিয়াস’ লেখকের সম্মানে ভূষিত করেছেন। বইটির অনুবাদ হওয়া প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি। হ্যাঁ, বইটির পরতে পরতে যেভাবে আমাদের ইতিহাসকে উঁচু করে দেখানো হয়েছে, বাংলার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ পেয়েছে তাতে অনুবাদের আশা আমরা করতেই পারি৷ তবে বোধহয় আরেকটু কাটছাট করে।
এই বাংলার চাইতে প্রিয় কিছু আর নেই আমার। সেই বাংলাকে যখন এত সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হলো তখন পড়তে বেশ ভালো লাগলো।
অনেকগুলো মূল চরিত্র নিয়েই আসলে বইটি। কাকে যে মূখ্য চরিত্র বলব ঠিক ভেবে পাই না। গল্পটা মূলত পুন্ড্রবর্ধন, বর্তমান বগুড়ার একটা গ্রাম ত্রিমোহিনীকে কেন্দ্র করে। শুরুটা ব্রিটিশ সময়ের শেষ ভাগ থেকে এবং শেষ হয়েছে বর্তমান মোবাইলের যুগে এসে। এত দীর্ঘ এই গল্প। তিনটা প্রজন্ম বা বলা ভালো চারটা প্রজন্মের গল্প এই ত্রিমোহিনী। এসেছে ফকির সন্যাসী বিদ্রোহ থেকে শুরু করে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ এবং তার পরবর্তী টিকে থাকার যুদ্ধও।
এতগুলো চরিত্র থাকায় গল্পটা ধরতে অসুবিধা হয়েছে খুব। তাছাড়া প্রাঞ্জলতার অভাব বোধ করেছি ভীষণ। আমরা উপন্যাস পড়ি মূলত আনন্দের জন্যই। সে উপন্যাস পড়তে গিয়ে যদি একই বাক্য একাধিকবার পড়তে হয় তবে উপন্যাসের মজাটা আর থাকে কোথায়? আমি হুমায়ূন আহমেদের মতো কয়েকটা শব্দে বাক্য শেষ করার কথা বলছি না। তবে দুই আড়াই লাইনের একেকটা জটিল বাক্যও ঠিক উপন্যাসের জন্য উপযোগী বলে মনে করছি না। ভেবেছিলাম কষ্ট করে একশ পৃষ্ঠা পর্যন্ত যাই, তখন কাহিনি প্রাঞ্জলতার অভাবকে ঢেকে দেবে। তবে মোটামুটি পঞ্চাশ পৃষ্ঠার পর থেকেই ভালো লাগতে শুরু করেছে। আর শেষের দিকে ভালো লেগেছে আরো। শেষটা বেশ দ্রুতই এবং কাজবাজ রেখেই পড়েছি।
লেখকের নিজস্ব দর্শন আছে খুব করেই। কোট করার মতো লাইন। ভীষণ সুন্দর। শুরুর দিকে দাগিয়েছিলামও কিছু লাইন। কিন্তু পরে উপন্যাসের পাতায় পাতায়ই দর্শন, একবারেই ইতিহাসের দীর্ঘ বর্ণনা বিরক্তিকর ঠেকেছে একেকসময়। লেখক এসব দিয়ে উপন্যাসের কলেবর বৃদ্ধি না করে আরেকটা প্রবন্ধ সংকলন করলে খুব চমৎকার একটা প্রবন্ধ সংকলন পেতাম আমরা। তিনি কোনো প্রবন্ধ সংকলন করলে আমি অবশ্যই পড়ব। তবে উপন্যাসে ঘটনার ঘনঘটা থাকলেই বরং বেশি ভালো লাগে যেমনটা শেষের দিকে হয়েছে। জানি না, হয়ত ঠিক যে কারণটার জন্য আমার বিরক্তিকর ঠেকেছে সেই কারণটার জন্যই হাসান আজিজুল হক সাহেব ‘এটার অনুবাদ হোক’ বলেছেন।
লেখক, নগ্নতাকে খুব চমৎকারভাবেই উপস্থাপন করেছেন সন্দেহ নেই। কিছু জায়গায় প্রয়োজনও ছিলো তবে আমার মনে হয় অপ্রয়োজনেও নগ্নতা এসেছে অনেকবার। বাংলা উপন্যাসে নগ্নতা ঠিক পছন্দ না আমার।
Leave a comment