বই- ইকিগাই
(জাপানিদের দীর্ঘ ও সুখী জীবনের রহস্য)
লেখক- হেক্টরগারসিয়া এবং ফ্রান্সেস মিরালেস।
অনুবাদক- ইউসুফ মুন্না
প্রচ্ছদ- সব্যসাচী মিস্ত্রী
প্রকাশক- আদর্শ
পৃষ্ঠা সংখ্যা – ১৩৪
মুদ্রিত মূল্য -৩০০টাকা
ব্যক্তিগত রেটিং- ৯.৫/১০।
আপনাকে যদি বলি—
🌼আপনার বেঁচে থাকার কারণ কি?
🌼আচ্ছা, জীবনের মানেটাই বা কি?
🌼শুধুই কি দীর্ঘ সময় বাঁচার জন্যই জীবন, নাকি তার চেয়ে বেশি কিছু আছে?
এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই দুজন লেখক পারি জমায় জাপানের ওকিনাওয়ার একটি দ্বীপে, সেখানকার মানুষজন প্রায় একশত বছরেরও বেশি সময় বাঁচেন এবং সুখী জীবনযাপন করেন। তাঁরা জানেন তাদের জীবনের ইকিগাই কি!
উল্লেখ্য – ইকিগাই একটি জাপানি শব্দ। যার অর্থ ‘বেঁচে থাকার কারণ ‘।
কোন মানুষটা বা কোন মানুষগুলো, কোন জিনিসটা, কোন কাজটা আপনাকে অনুপ্রেরণা দিচ্ছে সেটাই হচ্ছে ইকিগাই। ওকিনাওয়ার বাসিন্দাদের মতে, ইকিগাই হলো সেটাই, যেটা আমাদের রোজ সকালে জাগিয়ে তোলে।
ওকিনাওয়ার ১১৭, ১২৮, ১১০ বছর বয়সের এমন কিছু মানুষদের ইকিগাই খুঁজে পেয়ে যে দশটি বিষয় দাঁড় করানো যায় সেগুলো হচ্ছে-
১. অবসর নয়, সব সময় সক্রিয় থাকুন ☞
আমাদের দেশে সাধারণত বেশিরভাগ মানুষই অবসরে চলে যাওয়ার পর একাকিত্বে ভুগে। তারা দ্রুত জীবনের অর্থ হারিয়ে ফেলে। জাপানে এমন কোনো শব্দ নেই, যা দিয়ে ইংরেজি ‘রিটায়ার’ শব্দটির যথার্থ অর্থ পাওয়া যায়। তারা যতদিন বাঁচেন ততদিন কাজ করে যান। তারা জানেন, কীভাবে অবসর কাটাতে হয়। ১১৪ বছর বয়সে ওয়াল্টার ব্রেউরি নামের এক ভদ্রলোক জানান- ‘মন ও শরীরকে ব্যস্ত রেখেই তিনি এতোদিন বেঁচে আছেন। ‘
২. ধীরস্থির থাকুন☞
যা-ই করবেন না কেন তাড়াহুড়ো করবেন না। সময় নিন। মনোযোগ দিন। একটা প্রবাদ আছে- ” ধীরে হাঁটুন, অনেকদূর যেতে পারবেন”
৩. পেটভর্তি খাবেন না☞
জাপানিরা সাধারণত ২০% পেট খালি রেখে খাবার টেবিল থেকে উঠে, যখনই মনে হবে পেট পরিপূর্ণ হতে শুরু করেছে তখনই খাওয়া বন্ধ করুন। কথায় আছে- ঊনো ভাতে দুনো বল। কম খাবার খাওয়ার জন্য তারা ছোট ছোট পাত্রে খাবার পরিবেশন করেন।
৪. পাশে থাকুক ভালো বন্ধু☞
জীবনের শ্রেষ্ঠ ওষুধ কি জানেন? একজন ভালো বন্ধু। মন ভালো নেই? বন্ধুর সাথে কথা বলুন। গল্প করুন। বন্ধুত্বের যত্ন নিন। লেখকের সাক্ষাৎকারে এক ভদ্রলোক বলেল- ” বন্ধুদের সঙ্গে নিয়মিত দেখা করাই আমার ইকিগাই। আমরা প্রতিদিন একত্র হই, গল্পগুজব করি। হ্যাঁ, আমার কাছে এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কাল সবার সঙ্গে দেখা হবে এটা ভাবতেই আমার প্রচন্ড ভালো লাগে। ” পছন্দের লোকজনের সঙ্গে প্রতিদিন কথা বলুন। দিনটা সত্যিই ঝলমলে হবে।
