চাই প্রিয় ব্যক্তিত্ব চাই প্রিয় নেতৃত্ব —আব্দুস শহীদ নাসিম

Post ID 111408

চাই প্রিয় ব্যক্তিত্ব চাই প্রিয় নেতৃত্ব
—আব্দুস শহীদ নাসিম
আধুনিক প্রকাশনী
২৫ শিরিশদাস লেন
বাংলাবাজার, ঢাকা-১১০০।
প্রথম প্রকাশঃ- অক্টোবর ২০০০ ইং
৬ষ্ঠ প্রকাশঃ- অক্টোবর-২০১৫
গায়ের মুলঃ- ১৪০/-
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ-২৩৮
ISBN:- নাই
প্রাপ্তি স্থানঃ- দেশের সকল ইসলামিক বইয়ের দোকান।
 
রিভিউ লেখকঃ- ফেরদৌস আরফিন।

২০১২ সালের শুরুর কথা। তখন বই পড়া তো দূরে থাক দেখলেও গা জ্বালা করত। এমন একটা সময়ে জীবনের কঠিনতম সঙ্কটে পরে যাই। বাঁচা মরার লড়াইয়ে কোন রকম ফিরে আসি। জীবনের ছন্দপতন কখন যে শুরু হল টেরই পেলামনা। ঠিক এই সময়ে পরম শান্তির ও নির্ভরতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন কিছু ভাই। সারাদিন খুবই হতাশায় কাটতো, শুধু ওই সময় টা ছাড়া। যে সময় টা কাটতো প্রিয় ভাইদের ম্যাচে বই পড়ে। ঈমান, ইসলাম, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, দেশপ্রেম এসবের কোন কানাকড়িও মূল্য ছিলনা আমার কাছে। প্রিয় ভাইদের ম্যাচে গেলে মাসিক পত্রিকা “ছাত্র সংবাদ” পড়তাম। শুধু এটাই পড়তাম। আর কোন বই নয়। ধরেও দেখতাম না। “ছাত্র সংবাদ” পড়ে পড়ে কিছুদিন পরে একটা চিন্তা মাথায় ঢুকল। ঈমান ও ঈমানের দাবী, আমল ও আমলের গুরুত্ব, দেশ ও দেশের রাজনীতি, সমাজ ও সমাজের অবক্ষয়, পরিবার ও পরিবারের দায়িত্ববোধ। এসব চিন্তা করতে করতে একদিন ম্যাচে গিয়ে ‘আব্দুর রহমান সোহাগ’ ভাই কে বললাম আমার চিন্তা গুলো। ‘সোহাগ’ ভাই প্রথমে কিছু না বলে চুপ করে শুনল। তারপর বলল ‘আপনার এই এলোমেলো চিন্তাভাবনা দিয়ে কিছু হবে না। আগে ভাবনা ও চিন্তার পরিধি বাড়ান, তারপর প্লান করে সামনে আগান, আশাকরি কোন পথ হয়তো পেয়ে যাবেন”। সোহাগ ভাই আরও বলল ‘আপনার ভাবনা চিন্তার পরিধি বাড়ানোর জন্য বই পড়া জরুরী, যেকোনো বই নয়, শুধু সেই বই যা আপনার চিন্তার জগতকে খুলে দেবে’। ওইদিন ভাই আর কিছুই বললেন না বা কোন বই দিলেন না। পরের এক সপ্তাহ ম্যাচে যাওয়া হয়নি। মসজিদে নামাজে গিয়ে সোহাগ ভাইর সাথে দেখা হলে ম্যাচে নিয়ে গেলেন। কথায় কথায় বললেন “এখানে কত্ত বই, আপনি চাইলেই এখান থেকে বই নিয়ে পড়তে পারেন, আর আপনার ভাবনা চিন্তায় শান দিতে পারেন”। ফেরার সময় বুকসেলফ এর কাছে গিয়ে দুইটা বই বের করলাম। ১.কারাগারে রাতদিন, ২.চাই প্রিয় ব্যক্তিত্ব চাই প্রিয় নেতৃত্ব। “কারাগারে রাতদিন” বইটি আজকের বিষয় না। তাই এটা নিয়ে অন্য আরেকদিন লিখবো (ইনশাআল্লাহ)।
 
