📚বই পরিচিতি:
➠বইয়ের নাম: ক্রমান্বয়
➠লেখক: জাবেদ রাসিন
➠প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি, ২০১৯
➠প্রকাশনী: ঈহা প্রকাশ
➠প্রচ্ছদশিল্পী: সুজন
➠পৃষ্ঠা সংখ্যা: ১৪২
➠মুদ্রিত মূল্য: ২০০৳
📚কাহিনি সংক্ষেপ:
আলো আঁধারিতে ঢাকা করিডোর পার হয়ে হেঁটে চলেছে ছোটোখাটো মানুষটি, তার নাম বিওম সু— চমৎকার এ লাইনটি দিয়ে শুরু হয়েছে কাহিনি। বিওম সু নামক বেঁটে মানুষটি তার লিডারকে জানায় ড্রাইডেক্স তৈরি হওয়ার বিষয়। কিন্তু ড্রাইডেক্স কী? এ প্রশ্নটি মনে আসার সাথে সাথে বইয়ের পৃষ্ঠা বদল করে যেতে হবে প্রথম অধ্যায়ে, যেখানে দেখা যায় আনিসুল হকের ছোট্ট একটি পরিবার।
কম্পিউটার পরিচালনায় অদক্ষ আনিসুল হক কাজ করেন বাংলাদেশ ব্যাংকে। একদিন তার অফিসের প্রিন্টারে যখন গোলযোগ দেখা দেয়, তখন সেটি ঠিক করতে গিয়ে জানা যায় কেউ তাদের ব্যাংক সিস্টেম হ্যাক করেছে। এরপর তথ্য অনুসন্ধান করে জানা যায় সেটি আনিসুল হকের কোনো এক সূত্রে হয়েছে। কিন্তু সে কীভাবে জড়িত?
হ্যাক হওয়ার বিষয়ে তদন্ত করতে মাঠে নামে সিআইডি অফিসার নাহিম আশরাফ এবং তার দুজন সঙ্গী। তদন্ত করে নাহিম জানতে পারে ব্যাংক থেকে আশি মিলিয়ন টাকা চুরি হয়েছে। কিন্তু কেন চুরি হলো? কে করল চুরি? আর কে হ্যাক করেছে ব্যাংক সিস্টেম? নাহিম কি হ্যাকার অবধি পৌঁছাতে পেরেছিল চুরি হওয়া টাকা উদ্ধার করতে?
📚চরিত্রায়ন:
(১) বিওম সু: ছোটোখাটো একজন মানুষ। যে সুপ্রিম লিডারের নির্দেশে টিম গঠন করে ড্রাইডেক্স তৈরি করেছে।
(২) সুপ্রিম লিডার: মহাক্ষমতাধর ব্যক্তি যে ক্ষমতার জোরে নিজের চাচাকেও কুকুর দিয়ে খাইয়েছে।
(৩) আনিসুল হক: ব্যাংক কর্মকর্তা এবং দুই সন্তানের জনক। যার বয়েস আটান্ন এবং ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত। মোবাইল ও কম্পিউটার সম্পর্কে তার তেমন কোনো ধারণা নেই তবুও তাকে কম্পিউটার পরিচালনা করতে হয় যুগের সাথে তাল মেলাতে।
(৪) নিশাত: আনিসুল হকের বড়ো মেয়ে। বুয়েট থেকে পড়াশোনা শেষ করে এখন চাকরি করছে। তার স্বপ্ন নিজে স্বাধীনভাবে কিছু করা।
(৫) বাও: অনাথাশ্রমে বড়ো হওয়া গম্ভীর প্রকৃতির লোক। শিক্ষকের হাতে শারীরিক নির্যাতনের স্বীকার হওয়ার পর একটি দোকানে চাকরি নেয় এবং এর পাশে থাকা কম্পিউটারের দোকানে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেকে কম্পিউটারের বিষয়ে অভিজ্ঞ করে তোলে।
