বই: অ্যাকিলিসের টেন্ডন
লেখক: মালিহা তাবাসসুম
প্রচ্ছদ: সাদিতউজ্জামান
প্রকাশনী: অধ্যয়ন
ঘরানার: মেডিক্যাল থ্রিলার
পৃষ্ঠা: ১৯২
প্রকাশকাল: বইমেলা ২০২২
মলাট মূল্য: ৪০০ টাকা
🌸 ভূমিকাঃ যুগ যুগ ধরে পুঁজিবাদী সমাজ এবং তাদের পদতলে পিষ্ট মানুষদের নিয়ে অনেক লেখালেখি করা হয়েছে। তবে বর্তমান পরিস্থিতির সাথে হাজার বর্ষ পূর্বের গ্রীক মিথোলজির রুপরেখা মিলানোর কাজটা আমার কাছে বেশ নতুন। এই অসাধারন কাজটি বইয়ের পাতায় বাস্তবে রুপ দেওয়া হয়েছে অ্যাকিলিসের টেন্ডন বইটিতে।
🌸 প্রচ্ছদঃ প্রচ্ছদ যখন স্বয়ং বইয়ের কথা বলে তখন আলাদা করে কিছুর বলার বাকি থাকে না। গ্রীক সভ্যতার আদলে চিত্রিত একটি প্রতিচ্ছবি, সিরিঞ্জ, ঔষধ সবই যেনো বইয়ে লুকায়িত গ্রীক মিথোলজি এবং চিকিৎসাবিজ্ঞানের যোগসূত্র তুলে ধরেছে। লাল বর্ণী রক্তের গল্পটা না হয় বই পড়ে জেনে নেওয়া যাক।
🌸 নামকরণঃ ‘অ্যাকিলিস টেন্ডন’- এর অর্থ খুঁজতে গেলে পাওয়া যাবে “আমাদের পায়ের গোড়ালির পশ্চাৎ অংশে অবস্থিত মানবদেহের বৃহত্তম ও দীর্ঘতম টেন্ডন।”
বই পড়ার পুরোটা সময় আমি এই নামটা নিয়ে ভেবেছি। কেন এই বইটির নাম “অ্যাকিলিসের টেন্ডন” রাখা হলো। তবে লেখক কিন্তু কম যান না, নামের এতো সুন্দর ব্যাখ্যা দিয়েছেন যে, আমি পরিতৃপ্ত হয়ে গেছি।
🌸 লেখক পরিচিতিঃ জিগোলো, বৃত্তবন্দী, ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্স এবং অ্যাকিলিসের টেন্ডন বইয়ের মাধ্যমে পাঠকমহলে বেশ সাড়া ফেলেছেন খুবই কমবয়সী অসাধারন মেধাবী লেখক মালিহা তাবাসসুম ।
এছাড়াও রহস্যলীলা ২ গল্পগ্রন্থেও রয়েছে তার লেখা ছোট গল্প।
শুধু লেখক হিসেবেই তার পরিচয় সীমাবদ্ধ নয়। সংস্কৃতি অঙ্গনের তিনি একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র।
🌸 কাহিনী সংক্ষেপঃ সিআইডি ডিপার্টমেন্টের ফরেনসিক এক্সপার্ট আবরার, আইনের জগতের একটি প্রশংসিত নাম। বেশ মেধাবী, বহুমুখী প্রতিভা এবং নীতিবান একজন মানুষ।
পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে একজন মহিলা এবং পাঁচ বছরের একটি শিশুর লাশ পাওয়া যায়। মহিলাটি ঢাকার ক্ষমতাধর একজন এমপির স্ত্রী এবং বাচ্চাটি তার ভাইয়ের ছেলে। কাজের সুবাদে এই কেসের দায়িত্ব এসে পরে আবরারের কাঁধে। আপতদৃষ্টিতে এটি দুর্ঘটনা বলে মনে হলেও আবরার খুঁজে পেয়েছিলো অদ্ভুত কিছু তথ্য। উপর মহল থেকে চাপ আসার পরেও থেমে থাকেনি আবরার। কেস সম্পর্কে নিজের মতামত লিখে ফেলেছিলো তার নিজস্ব ব্লগে।
যা তাকে HellMyth নামে জীবনরক্ষাকারী একটি গেমের দ্বারপ্রান্তে দাড় করিয়ে দেয়। পুঁজিবাদ, সাম্রাজ্যবাদের নিছক বিনোদনের স্বীকার হওয়া মানুষগুলোকে বাঁচাতে খেলতে হবে অদ্ভুত খেলা। পদে পদে বিপদ, ঝুঁকি, নিরহ প্রাণ, বাড়তে থাকা হৃদস্পদন নিয়ে এগিয়ে চলে আবরার।
তার এই প্রটেক্টিং গেমের বর্ণনা পড়তে গিয়ে প্রতিটি লেভেলের ঝুঁকির সাথে বইয়ের প্রতি আমার আগ্রহও বেড়ে চলেছিলো।
শেষ পর্যন্ত আবরার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে তো?
জিতে গিয়েও হেরে যাবে না তো?