“চাই প্রিয় ব্যক্তিত্ব চাই প্রিয় নেতৃত্ব” বইটি জীবনের মোড় ঘুরে দেয়ার মতো একটি বই। সে মোড় মিথ্যা থেকে সত্যের দিকে, অন্ধকার থেকে আলোর দিকে, হতাশা থেকে আশার দিকে। নেতৃত্বের আকাঙ্ক্ষা জাগ্রত করে সেই কাঙ্ক্ষিত নেতৃত্ব কিভাবে অর্জন করতে হয় তার যাদুকরী বর্ণনা রয়েছে বইটিতে। কেউ যদি সমাজ পরিবর্তনের মহান ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগাতে চান এই বইটি তার জন্য। বইয়ের মূল টপিক থেকে কিছু বিষয় তুলে ধরছি।
 
“তোমাদের যারা ঈমান এনেছে আর যাদের দান করা হয়েছে জ্ঞান, আল্লাহ তাদের দান করবেন সুউচ্চ মর্যাদা” (আল কুরআন ৫৮/১১)
“আল্লাহ কে ভয় করে তার জ্ঞানী দাসেরা” (আল কুরআন ৩৫/২৮)
“মানুষের অবস্থা হচ্ছে উটের মতো। শত উটের মধ্যেও একটি যুৎসই বাহন খুঁজে পাওয়া দুস্কর” –সহিহ মুসলিম
এমন কুরআন হাদিসের রেফারেন্স উল্লেখ করা হয়েছে বইটির প্রতিটি বক্তব্যে। বইটিতে প্রিয় লেখক আব্দুস শহীদ নাসিম স্যার “প্রিয় ব্যক্তিত্ব প্রিয় নেতৃত্ব” হিসেবে আত্মগঠনের কর্যকর কৌশল পেশ করেছন। বইটিতে মোট ১৩ টি অধ্যায় রয়েছে।
 
 
১ম অধ্যায়ের শিরোনাম ‘চাই প্রিয় ব্যক্তিত্ব চাই প্রিয় নেতৃত্ব’
প্রিয় ব্যক্তিত্ব প্রিয় নেতৃত্ব হওয়ার জন্য অদম্য সাহস আর দুর্নিবার ইচ্ছাশক্তি, সম্মোহনী ব্যাক্তিত্ত্বের প্রয়োজন। আর এসব গুণাবলী কিভাবে অর্জন করা যায় এবং আর উন্নত করা যায় সে বিষয়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা রয়েছে। ‘প্রিয় ব্যক্তিত্ব’ হওয়ার জন্য প্রথমেই ‘জিবনউদ্দেশ্য ও কর্মসূচী নির্ধারণ’ করে ১.সংশয়, ২.বাজে ও নিস্প্রয়জনিয় চিন্তা কল্পনা, ৩.ভয়-ভীতি, ৪.অলস্য এসব আগাছা পরিস্কার করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
১.খোলা মনের মানুষ ২.ঐকান্তিক নিষ্ঠাবান ৩.আদর্শের উপর অটল ৪.মানুষের ভালো গুণগুলো দেখা ৫.নিঃস্বার্থপর ৬.হাসিমুখে থাকা ৭.আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখা ৮.আত্মসম্মানবোধ জাগ্রত রাখা ৯.বহিরাংগিক শুদ্ধতা, ভাষার শুদ্ধতা, শিষ্টাচার চর্চা, পারদর্শিতা অর্জন, তীক্ষ্ণ অনুভব শক্তি অর্জন, ইত্যাদি সহ মোট ২২টি পয়েন্ট আলোচনা করা হয়েছে প্রিয় নেতৃত্ব হওয়ার গুণাবলী অর্জন পরিচ্ছদে। এ অধ্যায় টি শুরু থেকে ৩১ পৃষ্ঠা পর্যন্ত।
 
