কথায় আছে যে, স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল।
শরীর সুস্থ রাখতে এজন্য খাবার খাওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। ঠিকমতো খাবার না খেলে শরীরে নানা রকম সমস্যা দেখা দেয়। আজকাল সবাই ব্যস্ত। সময়মতো খাবার খাওয়ার কথা অনেকের মনে থাকে না। আবার অনেকে খিদে পেলে যা খুশি তাই খেয়ে নেন। এতে গ্যাস, হজম না হওয়ার মতো নানাবিধ সমস্যা দেখা যায়। রাতের খাবার এবং সকালের নাস্তার মধ্যে দীর্ঘ একটা সময়ের বিরতি থাকে। এই সময়টার পর ঠিকঠাক খাবার খাওয়া খুবই জরুরি। কারণ খালি পেটে সঠিক খাবারই সারাদিনের হজম ক্রিয়া ঠিক রাখে। সকালে উঠে যেসব খাবার দিয়ে দিন শুরু করলে উপকার পাওয়া যাবে তা আজকে আমরা জানবোঃ
▪️মধুর সঙ্গে হালকা গরম পানি
প্রতিদিন সকালে মধু খেলে ওজন কমে। বিশেষ করে সকালে খালি পেটে হালকা গরম পানির সাথে লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে খেলে তা ওজন কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া এতে যকৃত পরিষ্কার থাকে। খালি পেটে খাওয়ার ফলে বিপাক ক্রিয়া বাড়ে, শরীর থেকে টক্সিন বের হয়ে যায়। শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে পারে মধু। এতে আছে প্রচুর পরিমাণে খনিজ, ভিটামিন ও এনজাইম, যা শরীরকে বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করে। প্রতিদিন সকালে এক চামুচ মধু খেলে ঠান্ডা, কফ, কাশি ইত্যাদি সমস্যা কমে যায়।
▪️ভেজানো কাঠ বাদাম
ভিটামিন ও খনিজে ভরা কাঠবাদাম। এতে আছে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন ই, প্রোটিন, ফাইবার,
ওমেগা ৩, ওমেগা ৬ এবং ফ্যাটি এসিড। পানিতে ভেজালে এর পুষ্টি গুণ বেড়ে যায়। দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকার পর ৫/১০ টি কাঠবাদাম খাওয়া যায়। সকালে এটি পুষ্টি জোগানোর পাশাপাশি সারাদিন রুচি বাড়ায়।
শরীরে দুর্বলতা আসবে না।
বিশেষজ্ঞ দের মতে কাঠবাদামের বাদামি আবরণে ট্যানিন নামের উপাদান থাকে যা পুষ্টি শোষণ করে।
কাঠবাদাম ভেজানো হলে খোসা সহজে খুলে যায় এবং সহজে পুষ্টি বের হয়। তাই সবসময় কাঠবাদাম আগের রাতে ভিজিয়ে পরদিন সকালে খাবেন।
হৃদরোগ, ডায়েবিটিস এর রোগী দের জন্য এটা খুবই উপকারী।
▪️আমলকির রস
আমলকি স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী, এটা আমরা কমবেশি সবাই জানি। আমলকি এমন একটা ফল যাতে সবচেয়ে বেশি ভিটামিন সি আছে। খালি পেটে যদি আমলকির রস খেতে পারেন তবে এটা শরীরের জন্য অনেক ভালো। এতে ত্বক পরিষ্কার হবে, চুলের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে ও চোখ ভালো থাকবে।পাশাপাশি হৃদযন্ত্র ও লিভারও সুস্থ থাকবে।
তবে আমলকির রস খাওয়ার ৪৫ মিনিটের মধ্যে চা বা কফি খাওয়া যাবে না।
▪️পেঁপে
খালি পেটে পাকা পেঁপে খেতে পারেন। পেঁপে হজম শক্তিকে বৃদ্ধি করবে এবং পেট পরিষ্কার রাখবে। এতে ক্যালরি অনেক টাই কম। যারা ওজন কমাতে চান ; তারাও খেতে পারেন পেঁপে। এতে খাবার হজম হয় দ্রুত।
ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে কাঁচা পেঁপে ও খেতে পারেন। তাহলে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
▪️তরমুজ
তরমুজ খালি পেটে খেতে পারেন। কারণ এতে থাকে ইলেক্ট্রোলাইট। যা সারারাতের পানির অভাব পূরণ করতে সাহায্য করে। তরমুজে ক্যালরি খুবই কম থাকে।
▪️খেজুর
ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে খেজুর খেতে পারেন। খেজুরে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে পারে। খেজুর হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে থাকে। ডায়রিয়া বা পেট খারাপ এই ধরনের কোনো সমস্যা থাকে না। কারণ খেজুরের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম রয়েছে।
▪️অন্যান্য তাজা ফল
অনেকেরই ধারণা যে, খালি পেটে কখনোই ফল খেতে নেই। এতে শরীরে অ্যাসিডিটি বাড়ে। একারণে তারা দুপুরে খাওয়ার পর ফল খাওয়ার ব্যাপারে জোর দেন।
কিন্তু এই ভাবনা একেবারেই ভুল। ফলের মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন, ফাইবার থাকায় এটি শরীরের জন্য বেশ উপকারী। সকালে ঘুম থেকে উঠে পানি খাওয়ার পর একটা আপেল কিংবা নাশপাতি, কলা, শশা, পেঁপে যাই খাওয়া,হোক না কেন তা শরীরের ডিটক্সিফিকেশনে সাহায্য করে। সেই সাথে শক্তি উৎপন্ন করে। যার ফলে ওজন ও কমে আর সারাদিন কাজের পরও বেশি একটা ক্লান্তি আসে না।
▪️ডিম
ডিমে পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টি থাকে। এটা সবভাবেই খাওয়া যায়। খালি পেটে একটা সিদ্ধ ডিম খেলে তা শরীরের জন্য উপকারী হবে।
গবেষণা বলছে, সকালে উঠে খালি পেটে একটা সিদ্ধ ডিম খেলে সারাদিন এর মোট খাবারের থেকে একটা ভালো পরিমাণ ক্যালরি পায় শরীর। ফলে সারাদিন তেমন আর ক্যালরির চাহিদা থাকে না। এতে ফ্যাটও ঝরে তাড়াতাড়ি।
▪️ওটমিল পরিজ
সকালের নাস্তায় অনেকে ওটস খান। কেউ দুধ দিয়ে কেউ আবার টকদই দিয়ে। কিন্তু যদি পরিজ বানিয়ে নিতে পারেন তাহলে তা শরীরের জন্য ভালো। গরম পানিতে ওটস আর পাকা কলা দিয়ে বানাতে পারেন পরিজ। এর ফলে শরীরে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। সেই সঙ্গে কোলেস্টেরল ও কমবে।
পরিজ বানাতে আগে শুকনা কড়াইতে ওটস নেড়ে নিন।
এবার এর মধ্যে দুই কাপ পানি দিন। এবার কিছুটা ঘন হলে হাফ কাপ দুধ দিন। এবার দু চামচ চিনি বা মধু দিন। বেশ ঘন হয়ে এলে নামিয়ে ফেলুন। ঠান্ডা হলে উপরে কাজু বাদাম ছড়িয়ে খান। ইচ্ছে হলে কলা, আপেল দিতে পারেন।
▪️যদি আপনি পিসিওডি বা থাইরয়েডের সমস্যায় ভুগেন ; তাহলে অবশ্যই রাতে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস পানিতে কিছু জিরা ভিজিয়ে রাখুন। সকালে উঠে সেই পানি ছেঁকে খালি পেটে পান করুন। এতে শরীরে হরমোনের ভারসাম্য বজায় থাকবে এবং বিপাক হারও বাড়বে।
লেখাঃ ঐশ্বর্য্য বিজয়া দাস
———–ভলেন্টিয়ার, কন্টেন্ট রাইটিং টিম।।
Leave a comment