(৬) কিম: চিকন গড়ন, প্যাসিফিক অঞ্চলের মানুষের মতো চেহারা ছাপ, আর সাদা ত্বকে তার উৎপত্তি নিশ্চিত করা যায় না৷ তার ছোটো ছোটো চোখ দুটো খুবই ধূর্ত। সারাক্ষণ একটা টুথপিক মুখের একপাশে রেখে দেয়। কিম ছোটোবেলা থেকেই তার নানির কাছে মানুষ।
(৭) নাহিম আশরাফ: বলিষ্ঠ দেহের অধিকারী একজন সিআইডি অফিসার। চুলের বাহারি স্টাইল করা তার ছোট্টবেলার নেশা। এজন্য কতবার সে স্কুল থেকে বহিষ্কার হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। নাহিমের বিয়ের বয়েস পেরিয়ে যাচ্ছে অথচ মাঝেমধ্যে করা তার পাগলামি, চিন্তা করার সীমানা ছাড়িয়ে যায়।
(৮) ইমতিয়াজ: নাহিমের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বন্ধু। ইমতিয়াজ পড়াশোনা শেষ করে প্রভাষক হিসেবে নিজের ডিপার্টমেন্টেই যোগ দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবার কারণে চেহারায় গাম্ভীর্যতাও এসেছে।
এছাড়াও রয়েছে কিছু পার্শ্বচরিত্র যেমন: ফুয়াদ আহসান, তৌফিক আহমেদ, বুলবুল সাদিক, আকরামুল হক, আহসান আলী, জিনাত, সজীব, মাইশা, নিতুসহ আরও অনেকে।
📚এই বইয়ের পছন্দের কিছু উক্তি:
⚫ আমাদের দেশের অধিকাংশ অভিভাবকদের ধারণা এমনটাই। তাদের কাছে ফার্মেসি মানে গলির মোড়ে ওষুধের দোকান, সিএসই মানে কম্পিউটার সারানোর মিস্ত্রি, ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং মানে বিদ্যুতের মিস্ত্রি, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং মানে গার্মেন্টস কর্মী, এমন নানা ধরনের ভুল ধারণা তাদের মাঝে। প্রচলিত পেশার বাইরে তারা যেন ভাবতেই পারেন না কিছু।
⚫ জীবন কখনও কখনও চলার পথে এক করে দেয় একেবারে ভিন্ন প্রান্তের দুই বাসিন্দাকেও। আর আমরা তো এই ছোটো দেশের দুজন নাগরিক।
⚫ মানুষের জীবনটা বোধহয় এমন। যার জন্য জীবনের সব সুখ ত্যাগ করতে প্রস্তুত থাকে সেই মানুষটাই এক সময় আরেক সুখের খোঁজে তাকে ফেলে রেখে চলে যায়।
📚পাঠ প্রতিক্রিয়া:
বইয়ের শুরুতে কিছু অপরিচিত শব্দ যেমন: বিওম সু, ড্রাইডেক্স, ফ্যাং ইত্যাদি পড়ে মনে হয়েছিল বইটি আমার পক্ষে পড়া কষ্টকর। কিন্তু অধ্যায় এক-এ যখন পরিচিত শহরের রূপ দেখতে পেলাম, তখন মনে হলো বইটি পড়া মোটেও কষ্টকর নয়। গোয়েন্দা কাহিনি এমনিতেই সুখকর মনে হয়। বইটি পড়তে পড়তে কাহিনিতে প্রবেশ করে ফেলেছিলাম বলে টের পাইনি; কখন বইটি শেষ হয়ে গেছে। তবে লেখক বইটিকে যত্ন নিয়ে লেখেনি বলে মনে হয়েছে। কারণ কাহিনি পোক্ত হওয়া সত্ত্বেও বর্ণনার স্বল্পতায় তা প্রাণবন্ত হয়েছে খুবই কম। পরবর্তী বইতে লেখক যেন এ বিষয়ে একটু নজর দেন সেই অনুরোধ রইল।