“মন্দ কথা ছাড়ুন
সুন্দর কথা বলুন”
এটা ২য় অধ্যায় এর শিরোনাম। শিরোনাম দেখলেই বুঝাযায় কি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কুরআনের ১৪ নং সুরাহ এর ২৪-২৫ নং আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আ’লামিন সুন্দর কথার তাগিদ দিয়ে বলেছেন “একটি ভালো কথা একটি ভালো গাছের মতো, মাটিতে যার বদ্ধমূল শিকড়, আকাশে যার বিস্তৃত শাখা, সবসময় সে দিয়ে যায় ফল আর ফল”।
ওই একই সুরার ২৬ নং আয়াতে মন্দ কথা পরিহার করার নির্দেশ দিয়ে বলেন- “আর একটি মন্দ কথা একটি বাজে গাছের মতোই, সে গাছের মতো যাকে ভুমি থেকে উপড়ে ফেলা হয়, যার কোন স্থায়িত্ব নেই”।
 
৩য় অধ্যায় এর শিরোনাম “নিজেকে জাগান, সময় কাজে লাগান”
এ অধ্যায়ে সময় আমাদের জীবনে কিভাবে ধরা দেয়, সময় কিভাবে কাজে লাগান যায়, অবসর সময়ে কি করা যায়, সময় কাজে লাগাবার আসমানী তাকিদ এমন এমন ১৩ টি বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
 
“বই পড়ুন জীবন গড়ুন” এটা ৪র্থ অধ্যায়ের শিরোনাম। এ অধ্যায়ে ‘বই দেখলে আপনার কেমন লাগে’? প্রশ্ন করেই আর একগাদা প্রশ্ন ছুড়ে দেয়া হয়েছে। যার প্রতিটি প্রশ্ন উত্তরে যে কেউ খুঁজে পাবে তার বই পড়ার সার্থকতা। বই পড়ার কুরআন হাদিসের তাকিদ কি, কারা বই পরে, বই পড়ার উদ্দেশ্য কি হবে ইত্যাদি আলোচনার পরে পড়ার জন্য বিষয় ভিত্তিক আলাদা আলাদা পাঠ্য তালিকা দেয়া হয়েছে। এখানে ১৩২ টি বইয়ের নাম উল্ল্যেখ করা হয়েছে।
 
৫ম অধ্যায়ে “কুরআন জানুন কুরআন মানুন” শিরোনামে কুরআন পড়ার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। আমরা কিভাবে কুরআন পড়লে এর দ্বারা উপকৃত হতে পারি, কুরআন কিভাবে বুঝতে পারি, কুরআনের বিষয় বস্তু কি? ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে।
 
“প্রশিক্ষণ নিন দক্ষতা উন্নয়ন করুন” এটা ৬ষ্ঠ অধ্যায়ের শিরোনাম। এ অধ্যায়ে ‘প্রশিক্ষণ কি? প্রশিক্ষনের উদ্দেশ্য, প্রশিক্ষণ কাদের জন্য প্রয়োজন, এবং আমার নিজেরও যে প্রশিক্ষনের প্রয়োজন আছে তা গুরুত্ব সহকারে আলোচনা করা হয়েছে।
 
“সুবক্তা হোন
সত্যের আলো ছড়িয়ে দিন”
এটা ৭ম অধ্যায়ের শিরোনাম। বক্তৃতার ক্রিয়া শক্তি কি? আপনিও কেন বক্তৃতা করবেন, বক্তৃতা কতো রকম, উপস্থিত ও নির্ধারিত বক্তৃতার পূর্ব প্রস্তুতি, ইত্যাদি নিয়ে আলচোনা করা হয়েছে। বক্তার আকর্ষণীয় উপস্থিতি, চমৎকার উপস্থাপনা, সুবিন্যাস্ত বক্তব্য যে কতটা কার্যকারী তা যুক্তির আলোকে উপস্থাপন করা হয়েছে এই অধ্যায়ে। রাসুল সঃ এর বক্তৃতা কেমন ছিল, আল কুরআনের বক্তৃতা নির্দেশিকা পয়েন্ট দুটির আলোচনা এ অধ্যায়কে আর আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
 
