“সীমার মাঝে, অসীম, তুমি
বাজাও আপন সুর।
আমার মধ্যে তোমার প্রকাশ
তাই এত মধুর।” (১২০,গীতাঞ্জলি)
সীমা ও অসীমতাকে যদি পরস্পর-বিচ্ছিন্ন ও বিরুদ্ধ করে দেখি তবে মানুষের ধর্মসাধনা একেবারেই নিরর্থক হয়ে পড়ে। অসীম যদি সীমার বাহিরে থাকে তবে এই জগতে তাকে পাওয়া সত্যিই দুঃসাধ্য। কিন্তু মানুষের ধর্ম মানুষকে বলিতেছে, ‘তুমি আপনার সীমাকে পেলে অসীমকে পাবে। তুমি মানুষ হও; সেই মানুষ হওয়ার মধ্যেই তোমার অনন্তের সাধনা সফল হবে।’
বুক_রিভিউ
🍂 গীতাঞ্জলির সাথে সম্পর্কটা অনেকটা মনস্তাত্ত্বিক চোরাবালির মতো – পড়তে পড়তে খুব সন্তোর্পনে আপন সত্তাকে হারিয়ে ফেলি, মানবসত্তার আবরণে ঢেকে রাখি চিত্ততলের শূন্যতাকে।
🍂 গীতাঞ্জলি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা একটি কাব্যগ্রন্থ।এই বইয়ে ১৫৭ টি ব্রাহ্ম-ভাবাপন্ন ভক্তিমূলক গীতিকাব্য সংকলিত হয়েছে এবং এর বেশিরভাগ কবিতাতেই রবীন্দ্রনাথ নিজে সুরারোপ করেছেন।গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের কবিতা ও গানগুলি শিলাইদহ,শান্তিনিকেতন ও কলকাতায় রচিত হয়। উল্লেখ্য যে,বইটিতে রবীন্দ্রনাথ সবগুলো কবিতা প্রভুকে উদ্দেশ্য করে প্রার্থনা মূলক কবিতা লিখেছেন।
🍂 গীতাঞ্জলি কাব্যে পাঁচটি ভাবধারার কবিতা লক্ষ্য করা যায় –
(ক) প্রভুকে সহজে না পাওয়ার হতাশা ভাব ও বিরহ বেদনার অনুভূতি।
(খ) অহংকার ত্যাগ করে দুঃখ বেদনার দাহে হৃদয়কে নির্মল করে সৃষ্টিকর্তার উপযােগী করা ও তার দয়া প্রার্থনা।
(গ) প্রকৃতি ও মানুষের বিচিত্র রূপ রসে সৃষ্টিকর্তার আভাস ও ক্ষণস্পর্শের অনুভূতি।
(ঘ) দীন,দরিদ্র,অস্পৃশ্যদের মধ্যে ভগবানের অবস্থান।
(ঙ) অসীম সসীমের লীলাখেলার অনুভূতি।
🍂 বইটি কেনো পড়বেন?অনেক কারণ দেখানো যাবে তবে আমার মনে হয় একটা যুক্তিই যথেষ্ট।বইটির লেখাগুলো আজ পর্যন্ত তৈরি বাংলা সাহিত্যের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং ভালো হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।আর আমাদের সকলেরই প্রয়োজন শুদ্ধ এবং সুন্দর সাহিত্যের চর্চা করা।এবং এটার শুরু হতে পারে গীতাঞ্জলি দিয়ে।এই কারণে আমাদের এই বইয়ের লেখাগুলো পড়া উচিৎ।আমার নিজের কাছে ১৫৭টি কবিতাই অসম্ভব সুন্দর লেগেছে।তবে তার মধ্যেও আমার সাধারণ চোখে যেগুলো মনে হয়েছে যে,এগুলো একটু আলাদা ভাবে উল্লেখ করা যায় সেগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো। নিচে আমার অত্যন্ত ভালো লাগা ৭ টি কবিতার নাম দিলাম –
১. অন্তর মম বিকশিত কর…
২. সীমার মাঝে অসীম তুমি…
৩. বিপদে মোরে রক্ষা করো…
৪. বজ্রে তোমার বাজে বাঁশি…
৫. আজি গন্ধ বিধুর সমীরণে…
৬. বিশ্ব যখন নিদ্রামগ্ন…
৭. রূপ সাগরে ডুব দিয়েছি…
পরিশেষে বলবো,গীতাঞ্জলি পড়ুন,আপনার অস্তিত্বকে প্রশ্ন করতে করতে হৃদয়ের তলদেশে জমা হওয়া তীব্র ক্ষারকে বইটি নির্মিশেষে প্রেমের তীব্র এসিড দ্বারা প্রশমিত করে দিবে।
🍂 বই পরিচিতি –
বইয়ের নামঃ গীতাঞ্জলি
লেখকঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
প্রথম প্রকাশঃ ১৯১০ সাল
ব্যাক্তিগত রেটিংঃ ৯/১০
✍🏻 মানসিব জুনায়েদ চৌধুর