ব্যাক্তিগত সংগ্রহ নাম্বারঃ ১৪৮
কারমিল্লা (পূর্ণাঙ্গ অনুবাদ)
লেখকঃ জোসেফ শেরিড্যান লে ফানু
অনুবাদঃ লুৎফুল কায়সার
সম্পাদনাঃ মহিউল ইসলাম মিঠু
প্রচ্ছদঃ সজল চৌধুরী
জনরাঃ গথিক হরর
মুদ্রিত মূল্যঃ ৩০০/-
কাহিনী সংক্ষেপঃ
স্টিরিয়ার নির্জন এক জায়গায় বিরাট প্রাসাদ দুর্গে বাবার সাথে বাস করে লরা। লরার বাবা ইংরেজ হলেও জায়গাটার প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন তিনি, তাই আর দেশে ফেরেননি। ইংল্যান্ড দেখা হয়নি লরার। খানিকটা দূরে কার্নস্টাইন গ্রাম, যেখানে এককালে বাস করতো এই অঞ্চলের শাসক ‘কার্নস্টাইন বংশ। এখন আর সেই বংশের কেউ বেঁচে নেই, গ্রামটাও কোনো এক রহস্যময় কারণে একেবারেই ফাঁকা হয়ে গেছে! কেউ থাকে না ওখানে… ভয়ে! কীসের ভয়?
হুট করেই ওদের বাড়িতে আগমন ঘটলো এক রহস্যময় অতিথির, লরার বয়সিই একটা মেয়ে। নাম কারমিল্লা… অপূর্ব সুন্দরী সেই মেয়েটি, যেন রূপে স্বর্গের দেবীদেরও হার মানায়। কিন্তু আসলে কে ও? কোথা থেকে এসেছে? কোথায় ওদের প্রাসাদ? এসব নিয়ে মেয়েটা কেন কিছু বলে না?
জেনারেল স্পিয়েলসডর্ফের ভাতিজির রহস্যময় মৃত্যুর জন্য কে দায়ী? কাকে হন্য হয়ে লরাদের প্রাসাদের খুঁজছেন তিনি? আশেপাশের গ্রামগুলোতে কি কোনো রহস্যময় রোগ ছড়িয়ে পড়ছে? যাতে আক্রান্ত হয়ে রক্তশূন্যতায় ভুগে মারা যাচ্ছে মেয়েরা? প্রতিদিন রাতে কোথায় যায় কারমিল্লা? কী করে বের হয় সে প্রাসাদ থেকে? হুট করেই কেন দুর্বল হয়ে যাচ্ছে লরা? ভয়াবহ দুঃস্বপ্নগুলো কেন হানা দিচ্ছে ওর স্বপ্নে? সত্যিই কি এমন কোনো পিশাচ আছে যারা মানুষের রক্ত চুষে নেয়? নাকি সবই পিছিয়ে থাকা পূর্ব ইউরোপের কুসংস্কার?
এসব প্রশ্নের উত্তর মিলবে ‘কারমিল্লায়। পৃথিবীর প্রথম সফল ভ্যাম্পায়ার সংক্রান্ত উপন্যাসিকা যেটি পড়ে ব্রাম স্টোকার তাঁর কালজয়ী গ্রন্থ ‘ড্রাকুলা’ লেখার অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন!
🔶🔶🔶🔶🔶🔶🔶🔶🔶🔶🔶🔶🔶🔶🔶🔶🔶🔶
এবার আসি মূল রিভিউতে। লুৎফুল ভাইয়ের লেখার সাথে আমার পরিচয় “ড্রাকুলা” এর মাধ্যমে। তখন থেকেই উনার অনুবাদের ফ্যান আমি। ড্রাকুলা পড়ে নিরাশ হইনি। ঠিক এই “কারমিল্লা” ও আমাকে নিরাশ করেনি। এই রিভিউকে আমি ২ টা মূল অংশে ভাগ করবো। প্রথম অংশে থাকবে প্রোডাকশন কোয়ালিটি ও ফার্স্ট ইম্প্রেশন। দ্বিতীয় অংশে থাকবে অনুবাদ নিয়ে কথা।
🟥 ১ম অংশঃ প্রোডাকশন কোয়ালিটিঃ
🔴 বইটি এসেছে বেনজিনের সিগনেচার প্রোডাকশনে। গুটি এম্বোজের আর্ট কার্ড কাগজে এম্বোজড ফন্টের জ্যাকেট কাভার। আর মূল বইতে ব্যবহার করা হয়েছে অফহোয়াট কাগজ। আমার কাছে প্রোডাকশন ড্রাকুলা এর মতই লেগেছে। হাতে নিয়ে নিরাশ হবেন না।
🔴 মূল বইয়ে যে অফহোয়াইট কাগজ ব্যবহার করা হয়েছে তাতে ছিল ঝকঝকে ছাপা। আর জানিয়ে রাখা ভালো, ড্রাকুলার মতই এই বইয়ে প্রত্যেক অধ্যায়ের শুরুতেই ছিল ইলাস্ট্রেশন। আমার সবচেয়ে যেটা ভালো লেগেছে সেটা হল পরিস্কার ইলাস্ট্রেশন। কোন ওভারস্যাচুরেশন নাই।