৮ম অধ্যায়ে “সুলেখক হোন পাঠকের মন জয় করুন” ৯ম অধ্যায়ে “ব্যবসা করুন উপার্জন করুন, আয় করে ব্যয় করুন” ১০ম অধ্যায়ে “আল কুরআনের আয়নায় শ্রেষ্ঠ জীবনের কাঙ্ক্ষিত মান” ১১ম অধ্যায়ে “হাদিসে রাসুলের আয়নায় শ্রেষ্ঠ জীবনের কাঙ্ক্ষিত মান” ১২তম অধ্যায়ে “সুন্দর জীবনের উত্তম আদর্শ”  ইত্যাদি বিষয়ে কুরআন হাদিসের আলোকে আলোচনা করা হয়েছে। প্রতিটি বিষয় ১,২,৩…… পয়েন্ট আকারে উল্লেখ করা হয়েছে যা সাধারন পাঠককেও আকৃষ্ট করে।
 
“সবার সেরা ব্যক্তিত্ব
সবার সেরা নেতৃত্ব”
১৩তম অধ্যায়ের শিরোনাম। বিশ্বনিবী হযরত মুহাম্মদ সঃ শুধু মানবতার মুক্তির দূতই ছিলেননা, বরং তিনি ছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বিশ্বনেতা। জীবনের সকল দিকে তিনি ছিলেন সর্বগুণে সুন্দরতম। তাঁর নেতৃত্ব ছিল সহজাত, ব্যক্তিত্ব ছিল বরেণ্য, আর আচার আচারন ছিল অনন্য অনুপম। পরম সুন্দর পরিপাটি অবয়ব, শুদ্ধতম স্বভাব প্রকৃতি আর অহর্নিশির অমিয় বানী তাঁর ব্যক্তিত্ব ও নেত্রিত্বকে সমুদ্ভাসিত করে দেয় বিশ্বময়। বইটির শেষ অধ্যায়ে রাসুল সঃ এর অবয়ব, তাঁর অসাধারণ ব্যক্তিত্ব, ব্যক্তিগত পারিবারিক ও সামাজিক জীবন, তাঁর নেতৃত্বে আন্দোলনের আলোচনা বইটিকে যেন পূর্ণতা দিয়েছে।
 
আপনি যদি বই পড়ুয়া হন, কম পড়ুয়া বা বই পড়ায় অভ্যস্ত না হলেও বইটি পড়ুন, এটি দিয়ে আরম্ভ করুন। বই আনন্দ দেয়, জ্ঞান দান করে, তত্ত্ব ও তথ্য জানা যায়, বই পড়লে উন্নতি হয়, বই আপনাকে করবে সচেতন, সমাজ ও সাহিত্যের প্রান শক্তিও বই। আপনি এ বইটিতে উপরের সব গুলোই পাবেন।
 
লেখক মাওলানা আব্দুস শহীদ নাসিম স্যার ইসলামী বাংলা সাহিত্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। ইসলামী গবেষণায় জীবনের অধিকাংশ সময় ও শ্রম ব্যয় করেছেন। ইসলামী মূল্যবোধের উপরে তিনি শতাধিক বই রচনা করেছেন। রকমারি.কম এ স্যার এর প্রায় ৭৮ টি বই পাওয়া যাবে। লেখক এখন জীবনের প্রান্ত সীমায় অবস্থান করছেন। মহান প্রভুর নিকট প্রার্থনা তিনি যেন তাঁর এই নেক বান্দাকে সুস্থ রেখে জীবনের বাকি সময় টুকুও ইসলামের খেদমত করার সুযোগ দান করেন।
 
র‍্যাটিং এ বইটি কে আমি ১০ এ ১০ দিবো। পড়ে দেখুন, আপনিও ১০ এ ১০ দিতে বাধ্য হবেন
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?