▌কোথায় আমাদের সততা আর বিশ্বস্ততা?
.
একই ছাদের নিচে মউতের আগ পর্যন্ত বসবাসের চুক্তিনামাতে স্বাক্ষর করে-ই আমরা বিবাহিত জীবনে পর্দাপন করি। এ-জীবনের শুরুটা অনেক রোমাঞ্চকর। সুখে-দুঃখে, রোগে-শোকে ছায়ার মতো লেগে থাকার দূঢ় প্রত্যয় নিয়েই শুভ মিলনের শুরুয়াত হয়। দুনিয়ার বুকে এমন একটা দম্পত্তিও পাওয়া যাবেনা, যাদের মধ্যে টুকটাক ঝগড়াঝাটি হয়না। সংসার জীবনে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে রাগারাগি, চেঁচামেচি কিংবা কথা কাটাকাটি হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। একত্রে থাকতে থাকতে, একসাথে চলতে চলতে বিরক্তিবোধ আসাটাও অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু এই বিরক্তিবোধ যদি বিচ্ছেদের মতো অবস্থায় চলে যায় তখন পারিবারিক জীবনে চুড়ান্ত বিপর্যয় নেমে আসে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তখন চরমভাবে বিরোধ দেখা দেয়।
.
যে মানুষটা একদিন মেহেদী রাঙা হাত স্পর্শ করে আবেগআপ্লূত কন্ঠে বলেছিল, “আমরা পরস্পর মিলেমিশে শান্তিপূর্ণ ও মাধুর্য মন্ডিত এক নয়া জীবনের সূচনা করব! ভালবাসার চাদরে একে-অপরকে সারাটা জীবন বেঁধে রাখব” আজ সেই মানুষটাই তিক্ত কন্ঠে বলছে, “তোমার সাথে থাকাটা একেবারেই অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে, আর পারছিনা!” মুহুর্তেই যেন অতীতের সকল সুখ, আশা, স্বপ্ন নিঃশেষ হয়ে গেল। নিরুপায়ের উপায় হিশেবে তখন ‘তালাক’-ই যেন সেইফ জোন।
ভাবুনতো, কোথায় গেল আমাদের দায়বদ্ধতা?
.
জনৈক ব্যক্তি তাঁর স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে খলীফাহ উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাদ্বিয়াল্লাহু আ’নহু)-র কাছে এলো। তখন উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু আ’নহু) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কেন তাকে তালাক দিতে চাও?” সে বলল, “আমি তাকে আর ভালবাসি না।”
উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু আ’নহু) বললেন, “প্রত্যেক সংসারই কি কেবল ভালবাসার ওপরই গড়ে উঠতে হবে? বিশ্বস্ততা আর শ্রদ্ধাবোধ কোথায় গেল?” অত:পর উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু আ’নহু) বললেন – “হে পুরুষেরা, আমরা যখন বিবাহ করি তখন আমরা আমাদের স্ত্রীদের সাথে এক চরম অঙ্গীকারে আবদ্ধ হই। একজন নারী সন্তান প্রসব করে; গর্ভকালে কঠিন সময় অতিবাহিত করে। অতঃপর সে সন্তানকে স্তন্যপান করায় আর সন্তানদের পীড়া ও প্রয়োজনে বিনিদ্র রজনী অতিবাহিত করে। সে মা হওয়ার জন্যে তার রূপ-যৌবন বিসর্জন করে। যখন সে বয়স্কা হয়ে পড়ে তখন তার স্বামীর পক্ষে কীভাবে তাকে ত্যাগ করা যৌক্তিক হতে পারে? সে যদি তার সন্তান ও পরিবারের যত্ন না নিয়ে নিজের শরীর- রূপের যত্ন নিতে থাকতো তবে তো তার স্বামী বলতো, “মা হিশেবে সে কতই না খারাপ!” কোথায় তোমাদের সততা আর বিশ্বস্ততা? স্ত্রীদের প্রতি তোমাদের আচরণের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর।” — [আল বায়ান ওয়া আত্-তাবেঈন: ২/১০১; ফারা’ইদ আল-কালাম, পৃ’: ১১৩]।
.
অতএব, স্ত্রীদের প্রতি স্বদাচরণ করুন। আল্লাহ্ তাআ’লা আমাদের সংসারগুলি ভালবাসার চাদরে মুড়িয়ে রাখার সবরশক্তি ও হিকমাহ দান করুন – আমীন ইয়া রা’ব্বাল আ’লামীন। ▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
Leave a comment