📚লেখক পরিচিতি:
জাবেদ রাসিনের জন্ম ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায়। তবে বেড়ে উঠেছেন ঢাকায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম উপন্যাস “ব্ল্যাকগেট” ও প্রথম কাব্যগ্রন্থ “শূন্য পথের অপেক্ষায়”।
📚লেখনশৈলী:
তাঁর মাঝে নতুন কিছু লেখার চেষ্টা আছে যা “ক্রমান্বয়” বইটি পড়ার পর মনে হয়েছে। তবে সৃষ্টি করার আগে সাধনা করার প্রয়োজন। বইও সাধনা করে সৃষ্টি করতে হয়; অনেক সময় দিতে হয়। আশা করছি ভবিষ্যতে লেখক তাঁর বই সৃষ্টির ক্ষেত্রে আরও সাধনা এবং সময় দিয়ে অমূল্য কিছু আমাদের উপহার দিবেন।
📚বানান সম্পাদনা:
এ বিষয়ে অনেক হতাশ হতে হয়েছে। পুরো বই জুড়ে অসংখ্য বানান ভুল হয়তো টাইপিং মিস্টেক ছিল। লেখকরা ভাষাবিদ নন তা আমাদের অজানা নয়। কিন্তু একটি বই থেকে আমরা ভুল শব্দ শিখব সেটাও কাম্য নয়। এ বিষয়ে প্রকাশনী বা বানান সম্পাদনায় যুক্ত ব্যক্তিদের সর্তক হওয়ার অনুরোধ রইল।
পৃষ্ঠা-১০: পাচ্ছ/পাচ্ছো— এখানে যেকোনো একটি ব্যবহার করা উচিত। গেলো(গিলে ফেলা) নয়, গেল।
পৃষ্ঠা-১৩: বলেন নয়, বললেন। উঠিস নি নয়, উঠিসনি।
পৃষ্ঠা-১৪: হল নয়, হলো।
পৃষ্ঠা-১৬: নেই নয়, নিই।
পৃষ্ঠা-২০: কর নয়, করা।
পৃষ্ঠা-২১: হত নয়, হতো। কোন নয়, কোনো।
পৃষ্ঠা-২৮: ভাল(কপাল) নয়, ভালো।
পৃষ্ঠা-৩০: চ্চলেন নয়, চললেন।
পৃষ্ঠা-৪১: পেলেছে নয়, ফেলেছে।
পৃষ্ঠা-৪২: কোথায় নয়, কথায়।
পৃষ্ঠা-৬৮: দেখে নয়, দেশে। খবই নয়, খুবই।
পৃষ্ঠা-৭০: একদন নয়, একদম।
পৃষ্ঠা-১২২: দরা নয়, ধরা।
📚প্রচ্ছদ:
প্রচ্ছদটি বেশ পছন্দ হয়েছে। তবে বই পড়ার পূর্বে বুঝতে পারিনি, প্রচ্ছদ এমন কেন হলো? পড়া শেষে বুঝতে পারলাম, কাহিনির সাথে মিল রেখেই প্রচ্ছদ তৈরি করা হয়েছে।
📚প্রোডাকশন কোয়ালিটি, বাইন্ডিং এবং অন্যান্য:
বইয়ের বাঁধাই মজবুত। পৃষ্ঠা বদল করতে গিয়ে সমস্যা হয়েছে এবং কিছু পৃষ্ঠা যেন এখনই খুলে যাবে। পৃষ্টার মান ভালো যথেষ্ট ভালো, কিন্তু বইটি টেকসই হবে না— এমনটি মনে হচ্ছে।
📚পরিশিষ্ট:
ক্রমান্বয় বইটি থেকে হ্যাকিং সম্পর্ক কিছুটা ধারণা পেয়েছি। বইতে কিছু বিষয় খোলাসা হয়নি। এছাড়া বইয়ের শেষে শাফাত রায়হান নামক একজন ব্যক্তিরও আগমন ঘটেছে যা রহস্যজনক। তাই লেখকের কাছে অনুরোধ খুব শীগ্রই পরবর্তী বইটি আমাদের হাতে তুলে দিবেন।
Leave a comment