🌸 বই বিশ্লেষণঃ গ্রীক মিথোলজি সম্পর্কে আমার জ্ঞান শুণ্যের কোঠায়। তবে আগ্রহ ছিলো অগাধ। অনেকটা জোর করে বইটি হাতে নিয়ে বসলেও পড়ায় মনোযোগ বসছিলো না। শুরুর কয়েকটি পাতায় বর্ণনা পড়তে গিয়ে পড়ার আগ্রহ একদম হারিয়ে ফেলেছিলাম। কয়েকদিন বিরতি নিয়ে আবার যখন পড়া শুরু করলাম, তখন আবরারের সাথে আমিও পৌঁছে গেলাম HellMyth গেমের রাজ্যে। এরপর আর থেমে থাকতে হয়নি।
একটানা পড়ে গেছি, গোগ্রাসে গিলেছি প্রতিটি পাতা।
• বইয়ে যেমন রয়েছে সাসপেন্স, থ্রিলার তেমনি রয়েছে হালকা খুনসুটি, ভালোবাসা, স্নেহের বর্ণনা।
বইয়ে অন্যতম একটি চরিত্র অবন্তি। পেশাসূত্রে আবরারের সাথে পরিচয়। আবরারের প্রয়োজনীয় সময়ে অনেক মেন্টাল সাপোর্ট দিয়েছে।
এছাড়াও অ্যাডিশনাল ডিআইজি ফজলে রাব্বি, ডিআইজি তামিম, সিআইডি প্রধান হাসান প্রত্যেকে খেলার প্রতিটি লেভেলে আবরারকে বেশ সাহস যুগিয়েছে।
• বই পড়ার সময় মাথায় কেবল কো-অর্ডিনেট, কোড, ডিকোড শব্দগুলোই ঘুরছিলো। আবরারের অসাধারণ মেধা, প্রতিভা অবাক করার মতো।
• প্রতিটি ঘটনার সাথে গ্রীক মিথোলজির সম্পর্ক, মেডিক্যাল ট্রামগুলোর বর্ণনা বেশ নিখুঁত ও সাবলীল ভাষায় দেওয়া হয়েছে। সাধারণ পাঠক হিসেবে বুঝতে একটু অসুবিধা হয়নি।
• থ্রিলার বই হিসেবে অ্যাকিলিসের টেন্ডন বেশ প্রশংসার দাবীবার। এই বই পাঠকদের আগ্রহ শুধু শেষ পাতা অব্দি ধরে রাখবে না বরং শেষ শব্দটিও পাঠকদের মনে সাড়া ফেলে যাবে আমি নিশ্চিত।
🌸 কিছু কথাঃ বই পড়তে গিয়ে এক মুহূর্তের জন্য হলেও কোরিয়ান ড্রামা স্কুইড গেমের কথা আমার মাথায় এসেছে। নোংরা মানসিকতার পুঁজিবাদ, বুর্জোয়ারা নিম্নবিত্তদের নিছক খেলনা ভাবা এবং উপহারের ঘটনাটির বেশ মিল রয়েছে।
🌸 প্রিয় চরিত্রঃ প্রিয় চরিত্রের কথা চিন্তা করলে একটি নামই মাথায় আসে, “আবরার, আবরার এবং আবরার”। এই মানুষটি অসাধারন মেধাবী এবং স্বচ্ছ মনের একজন মানুষ।
🌸 ব্যক্তিগত মতামতঃ বইটি পড়া শেষ করার পরেও বেশ কিছুদিন আমার মাথায় চেপে বসে ছিলো। যতোবার মনে পরছে আমি অবাক হচ্ছি। লেখক বইয়ে খুবই চমৎকার তথ্য এবং ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন।
বই পড়লেই বুঝা যাবে বইটি লিখতে লেখককে যথেষ্ট কাঠ-খড় পুড়াতে হয়েছে, হাবুডুবু খেতে হয়েছে জ্ঞানের সাগরে।
লেখকের শব্দচয়ন, প্লট নির্বাচন, বর্ণনা, সাসপেন্স ক্রিয়েটিভিটি এবং ধারাবাহিকতা রক্ষা- পাঠক হিসেবে আমি সন্তুষ্ট। এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে থ্রিলার জগতে মালিহা তাবাসসুম নামটি একদিন সাফল্যের উচ্চ শিখরে পৌঁছে যাবে।
🌸 ব্যক্তিগত রেটিংঃ দু-একটা লেভেলের বর্ণনা আমার কাছে একটু এলোমেলো লেগেছে। তাই ৪.৩/৫ দিলাম।
🌸 উপসংহারঃ বইটি শুধু একটি কাল্পনিক গল্প নয় বরং জ্ঞানের আঁধার। কাল্পনিক গল্পটি পড়ে পাঠক শুধু বিনোদন পাবে না, চিকিৎসাবিজ্ঞান এবং গ্রীক মিথোলজি সম্পর্কে অনেক ধারণা পাবে। পাবে বেশ কিছু অজানা তথ্য। ব্যক্তিগতভাবে বইটি পড়ে গ্রীক মিথোলজি সম্পর্কে আমার আগ্রহ বেড়েছে। গ্রীক সভ্যতা সম্পর্কে জানার জন্য মুখিয়ে আছি।
রিভিউ লেখনীতে- আরফিয়া
Leave a comment