৫. পরের জন্মদিনের জন্য প্রস্তুতি নিন☞
একটা জন্মদিন থেকে অন্য আরেকটা জন্মদিনে আপনার পরিবর্তন খেয়াল করুন। হাঁটুন, দৌড়ান, ঘুরে বেড়ান। দেহে প্রাণ থাকবে।
৬. হাসুন☞
হাসি শুধু আপনাকেই ভালো রাখবে না, আপনার বিপরীত পাশের লোকটিকেও ইতিবাচক বার্তা দিবে। গোমড়া লোকদের আমরা কেউই নিশ্চয়ই পছন্দ করি না। তাই না? হয়তো, সবকিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে না। এই যে বেঁচে আছেন, সেটা ভেবেই একটু হাসুন। এটাও তো একটা বড় প্রাপ্তি।
৭. প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগ রাখুন☞
আমরা প্রকৃতিরই একটা অংশ। অথচ দেখুন, নানা আজুহাতে প্রকৃতি থেকে কতটা দূরে আমরা! মাঝে মাঝে প্রকৃতির কাছে যান। বাগানের পরিচর্যা করুন, পাহাড় দেখুন, সমুদ্রের গর্জন শুনুন, দূর দিগন্তে দৃষ্টি দিন, পাখির কলতান শুনুন। ব্যাটারি রিচার্জ হবে।
৮. ধন্যবাদ দিন☞
প্রকৃতির কাছ থেকে অক্সিজেন নিয়ে বেঁচে আছেন, রিক্সাওয়ালা মামা ঠিকভাবে গন্তব্যে পৌছে দিচ্ছে, শীতের রাতে মা গায়ে কাঁথা টেনে দিচ্ছে, এই যে ছোট ছোট ব্যপারগুলো আপনাকে ভালো রাখছে সেগুলোর জন্য কখনো ধন্যবাদ দিয়েছেন? খাচ্ছেন, ঘুরছেন, গল্প করছেন। আনন্দেই কেটে যাচ্ছে বেশ। প্রতিটা ধাপেই আমরা কারও না কারও কাছে ঋণী। তাদের ধন্যবাদ দিন। দেখবেন আপনারও আনন্দের পারদ বেড়ে যাবে।
৯. বর্তমানে বাঁচুন☞
অতীত? সে তো চলে গেছে। আর ভবিষ্যৎ? এখনো আসেনি। কি দরকার সেসব নিয়ে চিন্তা করার! বর্তমানেই বাঁচুন না! বর্তমানকে এমনভাবে কাজে লাগান যেন আফসোস বা অনুশোচনা শব্দগুলো জীবন থেকে উঠে যায়।
১০. ইকিগাই অনুসরণ করুণ☞
আপনার ইকিগাই কি এখনো জানেন না? আপনার ইকিগাই খুঁজে পাবার জন্য এই বিষয়গুলো মিলিয়ে দেখতে পারেন-
* আপনি কি করতে ভালোবাসেন?
* সে কাজে আপনি পারদর্শী কি-না?
* সে কাজ দ্বারা পৃথিবীর কোনো উপকার হচ্ছে কি-না?
* সে কাজ করে আপনার উপার্জন হচ্ছে কি-না?
যদি সব মিলে যায় তাহলে সেটাই আপনার ইকিগাই। অভিনন্দন আপনকে।
পরিশেষে রেইনহোল্ডের একটা কবিতা দিয়ে শেষ করতে চাই-
যা কিছু পরিবর্তন করা যায় না
সৃষ্টিকর্তা আমাদের সেসব মেনে নেওয়ার ক্ষমতা দিন।
সেটাই পরিবর্তন করুন
যার নিয়ন্ত্রণ আপনার হাতে।
এবং পৃথক করতে শিখুন
কী আপনার হাতে আছে আর কী নেই!
Leave a comment