🔴 স্পাইনের ব্যাপারটা নিয়ে একটু বলি। স্পাইনের ডিজাইনটা ছিল ড্রাকুলার মত। যেহেতু এইটা সেইম ইউনিভার্সের বই তাই পাশাপাশি রাখলে বেশ সুন্দরই দেখাবে। বেনজিনের কাছে আমার পরামর্শ থাকলো ভবিষ্যতের প্রোজেক্ট গুলোতে যেখানে সিরিজ বই না, কিন্তু সেইম ইউনিভার্সের বই সেখানে এই কন্সেপ্টটা এক্সপ্লোর করার।
🔴 বইয়ের বাঁধাই ছিল চমৎকার। এক হাতে নিয়ে পড়তে কোন সমস্যা হয়নি আমার। আর সাথে ছিল সুন্দর একটি বুকমার্ক।
🔴 পোস্টের সাথে আমার করা ফার্স্ট ইম্প্রেশন (এমেচার ভিডিও) দেওয়া হল।
🟥 ২য় অংশঃ মূল বই এবং অনুবাদঃ
প্রথমেই আসি “কারমিল্লা” নামটার উচ্চারণ নিয়ে। অনেকের হিসেবে এটা হওয়ার কথা ছিল “কারমিলা”। কিন্তু এই জায়গায় এই কারমিল্লা ব্যাবহার করার কারণ হলো মূল লেখকের অর্থাৎ লে ফানুর ব্যবহৃত উচ্চারণটাই রেখে দেওয়া হয়েছে, যেটার ব্যাখ্যা আপনি ইন ডিটেইলস অনুবাদকের বক্তব্যতে পাবেন। এছাড়াও একই কারণে মূল অনুবাদে আইরিশ উচ্চারণকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।
অনুবাদের ব্যপারে বরাবরের মতই কোন আক্ষেপ নেই। সহজবোধ্য এবং প্রাঞ্জল অনুবাদ। লে ফানুর লেখা কারমিল্লা, ড্রাকুলারও আগের সাহিত্য। ব্রাম স্টোকারের থেকে লে ফানুর লেখা অনেকটা গম্ভীর। আমার জানামতে এটা বেশ ভালই চ্যালেঞ্জিং ছিল লুৎফুল ভাইয়ের জন্য। বাট তিনি নির্দ্বিধায় উৎরে গেছেন। সেইম গাম্ভীর্যটা আপনি পাবেন। এছাড়াও বইয়ের মধ্যে ব্যবহার করা হয়েছে টিকা এবং প্রযোজ্য জায়গায় নোটস্ – যা আমার পড়ার আনন্দ বাড়িয়ে দিয়েছে অনেক। এছাড়াও ব্যবহৃত ইলাস্ট্রেশন আপনার ভালো লাগতে বাধ্য।
পুরো বইটি লরা নামক এক নারীর জবানিতে তার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনারই বর্ণনা। পড়তে গিয়ে কাহিনীর সাথে মিশে যাবেন। আর অ্যানাগ্রাম নিয়ে আইডিয়া থাকলে বইয়ের একটা অংশে বেশ ভালোই মজা পাবেন। এখনই বলে মজাটা নষ্ট করলাম না।
এবার কিছু কন্ট্রোভার্সাল কথাবার্তাতে যাই। বইয়ের মধ্যে কারমিল্লার চরিত্রে আপনি কিছুটা সমকামিতা দেখতে পাবেন। এর একটা লজিকাল ব্যাখ্যা আছে। তৎকালীন সমাজ এখনকার মত ছিল না। সমকামিতাকে স্যাটানিক কোয়ালিটি ধরা হত। লে ফানুও তাই কারমিল্লার চরিত্রায়নে তাকে এভিল এন্টিটিটি হিসেবে দেখাতে তার মধ্যে একে ইনক্লুড করেছেন। বইয়ে ব্যবহৃত ব্যাখ্যাতেও এই কথাই পাবেন।
তো আর দেরী কেন? শুরু করে দিন এই চমৎকার বইটা। হারিয়ে যান স্টিরিয়ার রহস্যময় দুনিয়ায়..
ছবি কার্টেসিঃ আফরিন জাহান মীম ( Afrin Jahan Mim )। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে আমাকে এই সুন্দর ছবি ব্যবহার করতে দেওয়ার জন্য।
বেনজিন প্রকাশনী এবং এই প্রোডাকশনের পিছনের সবার প্রতি অনেক কৃতজ্ঞতা আমাদের হাতে এই বই তুলে দেওয়ার জন্য।
প্রফেশনাল রিভিউয়ার যেহেতু নই, পোস্টে কিছু ভুল-ভ্রান্তি থাকতে পারে। ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো।
Leave a comment